হাওর ডেস্ক::
অসময়ের টানা বর্ষণে পাহাড়ি ঢল, বন্যা আর ভূমিধসে হিমালয়ের দেশ নেপাল আর প্রতিবেশী ভারতের উত্তরাখণ্ডে মৃত্যু বেড়ে ১২৯ জনে পৌঁছেছে।
বহু ঘরবাড়ি পানিতে অর্ধেক ডুবে আছে, ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বসতি, রাস্তাঘাট, সেতু।
স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, উত্তরাখণ্ডে বুধবার আরও ছয়জনের লাশ উদ্ধারের পর নিহতের সংখ্যা বেড়েছে ৫২ জন হয়েছে; তাদের মধ্যে পাঁচজন একই পরিবারের সদস্য।
জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা উত্তরাখণ্ডে পর্যটকদের আসতে নিষেধ করা হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে সব স্কুল। ঋষিকেশে গঙ্গার পানি ঢুকে পড়েছে লোকালয়ে, বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নৈনিতাল এলাকাও।
বার্তা সংস্থা এএনআইয়ের ভিডিওতে দেখা গেছে, উত্তরাখাণ্ডের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ নৈনিতাল হ্রদের পানি উপচে আশপাশের বাড়িঘর। রাস্তার ওপর দিয়ে বইছে হাঁটু উচ্চতার পানি।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি বলেছেন, বন্যায় অবকাঠামোর পাশাপাশি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এমনিতে অক্টোবর মাসে উত্তরাখণ্ডে গড়ে ৩০ দশমিক ৫ মিলিমিটারের মত বৃষ্টিপাত হয়। এবার সেখানে এক দিনেই ৩২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে।
ভারতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বুধবার থেকে কমতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির আবহাওয়া দপ্তর। তবে নেপালে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, বুধবার সেখানে আরও ৩৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৭৭ জনে।
ভারি বৃষ্টিতে বন্যা দেখা দেওয়ায় বুধবার নেপালের ৮৫টি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। ছবি: ইকান্তিপুর
ভারি বৃষ্টিতে বন্যা দেখা দেওয়ায় বুধবার নেপালের ৮৫টি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। ছবি: ইকান্তিপুর
এই দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের পঞ্চথর জেলা, সেখানে ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া পশ্চিমের জেলা ইলামে ১৩ জন এবং দোতিতে ১২ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
২২ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, আরও অন্তত ২৬ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছে নেপাল সরকার।
নেপাল পুলিশের মুখপাত্র বসন্ত কুনওয়ার জানিয়েছেন, রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে সাড়ে তিনশ কিলোমিটার পশ্চিমে সেতি গ্রামে অন্তত ৬০ জন মানুষ আটকা পড়ে আছেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় দুই দিনেও তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি উদ্ধারকর্মীরা।
নেপালের টেলিভিশনের খবরে পানির তোড়ে ফসল তলিয়ে কিংবা ভেসে যেতে দেখা গেছে। নদীর পানি বেড়ে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, সেতু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।
বর্ষা মৌসুমে নেপালে এমন আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধস দেখা যায়। দেশটিতে সাধারণত জুনের মাঝামাঝি সময় থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এমন আবহাওয়া থাকে। এবার অক্টোবরেও তেমন আবহাওয়া দেখা দিয়েছে।
নেপালের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, আরও অন্তত এক দিন কিছু কিছু স্থানে ভারি বৃষ্টি এবং পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি তুষারপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
বৃষ্টি অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস রয়েছে ভারতের দক্ষিণের রাজ্য কেরালাতেও। ভারতের আবহাওয়া অফিস বলছে, পশ্চিম ঘাট এবং পূর্বের পাহাড়ি এলাকায় বৃহস্পতিবারও ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।
ইনডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, অক্টোবরের প্রথম ১৯ দিনে স্বাভাবিকের তুলনায় ১৩৫ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত দেখেছে কেরারা।
প্রবল বৃষ্টি, বন্যার আর ভূমিধসে ভারতের এ রাজ্যে গত সোমবার পর্যন্ত ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, ধ্বংস হয়েছে ১৬ শ ঘরবাড়ি।
এখন আবার ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস আসায় ভূমিধসের ঝুঁকিতে থাকা এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন নদী তীরবর্তী এবং পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দাদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন।