হাওর ডেস্ক ::
দেশে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে করোনা শনাক্তের হার ৩৩.৩৭ শতাংশে উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪৬ হাজার ২৬৮টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৫ হাজার ৪৪০ জনকে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হিসেবে শনাক্ত করা হয়। এটি নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে করোনা শনাক্ত হারের নতুন রেকর্ড। এর আগে শনাক্তের সর্বোচ্চ হার ৩২.৫৫ শতাংশ ছিল গত বছরের ২৪ জুলাই।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরো ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের নিয়ে দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৮ হাজার ৩০৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি যত খারাপই হোক না কেন, এত উচ্চহারে রোগী শনাক্তের বিষয়টি অস্বাভাবিক। শনাক্তের হার ১০ শতাংশের বেশি হলে বুঝতে হবে উপসর্গ যাদের আছে, তারা সবাই পরীক্ষা করাচ্ছে না বা পরীক্ষা করানোর সুযোগ পাচ্ছে না।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠানটির সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, রোগী শনাক্তের হারই বলে দিচ্ছে প্রয়োজনের তুলনায় পরীক্ষা কম হচ্ছে। নমুনা পরীক্ষা দ্রুত বাড়াতে হবে। প্রয়োজন হলে রিক্সাভ্যানে করে এন্টিজেন টেস্টের ব্যবস্থা নিয়ে ঘন জনবসতি এলাকায় যেতে হবে। গত বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও রাজশাহীতে এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এটা না হলে দেশে করোনা সংক্রমণের
প্রকৃত অবস্থা আমরা জানতে পারব না। প্রতিদিন রোগী শনাক্তের সংখ্যা এখনো গত বছরের ২৮ জুলাইকে অতিক্রম করে যায়নি। তবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে।
মোস্তাক হোসেন আরো বলেন, শুধু নমুনা পরীক্ষার পরিধি বাড়ালেই হবে না। পরীক্ষার ফলাফল দ্রুত মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানিয়ে দিতে হবে। কেউ পরীক্ষায় পজিটিভ বা সংক্রমিত হিসেবে চিহ্নিত হলে তার খোঁজখবর রাখতে হবে। প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে হবে।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টাসহ দেশে পর পর চার দিনই ১৫ হাজারের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ১৫ হাজার ৮০৭ জন, তার আগের দিন ১৫ হাজার ৫২৭ জন ও মঙ্গলবার ১৬ হাজার ৩৩ জন রোগী শনাক্ত হয়। সর্বশেষ শনাক্ত হওয়া ১৫ হাজার ৪৪০ জনকে নিয়ে দেশে করোনায় এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত হলো ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৭৭১ জন।
করোনা আক্রান্ত হয়ে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছে এক হাজার ৩২৬ জন। তাদের নিয়ে দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট সুস্থ হলো ১৫ লাখ ৬২ হাজার ৩৬৯ জন। সর্বশেষ ৪৬ হাজার ২৬৮টিসহ মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এক কোটি ২৩ লাখ ৫৬ হাজার ৯৪৫টি। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা হয়েছে ৮৪ লাখ ১১ হাজার ৮১২টি আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩৯ লাখ ৪৫ হাজার ১৩৩টি। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় রোগী শনাক্তের হার ৩৩.৩৭ শতাংশসহ গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৪.২৭ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৮.৬৩ শতাংশ আর মৃত্যুর হার ১.৬১ শতাংশ।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মৃত ২০ জনের মধ্যে পুরুষ আটজন আর নারী ১২ জন। দেশে এ পর্যন্ত করোনায় পুরুষ মারা গেল মোট ১৮ হাজার ৮৮ জন আর নারী ১০ হাজার ২২০ জন।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২০ জনের মধ্যে ৭১ থেকে ৮০ বছরের সাতজন, ৮১ থেকে ৯০ বছরের পাঁচজন, ১১ থেকে ২০ বছরের দুজন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে দুজন এবং শূন্য থেকে ১০ বছর, ২১ থেকে ৩০ বছর, ৬১ থেকে ৭০ বছর আর ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে রয়েছেন একজন করে।
এদের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের ৯ জন, ঢাকা বিভাগে পাঁচজন, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগে দুজন করে এবং বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগের একজন করে রয়েছেন। ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে সরকারি হাসপাতালে আর তিনজনের বেসরকারি হাসপাতালে।