অনলাইন ডেক্স::
ঢাকার নিউ মার্কেট এলাকা থেকে নব্য জেএমবির সন্দেহভাজন ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, যাদের একজন সেখানে এক মসজিদে তারাবির নামাজ পড়িয়ে আসছিলেন। এর সূত্র ধরে ওই সংগঠনের জঙ্গিরা নিয়মিত সেখানে সমবেত হচ্ছিল এবং একজন আলেমকে হত্যার পরিকল্পনা তাদের ছিল বলে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের ভাষ্য।
এই ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম সোমবার পুলিশের গণমাধ্যম কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, রোববার রাতে নিউ মার্কেট থানার নিউ সুপার মার্কেট এলাকা থেকে ওই ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেন তারা।
এরা হলেন- জাহিদুল ইসলাম ওরফে জোহা ওরফে মাশরুর (২৩), আবু বকর সিদ্দিক ওরফে আবু মোহাম্মদ (১৯), মোহাম্মদউল্লাহ আদনান (১৯), মেহেদী হাসান ইমন ওরফে আবু হামজা (২১), খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে আবু মুসাব (১৯) এবং শামসুদ্দীন আল আমিন ওরফে আবু আহমদ।
তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, নোট বুক, উগ্রমতবাদ প্রচারের কাগজপত্র, পেনড্রাইভ ও মেমোরি কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান মনিরুল।
নিউ মার্কেট থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দয়ের করে দুপুরে তাদের ঢাকার হাকিম আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন।
মনিরুল বলেন, “গ্রেপ্তার আদনান নিউ মার্কেট এলাকার একটি মসজিদে তারাবির নামাজ পড়ান। এজন্য প্রতিদিন তারা সেখানে সমবেত হত।”
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জেএমবির কেন্দ্রীয় কমিটি বা মজলিসে শুরার সদস্য সংখ্যা এখন পাঁচজন। তাদের একজনের নাম সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ। আর তাদের পরের স্তরের আরেক নেতা হলেন সাদী ওরফে আবু জান্দাল ওরফে আবু দারদা ওরফে আবু, যিনি অস্ত্র ও অন্যান্য সহযোগিতা দিয়ে গ্রেপ্তার ওই ছয়জনকে সংগঠিত করেছেন।
“গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং গোয়েন্দা তথ্যে জানা যায়, জাহিদুল ওরফে মাশরুর এবং আবু মোহাম্মদ একজন আলেমকে হত্যা করতে তার বাড়ি রেকি করেছিল। এটা নিয়ে তারা বৈঠকও করছিল,” বলেন মনিরুল।
তবে ‘কৌশলগত কারণে’ সেই আলেমের নাম প্রকাশ না করে তিনি বলেন, “যারা বলে ইসলামে জঙ্গিবাদের জায়গা নেই, জঙ্গিদের সঙ্গে যাদের মতবাদ মেলে না, তাদের জঙ্গিরা হত্যা করতে চায়।”
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল বলেন, গতবছর রোজার মধ্যে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার বর্ষপূর্তিতে নতুন করে নাশকতা করার জন্য সদস্যদের নির্দেশনা দিয়েছে জঙ্গি সংগঠনগুলো। তা কীভাবে করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করছিল গ্রেপ্তার ছয় জঙ্গি।
“আল-কায়েদা, আল-কায়েদা ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট, আইএসসহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন অনলাইনে রোজার মাসে তাদের ভাষায় যারা মুরতাদ, তাদের বিরুদ্ধে আঘাত হানার জন্য অনুসারীদের নির্দেশ দিয়েছে। আইএস বা আল কায়েদার সঙ্গে বাংলাদেশের জঙ্গিদের সাংগঠনিক সম্পর্ক না থাকলেও আদর্শিক সম্পর্ক থাকায় তারা সেই নির্দেশ বাস্তবায়নে কাজ করে।”
তবে সাম্প্রতিক সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একের পর এক অভিযানে জঙ্গিদের ‘শক্তি কমে গেছে, সদস্যদেরও মনোবল অনেকটা ভেঙে গেছে’ বলে মন্তব্য করেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান।
“তারা নতুন সদস্যও সংগ্রহ করতে পারছে না। সদস্যদের মনোবল চাঙা করতেই তারা নাশকতা চালিয়ে নিজেদের শক্তি জাহির করতে চায়।
অন্যদের মধ্যে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ কমিশনার মহিবুল ইসলাম, রাকিব উদ্দিন, প্রলয় কুমার জোয়ার্দার ও গণমাধ্যম শাখার উপ কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।