জগন্নাথপুর প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌরশহরের প্রাণকেন্দ্রে এক নারীকে ছয় টুকরা করে নৃশংসংভাবে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা পলাতক জিতেশ চন্দ্র গোপ (২৭) কে ঢাকার রাজধানী এলাকা থেকে পুলিশের একটি সিআইডি টিম তাকে আটক করেছে বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে।
জিতেশ চন্দ্র কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার সইলা গ্রামের যাদব গোপের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পৌর শহরের সি/এ মার্কেট এলাকায় বাসা ভাড়া করে বসবাস করে শহরে ঔধষের দোকান পরিচালনা করে আসছিলেন।
আজ শুক্রবার বেলা দুইটার দিকে সহকারী পুলিশ সুপার (জগন্নাথপুর সার্কেল) জানান, আটকের বিষয়টি শুনেছি। তবে অফিসিয়ালভাবে এখনো সুনিশ্চিত হতে পারেনি। আমরা খোঁজ খবর দিচ্ছে। গত বুধবার বিকেলে উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের নারিকেলতলা গ্রামের সৌদিপ্রবাসী ছুরুক মিয়ার তিন সন্তানের জননী শাহনাজ পারভীন জ্যােৎস্না (৩৫) ঔষধ কিনতে বাসা থেকে রেব হয়ে নিখোঁজ হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে পৌরশহরের একটি তালাদ্ধ ফার্মেসী থেকে পুলিশ ওই নিখোঁজ নারীর ছয় টুকরা মরদেহ উদ্ধার করে।
বিভৎস এ হত্যকাণ্ডের ঘটনায় বাকরুদ্ধ নিহতের পরিবার, স্বজন ও ব্যবসায়ীরা। সেই সঙ্গে ক্ষোভ ঘৃনা আর ধিক্কার বইছে পুরো জগন্নাথপুরবাসীর মধ্যে।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের ভাই হেলাল মিয়া গত বৃহস্পতিবার রাতে জগন্নাথপুর থানায় ফার্মেসির মালিক জিতেশ গোপকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।
নিহতের স্বজন ও পুলিশ সূত্র জানায়, জগন্নাথপুর পৌরসভার কার্য্যালয়ের পিছনে নিজ মালিকানাধীন বাসায় সৌদিপ্রবাসীর স্ত্রী তাঁর তিন সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। বাসার নিকটবর্তী ব্যারিস্টার মির্জা আব্দুল মতিন মার্কেটে অভি মেডিক্যাল ফার্সেমিতে ওষুধ ক্রয় সূত্রে যাতায়াত করতেন। গত বুধবার বিকেলে ফার্মেসিতে যাচ্ছেন বলে বাসা থেকে বের হন শাহনাজ। এর পর থেকে তিনি নিখোঁজ হন। নিহতের ভাই হেলাল মিয়া তাঁর বোন বাসায় ফেরেননি জানতে পেরে ওই ফার্মেসিতে যান বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে। তখন ফার্মেসি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে ফার্মেসির মালিক জিতেশ চন্দ্র গোপকে মোবাইলে কল দিলে তিনি জানান, তাঁর বোন ওষুধ না পেয়ে চলে গেছেন। নিহতের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে পরিবারের লোকজন যোগাযোগ করলে অন্য এক নারী ফোন রিসিভ করে জানান, তিনি (নিহত নারী) সিলেট ওসমানীতে আছেন। সেখানে যোগাযোগ করেও তাঁর সন্ধান মেলেনি। পরে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে শাহনাজের ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। রাতভর বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করেও নিহত শাহনাজের সন্ধান না পেয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে নির্বাহী হাকিম জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজেদুল ইসলামের উপস্থিতিতে জগন্নাথপুর থানার পুলিশ তালাবদ্ধ অভি ফার্মেসির তালা ভেঙে দোকানে অভিযান চালায়। এ সময় দোকানের রোগী দেখার টেবিলের নিচে বিছানার চাদর দিয়ে মোড়ানো ওই নারীর শরীর ছয় টুকরা (গলা, পেট, হাত-পা) বিছিন্ন অংশ দেখতে পায় পুলিশ।
ঘটনার পর থেকে ফার্মেসির মালিক জিতেশ গোপ ও তাঁর পরিবার পলাতক ছিল। হত্যাকাণ্ডটি এর মধ্যেই শহরে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। অনেকের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, কেন হত্যা করা হলো নারীকে? ব্যস্ততম এলাকায় কি করে হত্যা করা হলো। কেউ কেউ ধারণা করছেন, টাকার কারণে এ হত্যাকাণ্ড হতে পারে।
জগন্নাথপুর বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহির উদ্দিন জানান, এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডে আমরা বাকরুদ্ধ। জগন্নাথপুর বাজারে আজ অবধি এমনভাবে শরীরকে খন্ড খন্ড করে হত্যার ঘটনার ঘটেনি। প্রকৃত অপরাধীকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি আমরা ব্যবসায়ীরা।
নিহতের ভাই হেলাল মিয়া জানান, শুনেছি হত্যাকারীকে ঢাকায় পুলিশের সিআইডির একটি দল আটক করেছে। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের জড়িতদের ফাঁসি চাই। বুধবার বিকেলে ঔষধের জন্য বাসা থেকে বের হয়ে শহরের একটি বিকাশের দোকান থেকে ৩০ হাজার টাকা কেশ আউট করে ফার্মেসিতে যান। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ হন বলে মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন।
জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, আটকের বিষয়টি আমার জানা নেই। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জগন্নাথপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের মরদেহ ময়না তদন্তের পর লাশ তাঁর পরিবারের লোকজনের নিকট বৃহস্পতিবার রাতেই হস্তান্তর করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি রক্তমাখা ছুরি ফামেসিতে উদ্ধার করা হয়।