বিশেষ প্রতিনিধি::
হাওরের ফসলহারা কৃষকদের জন্য নেওয়া সরকারি সহায়তা ধিরে ধিরে ফুরিয়ে আসছে। ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে খোলা বাজারে চাল বিক্রয় কার্যক্রম। চলতি মাসের শেষ দিকে বন্ধ হয়ে যাবে প্রান্তি, দরিদ্র ও ক্ষুদ্র চাষীদের জন্য নেওয়া ‘বিশেষ ভিজিএফ’ কার্যক্রম। সরকারি প্রণোদনার পাশাপাশি বেসরকারি ত্রাণ সহায়তাও কমে আসছে। কৃষকরা জানিয়েছেন দু’এক মাসের মধ্যেই হাওরের অভাব আরো প্রকট হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অকালে সুনামগঞ্জের হাওর ডুবে যাওয়ার পর গত ১০ এপ্রিল ফসলহারা কৃষকদের জন্য ৪২টি পয়েন্টে ১৫ টাকা কেজিতে চাল বিক্রয় কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তী মাসে প্রতিটি হাওর এলাকার বাজারে আরো ৬৮টি ওএমএস কেন্দ্র চালু করা হয়। এসব কেন্দ্র থেকে শনিবার বাদে প্রতিদিন ১৫ টাকা কেজিতে ২০০ মানুষের মধ্যে একটন চাল বিক্রি করা হতো। একই সময়ে ১৭ টাকা কেজিতে ১টন আটা বিক্রি কার্যক্রম শুরু হলেও পরবর্তী মাসে তা বন্ধ হয়ে যায়। গত ৩০ জুন ওএমএস চাল বিক্রয় কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে গত এপ্রিল মাসের ২৩ তারিখ সরকার সুনামগঞ্জের হাওরের দেড় লাখ ফসলহারা চাষীকে তিন মাসের জন্য বিশেষ ভিজিএফ’র আওতায় নিয়ে আসে। প্রতিটি পরিবার মাসে ৫০০ টাকা ও ৩০ কেজি চাল সহায়তা পাচ্ছে। এই প্রণোদনা বন্ধ হয়ে যাবে চলতি মাসের ৩০ জুলাই। হাওরের লাখো কৃষকের জন্য নেওয়া এই অপ্রতুল সরকারি সহায়তায় এতদিন খুড়িয়ে চলছিল কৃষকের সংসার। এখন ওএমএস বন্ধের পর বিশেষ ভিজিএফ বন্ধ হয়ে গেলে কৃষকরা চরম খাদ্য সংকটে পরবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা।
জানা গেছে ফের ওএমএস চালু ও বিশেষ ভিজিএফের মেয়াদ বৃদ্ধিসহ অন্যান্য সরকারি সহায়তা প্রদানের জন্য জেলা প্রশাসন ও অন্যান্য বিভাগ উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে লিখিত আবেদন জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসন ফসলহারা কৃষক-মৎস্যজীবিদের কথা বিবেচনা করে অইজারাকৃত জলমহাল ও ইজারাপ্রক্রিয়াধীন জলমহাল ইজারা না দিয়ে উন্মুক্ত মাছ ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এদিকে ফসলহারা হাওরবাসীর প্রতি সংহতি জানানো কৃষকের সংগঠন ‘হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন’ ফের খোলা বাজারে চাল বিক্রয় চালু, বিশেষ ভিজিএঢ চালুসহ হাওরের অইজারাকৃত জলমহাল কৃষকের জন্য উন্মুক্ত করার দাবিতে গতকাল শনিবার সকালে মানববন্ধন করেছে। সংগঠনটি দ্রুত বন্ধ হয়ে যাওয়া সরকারি কার্যক্রম চালুর দাবি জানিয়েছে।
মানববনন্ধনে উপস্থিত সংগঠনের আহ্বায়ক ও মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু বলেন, ধান চলে যাওয়ার পর হাওরের সকল কৃষক নিঃস্ব। তাদের নূন্যতম সহায়তায় সরকারি যে কার্যক্রম শুরু হয়েছিল তাও বন্ধ হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় চরম বিপাকে পড়েছে কৃষক। দ্রুত কার্যক্রম গুলো ফের চালু না করলে হাওরের চরম হাহাকার শুরু হবে।
তাহিরপুর উপজেলার সাহেবনগর গ্রামের ফসলহারা কৃষক মো. বুরহান উদ্দিন বলেন, ‘বান্দ ভাইঙ্গা আমরার জীবন তছনছ কইরা গ্যালো। সরকার যেতা দিছল হিতাও শ্যাষ অইযার। এখন আমরা কিতা খরতাম। (বাধ ভেঙ্গে আমাদের জীবন তছনছ করে গেছে। সরকার যা দিয়েছিল তাও শেষ হয়ে যাচ্ছে। এখন আমরা কি করব?) তিনি আবারো ওএমএস ও বিশেষ ভিজিএঢ চালুর দাবি জানান।
তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, হাওরের ফসলহানীর ঘটনায় চালু সরকারি সব সহায়তা বন্ধের পথে। অথচ হাওরে মূল অভাব শুরু হয়েছে এখন। এই প্রণোদনার মেয়াদ বৃদ্ধি ও সহায়তা বাড়ানো না হলে কৃষক সমস্যায় পড়বে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম বলেন, হাওরের ফসলহারা কৃষকের জন্য সরকার নানা সহায়তা দিচ্ছে। মেয়াদ শেষ হলেও আমরা আবার সেই প্রণোদনা বৃদ্ধির জন্য আমরা আবেদন জানিয়েছি। সরকারের নির্দেশনায় আমরা মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মচারিবৃন্দ কৃষকের পাশে আছি।