হাওর ডেস্ক ::
ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র দ্বাদশ কংগ্রেস (সম্মেলন) আগামীকাল শুক্রবার শুরু হচ্ছে। ‘দুঃশাসন হটাও, ব্যবস্থা বদলাও, বিকল্প গড়’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত এই কংগ্রেস আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে। সম্মেলনে রাজনৈতিক কর্মপন্থা নির্ধারণ ছাড়াও নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। আগামী নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
সিপিবির কেন্দ্রীয় দপ্তর জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল ১০টায় ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে সারা দেশ থেকে আগত প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষকদের নিয়ে কংগ্রেসের উদ্বোধনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। শুরুতেই দ্বাদশ কংগ্রেস প্রস্তুতি কমিটির সাংস্কৃতিক উপ-পরিষদ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করবে। এরপর জাতীয় পতাকা ও কাস্তে-হাতুড়ি খচিত পার্টির লাল পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে কংগ্রেসের উদ্বোধন হবে। এরপর শহীদ বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হবে।
উদ্বোধনী সমাবেশে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম, উপদেষ্টা মনজুরুল আহসান খান, সহিদুল্লাহ চৌধুরী, শাহাদাত হোসেন ও নুরুল হাসান এবং কংগ্রেস প্রস্তুতি পরিষদের চেয়ারম্যান লক্ষ্মী চক্রবর্তী বক্তৃতা করবেন।
উদ্বোধনী অধিবেশনে পার্টির ২২৯ জন ভেটারেন কমরেডকে (দায়িত্বশীল নেতা) সংবর্ধনা দেওয়া হবে। কংগ্রেস চলাকালীন প্রত্যেকদিন সন্ধ্যে ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মহানগর নাট্যমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে। অনুষ্ঠানে দেশের বরেণ্য শিল্পীরা অংশ নেবেন।
পার্টি সূত্র জানায়, উদ্বোধনী সমাবেশের পর বিকেল ৩টায় গুলিস্তানের কাজী বশির মিলনায়তনে (মহানগর নাট্যমঞ্চ) সাংগঠনিক অধিবেশন শুরু হবে। অধিবেশনে বিগত পাঁচ বছরের কর্মকাণ্ডের উপর ‘কেন্দ্রীয় কমিটির রিপোর্ট’, পার্টির রণকৌশলগত দলিল অর্থাৎ কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক প্রণীত খসড়া ‘রাজনৈতিক প্রস্তাব’ নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। এ ছাড়া রণনীতিগত দলিল ‘ঘোষণা ও কর্মসূচি’ সমসাময়িকীকরণ ও গঠনতন্ত্রের সংশোধনী, অডিট কমিটির রিপোর্ট, কন্ট্রোল কমিশনের রিপোর্ট, ক্রেডেনসিয়াল কমিটির রিপোর্ট উত্থাপন ও অনুমোদন হবে। কংগ্রেসের শেষ অধিবেশনে আগামী ৪ বছরের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি ও কন্ট্রোল কমিশন নির্বাচন করা হবে এবং জাতীয় পরিষদ ঘোষণা করা হবে।
সিপিবির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, কংগ্রেসে সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। বিশেষ করে দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর পাটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা ডাকসুর সাবেক ভিপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমকে সভাপতি পদ থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে। কারণ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরপর দু’বারের বেশী কারো সভাপতি পদে থাকার সুযোগ নেই। আগামী কমিটিতে তিনি প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে থাকবেন এমনটিই বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সেক্ষেত্রে নতুন সভাপতি হিসেবে পার্টির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কমরেড মনি সিংহের পুত্র ডা. দিবালোক সিংহ ও অধ্যাপক এম এম আকাশ আসতে পারেন। আর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সাবেক চারজন ছাত্রনেতা বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন ও আবদুল্লাহ ক্বাফি রতন, কেন্দ্রীয় সহকারী সম্পাদক কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন ও কেন্দ্রীয় সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের নাম শোনা যাচ্ছে। এরমধ্যে রুহিন হোসেন প্রিন্স পার্টির দায়িত্ব পালনের জন্য বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের চাকুরিতে ইস্তফা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
কংগ্রেস প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক আবদুল্লাহ ক্বাফি রতন জানান, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৪ বছর পর পর সিপিবির কংগ্রেস অনুষ্ঠানের বিধান থাকলেও করোনা মহামারির কারণে এক বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কংগ্রেসকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। সারা দেশে পার্টির সকল শাখা, উপজেলা কমিটি ও জেলা কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা কমিটিসমূহের সম্মেলনে ৪৮৭ জন প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। কংগ্রেসকে সফল করতে কেন্দ্রীয়ভাবে গঠিত প্রস্তুতি কমিটির অধীনে ১৫টি উপ-পরিষদ কাজ করছে।
তিনি আরো জানান, করোনা মহামারীর কারণে বিদেশি প্রতিনিধিগণ শারীরিকভাবে উপস্থিত না থাকলেও এখন পর্যন্ত ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, ইরান, ফিলিস্তিন, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, পুর্তগাল, ইতালি, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র, কুর্দিস্তান, কানাডা, চিলি, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, কিউবা, ভেনেজুয়েলা,গ্রিস, ব্রিটেন, আয়ারল্যান্ড, সোয়াজিল্যান্ড, চীন প্রভৃতি দেশের ভাতৃপ্রতীম পার্টিসমূহ কংগ্রেসের উদ্দেশ্যে তাদের বার্তা পাঠিয়েছে।