বিশেষ প্রতিনিধি::
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক অধ্যাপক সপরিবারে ঘুরতে আসেন টাঙ্গুয়ার হাওর। প্রাণ ও প্রকৃতি সচেতন এই লেখক অধ্যাপক ঘুরতে এসে চারদিকে পলিথিনের ছড়াছড়ি লক্ষ্য করেন। তার চোখের সামনেই অনেক সচেতন পর্যটক প্লাস্টিকের পানির বোতল, টোঙাসহ ব্যবহৃত নানা জিনিষ ব্যবহার শেষে হেসে খেলে অবলিলায় ফেলে দিচ্ছেন হাওরে। এসময় তিনি দেখেন একটি সাংস্কৃতিক সগঠনের ব্যানারে উচ্চ ডেসিবলের মাইক ব্যবহার করে গান বাজনা চলছে ভাসমান নৌকায়। এসব দেখে ক্ষুব্দ ও হতাশ হন তিনি। প্রকৃতি সচেতন এই অধ্যাপকই নন প্রকৃতি দরদীরা ঘুরতে এসে এসব দৃশ্য দেখে এখন মর্মাহত। পর্যটকরা এভাবেই টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরতে এসে ক্ষতি করছেন প্রকৃতির। তারা প্রকৃতি বিনাশী এসব কা- কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়েছেন।
টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে লকডাউন তুলে নেওয়ার পর ছুটির দিন ও ছুটির দিনের বাইরে প্রতিদিন হাজারো পর্যটক আসছেন হাওরে। বিশাল নৌকায়, লঞ্চে তারা বড় বড় দল নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন। রনচি, গোলাবাড়ি, জয়পুরসহ বিভিন্ন সংরক্ষিত স্থানে প্রবেশ করে তারা প্লাস্টিকের বর্জ্য ফেলে দিচ্ছেন। মাইক নিয়ে উচ্চ শব্দে গান বাজনা করছেন। এতে স্থলজ ও জলজ জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে বলে মনে করেন প্রকৃতিবিদরা। তারা জানান, কোন নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এবং স্থানীয় সচেতন মানুষদের কথা না শুনে পর্যটকরা এসব করে প্রকৃতির ক্ষতি করছেন। পর্যটকদের এসব আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় সচেতন মানুষদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
গোলাবাড়ি গ্রামের কৃষক খসরুল আলম বলেন, আমরা নীরবে-নিশব্দে এলাকায় বসবাস করে আসছিলাম। প্রকৃতির নিঝুম পরিবেশ ছিল আমাদের। কিন্তু সেই নীরবতা এখন উচ্চ শব্দের মাইকে হারিয়ে গেছে। হাওরে প্লাস্টিকের বর্জ্য ফেলে নষ্ট করা হচ্ছে পরিবেশ। প্রতিদিনই এই সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানান তিনি।
সুনামগঞ্জের উদ্ভিদবৈচিত্র গবেষক কল্লোল তালুকদার চপল বলেন, প্রকৃতির গুরুত্বপূর্ণ কোন বনাঞ্চল সংকটাপন্ন হয় তখনই রামসার সাইট ঘোষণা করে সংরক্ষণ করে বিশ্ব ঐতিহ্য সংস্থা। প্রায় দুই দশক আগে আমাদের টাঙ্গুয়ার হাওরকেও সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সংরক্ষণতো দূরের কথা হাওরের প্রাণ ও প্রকৃতির বিনাশ ঘটেছে। মাছ, গাছ, পাখি বিলুপ্ত হওয়ার পথে। এখন নতুন উপদ্রব পর্যটকদের উৎপাতে বাকি বৈশিষ্টও বিনষ্ট হচ্ছে।
টাঙ্গুয়ার হাওর সংরক্ষণকালীন সময়ে কার্যক্রমে যুক্ত বেসরকারি সংস্থা ইরার নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, টাঙ্গুয়ার অবস্থা এখন সংকটাপন্ন। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে একটি জাতীয় কমিটি করে হাওরটি রক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে। না হলে দিন দিন সম্ভাবনার এই হাওরটির মৃত্যু ঘটবে। তখন এর দায় বইতে হবে সবাইকে।
তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান করুণাসিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওর জাতীয় সম্পদ। এর বিপুল সৌন্দর্য্য দেশ বিদেশের পর্যটকদের আকর্ষণ করেছে। যার ফলে দিন দিন পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে। কিন্তু কিছু অসচেতন পর্যটক হাওরে প্লস্টিকের বর্জ্য ফেলাসহ প্রকৃতি বিনাশী কাজ করছেন। তাদেরকে এসব থেকে বিরত থাকতে হবে। হাওরকে রক্ষায় সবাইকেই আন্তরিক হতে হবে।