স্টাফ রিপোর্টার::
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে সৌদি প্রবাসীর স্ত্রী শাহনাজ পারভীন জ্যোৎস্নাকে
(৩৫) গণধর্ষণ ও ৬ টুকরো করে লাশ গুমের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতারকৃত তিন
আসামীর ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
রবিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জগন্নাথপুরের অভি মেডিকেল হল ফার্মেসির মালিক
জিতেশ চন্দ্র গোপ মুদি মালের দোকানদার অনজিৎ গোপ ও অরূপ ফার্মেসির মালিক অসিত
গোপের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
সুনামগঞ্জের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আব্দুর রহিম এই রিমান্ড
মঞ্জুর করেন।
এর আগে তিন আসামীকে আদালতে হাজির করে প্রত্যেকের ১০ দিন করে রিমান্ড প্রার্থনা
করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডির) পরিদর্শক
লিটন দেওয়ান। রিমান্ড শুনানি শেষে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রত্যেক আসামীর ৮ দিন
করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
তিন আসামীর দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশের
সুনামগঞ্জ আদালত পরিদর্শক মো. বদরুল আলম তালুকদার।
রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার পর তিন আসামীকে সিআইডি তাদের হেফাজতে নিয়েছে বলে জানান
তিনি।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বুধবার রাতে জগন্নাথপুরের সৌদি
প্রবাসীর স্ত্রী শাহনাজ পারভীন জ্যোৎস্নাকে (৩৫)
কৌশলে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানোর গভীর রাতে ফার্মেসির ভেতর এনার্জি ড্রিংকস খেয়ে
তাকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের বিষয়টি প্রকাশ করার কথা বলায় শ্বাসরোধে শাহনাজকে
হত্যা করে লাশ ৬ টুকরা করা হয়। পরে লাশ গুমেরও পরিকল্পনা করে ধর্ষকরা। রাজধানী
ও সুনামগঞ্জে অভিযান চালিয়ে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার শাহনাজ হত্যার মূল তিন
আসামিকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানতে পারে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ
(সিআইডি)।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার জগন্নাথপুর পৌর পয়েন্টের ব্যারিস্টার মির্জা
আব্দুল মতিন মার্কেটের তালাবদ্ধ অভি মেডিকেল হল থেকে শাহনাজ পারভীন জ্যোৎস্নার
খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের ভাই হেলালউদ্দিন বাদী হয়ে ১৭
ফেব্রুয়ারি জগন্নাথপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। শাহনাজ পারভীন জ্যোৎস্না
২০১৩ সাল থেকে পৌর শহরের নিজ মালিকানাধীন বাসায় ২ ছেলে ও ১ মেয়েকে নিয়ে বসবাস
করে আসছিলেন। তার স্বামী ছরকু মিয়া দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে চাকরি করেন।
পরিবারের সব সদস্যদের ওষুধ ‘অভি মেডিকেল হল’ নামের ফার্মেসি থেকে কেনার সুবাদে
জিতেশের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। শাহনাজ পারভীন কিছুদিন ধরে বেশ কিছু
গোপনীয় শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। এ সমস্যার সমাধানে সুপরামর্শের জন্য গত
বুধবার বিকালে জিতেশের ফার্মেসিতে গেলে ফার্মেসির ভিতরে প্রাথমিক চিকিৎসা
কক্ষে তাকে বসিয়ে রাখা হয়। কাস্টমারের ভিড় কমলে তার সঙ্গে কথা বলে সমস্যা
সমাধানের জন্য সঠিক ওষুধ তাকে দেওয়া হবে বলে সময়ক্ষেপণ করে। তিনি বলেন, আসামি
জিতেশচন্দ্র গোপ তার বন্ধু মুদি মালের দোকানদার অনজিৎ গোপ (৩৩) ও পাশের অরূপ
ফার্মেসির মালিক অসিত গোপকে (৩৬) নিয়ে শাহনাজ পারভীনকে ধর্ষণের পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী জিতেশ শাহনাজ পারভীনকে চিকিৎসার কথা বলে ঘুমের ওষুধ খাওয়ালে
সে ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। তাকে ফার্মেসির ভিতর রেখেই জিতেশ বাইরে তালা দিয়ে
চলে যায়। আশপাশের সব দোকান বন্ধ হলে এবং গভীর রাতে ফার্মেসি খুলে ভেতরে প্রবেশ
করে এনার্জি ড্রিংকস পান করে। এর পর তারা শাহনাজ পারভীনকে পালাক্রমে ধর্ষণ
করে। ধর্ষণের বিষয়টি শাহনাজ তার পরিবারের সদস্য ও অন্যদের কাছে প্রকাশ করার
কথা বললে, আসামিরা তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। সে মোতাবেক তারা পরস্পর
যোগসাজশে শাহনাজ পারভীনকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে এবং বিশ্রাম কক্ষে থাকা বালিশ
দিয়ে মুখ চেপে ধরে হত্যা করে।