বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের শাল্লায় হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শুরুর আগেই নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় জড়িয়ে পড়েছে উপজেলা কাবিটা ও মনিটরিং কমিটি। উপজেলা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মোক্তাদীর হোসেন ও কমিটির সদস্য সচিব উপসহকারি প্রকৌশলী আব্দুল কাইয়ুমের বিরুদ্ধে উৎকোচ নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের পাশ কাটিয়ে প্রকল্প দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গত ১০ জানুয়ারি উপজেলার চারটি ইউনিয়নের সকল চেয়ারম্যান উপজেলা কমিটির সভা বর্জন করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার ওই চার চেয়ারম্যানসহ নবনির্বাচিত চারজন চেয়ারম্যানও তাদের প্রতি সংহতি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারি প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তারা এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে প্রকৃত কৃষক ও নীতিমালার আলোকে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন। শাল্লা উপজেলার সবগুলো প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিকে ঘুষ দুর্নীতির কমিটি আখ্যায়িত করে সবগুলো বাতিলের দাবিও জানিয়েছেন তারা। মঙ্গলবার দুপুরে শাল্লা উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল কাশেম, হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল, বাহারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিধান চন্দ্র চৌধুরী ও শাল্লা ইউনিয়নের জামান চৌধুরী ফুল মিয়া এ আবেদন করেন। এসময় তাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টু, নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার প্রমুখ।
লিখিত আবেদনে তারা উল্লেখ করেন গত ১০ জানুয়ারি শাল্লা উপজেলার কনফারেন্স রুমে হাওরের ফসলরক্ষা বাধের কাজ বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় তাৎক্ষণিক জানানো হয় এর আগেই প্রকল্পগুলো অনুমোদন করা হয়েছে। গণশুনানী করে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি করার কথা থাকলেও তাদের পাশ কাটিয়ে গোপনে কমিটি গঠন ও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া কমিটি অনুমোদনের নামে উৎকোচও নেওয়া হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন। উপজেলা কমিটির এই সভায় কমিটি অনুমোদন হয়েছে জানার পর প্রতিবাদ জানিয়ে চার ইউনিয়নের চেয়ারম্যানবৃন্দ সভা বয়কট করে চলে আসেন। পরে তাদের এই দাবির প্রতি সংহতি জানান নবনির্বাচিত চারজন চেয়ারম্যানও। প্রতিবাদ করার পর তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে ১১ জানুয়ারি জেলা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক ও সদস্য সচিব পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে দেখা করে কমিটি গঠন ও অনুমোদনে অনিয়ম ও দুর্নীতিসহ ঘুষ লেনদেনের ঘটনা ঘটেছে বলেও অভিযোগ করেন। তারা গোপনে গঠিত কমিটি গুলো অবিলম্বে বাতিল করে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, প্রকৃত কৃষকের নেতৃত্বে কমিটি প্রদানের দাবি জানিয়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে শাল্লা উপজেলায় ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে ১৩৮টি প্রকল্প অনমোদন হয়েছে। এই কমিটিগুলো ৮৭.১৫ কি.মি বেরিবাধ নির্মাণ করবে। এতে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে ২৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। তবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিগুলো গোপনে করা হয়েছে বলে কৃষক ও জনপ্রতিনিধিরা অভিযোগ করেছেন।
আটগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কাশেম আজাদ বলেন, আমাদের এলাকায় বাধ হবে আমরা কিছু জানিনা। অথচ কোন দুর্যোগ আসলে আমাদেরকে আগেই ছুটে গিয়ে কাজ করতে হয়। তিনি বলেন, শাল্লার পিআইসি গঠনে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। কৃষক ও জনপ্রতিনিধিদের পাশ কাটিয়ে গোপনে পিআইসি গঠন করে সুবিধা নিয়েছে উপজেলা কমিটি।
নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টু বলেন, শাল্লায় ফসল রক্ষা বাধ নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণে ধাপে ধাপে দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে। কোন কৃষক কমিটি বিষয়ে কিছু জানেনা। উপজেলা কমিটির সভাপতি ও সদস্য সচিব একটি দুর্নীতিবাজ চক্রের মাধ্যমে সুবিধা নিয়ে গোপনে কমিটি অনুমোদন ও গ্রহণ করেছে। আমাদের বর্তমান চেয়ারম্যানবৃন্দ তা জানার পর তারা প্রতিবাদ করেছেন। আজ লিখিত অভিযোগ করেছেন। আমরাও তাদের প্রতি সংহতি জানিয়ে এই দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রতিবাদ জানাই। কমিটি বাতিল করে কৃষকের নেতৃত্বে গণশুনানী করে কমিটি গঠন করা হোক।
শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা কাবিটা মনিটরিং কমিটির সভাপতি আল মোক্তাদীর হোসেন বলেন, আমরা প্রকল্প গ্রহণে কোন অনিয়ম করিনি। জনপ্রতিনিধিরা তাদের পছন্দের লোকজনকে কমিটিতে দিতে না পেরে বিরোধীতা করছেন। তিনি প্রকল্প গ্রহণ ও অনুমোদনে কোন দুর্নীতি করেননি বলে জানান।