বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির সাবেক সংসদ, হুইপ ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এডভোকেট ফজলুল হক আছপিয়ার যানাযায় উপস্থিত হাজারো মানুষকে অশ্রুসিক্ত করলেন তার পুত্র ব্যারিস্টার আবিদ হোসেন। বৃহষ্পতিবার বেলা আড়াইটায় সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে যানাজার নামাজের পূর্বে পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য দানের সুযোগ করে দেওয়া হয় তার ছেলেকে। তিনি মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বলেন, আব্বা জুলাই মাসে অসুস্থ হন। তখন সারাদেশে কঠোর লকডাউন চলছিল। এর মধ্যেই আমরা আব্বাকে ঢাকায় নিয়ে যাই চিকিৎসার জন্য। টিটো স্যারের তত্বাবধানে প্রথমে পপুলার হাসপাতালে আব্বাকে ভর্তি করাই। এর মধ্যেই ঈদুল আজহা আসে। আব্বা বারবার আমাদেরকে বলছিলেন দুএকদিনের জন্য হলেও সুনামগঞ্জে নিয়ে আসতে। কারণ তিনি কখনো সুনামগঞ্জের বাইরে ঈদ করেননি। একবার হজে গিয়ে সুনামগঞ্জের বাইরে ঈদ করেছিলেন। কিন্তু আব্বার শারিরিক অবস্থার অবনতির জন্য আমরা ঢাকায় ঈদ করি। তখন আমরা বুঝতে পারি সুনামগঞ্জের জন্য আব্বার কত টান। সুনামগঞ্জের মানুষকে খুব ভালো বাসতেন আব্বা। সুনামগঞ্জে শেষ ঈদ না করার কষ্ঠ নিয়ে চলে গেলেন আব্বা।
ব্যারিস্টার আবিদ হোসেন যানাজায় উপস্থিত মুসল্লিদের কাছ থেকে দু’এক মিনিট চেয়ে নিয়ে বলেন, আমি যদি আব্বার শেষ দিকের অবস্থা আপনাদের সামনে শেয়ার করতে না পারি তাহলে সারাজীবন আমি বুকে সেই কষ্ট নিয়ে বেড়াব। তিনি বলেন, ২ আগস্ট আব্বার খুব জ্বর হয়। আমরা উনাকে স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করি। ৩ আগস্ট তিনি হার্ট এটাক করেন। তখনই আইসিইউতে নেওয়া হয়। এভাবে প্রায় এক মাস আইসিইউতে ছিলেন। তিনি বলেন, প্রথমে যখন আইসিইউ মেশিনে ডুকানো হয় তখন আব্বার উপরের দাঁত ফেলে দেন চিকিৎসকরা। আমি চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কোন ব্লেইম দিচ্ছিনা। শুধু একজন বয়ষ্ক মানুষের প্রতি আচরণের বর্ণণা দিচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা একটি মাস খুবই কষ্ট করি। আশা করছিলাম আব্বা ফিরে আসবেন।
তিনি আরো বলেন, মৃত্যুর দুদিন আগে হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ দেওয়া হয়। আমরা আব্বাকে বাসায় নিয়ে আসি। বাসার আসার সময় একটি মেডিসিন দেওয়া হয়। সেটা খাবার পরই আব্বা বমি করতে থাকেন। আমরা আবার স্পেশালাইজ হাসপাতালে ভর্তি করি। ১৫ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৭টায় চিকিৎসক আমাদের খবর দেন তাড়াতাড়ি আসার জন্য। আইসিইউতে কাঁচের জানালা দিয়ে দেখি মোটা শরিরের একজন চিকিৎসব খুব জোরে আব্বার বুকে চাপ দিচ্ছেন। আধা ঘন্টা পর আব্বার পালস পাওয়া যায়। কিন্তু অতি জোরে বুকে চাপ দেওয়ায় তার হাড্ডি ভেঙ্গে যায়। দুপুর বারোটায় আবারও আব্বা হার্ট এটাক করেন। বুকে জোরে চাপ দেওয়ায় তার বুকের হাড় ভেঙ্গে যায়। দুপুর পোনে ১টায় জানানো হয় আব্বা বেঁচে নেই। এভাবে আব্বা একটি মাস হাসপাতালে অনেক কষ্ট করেছেন।
এভাবে যানাজাপূর্ব বক্তব্যে উপস্থিত হাজারো মুসল্লিদের অশ্রুসিক্ত করেন এডভোকেট ফজলুল হক আছপিয়ার ছেলে ব্যারিস্টার আবিদ হোসেন। তিনি নিজেও ছিলেন অশ্রুশিক্ত। পিতার ভুলত্রুটির জন্যও সুনামগঞ্জবাসীসহ যানাজায় উপস্থিত মুসল্লিদের কাছে ক্ষমা চান ছেলে।