বিশেষ প্রতিনিধি::
লন্ডন বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের প্রধান উপদেষ্টা, বিলেতে সুনামগঞ্জের কীর্তিমান বাঙালি শাহাগীর বখত ফারুককে নিয়ে সুনামগঞ্জ শহিদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরিতে ‘নাগরিক সন্ধ্যা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় অনুষ্ঠিত এই নাগরিক সন্ধ্যায় এই কীর্তিমান ও প্রোজ্জ্বল পুরুষকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন তার বন্ধু, সতীর্থ, অনুজ, অগ্রজসহ সুুধীজন। নাগরিক আয়োজনের ব্যানারে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানটিকে তার জীবনের শ্রেষ্ট দিন আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, আজকের দিনটি আমার জন্য স্মরণীয়। সকালে পারিবারিক সময়, দুপুরে বন্ধুদের সময় এবং বিকেলে নাগরিক সন্ধ্যায় সুধীজনের সঙ্গে কাটিয়েছি। আমি এই দিনটি ভুলতে পারবনা। সুনামগঞ্জের সঙ্গে আমার ভালোবাসা, শ্রদ্ধা অটুট থাকবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রবীণ সাংবাদিক ও আইনজীবী এডভোকেট হোসেন তওফিক চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাংবাদিক খলিল রহমানের সঞ্চালনায় অনুুষ্টিত নাগরিক সন্ধ্যায় সংবর্ধিত হিসেবে বক্তব্য দেন শাহাগীর বখত ফারুক। তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ পরিমল কান্তি দে, বর্তমান উপাধ্যক্ষ রজত কান্তি সোম মানস, পৌর মেয়র নাদের বখত, কমরেড রমেন্দ্র কুমার দে মিন্টু, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক যোগেশ্বর দাস, এডভোকেট নজরুল ইসলাম শেফু, এডভোকেট চান মিয়া, সাংবাদিক পঙ্কজ দে প্রমুখ।
শাহাগীর বখত ফারুক তার বক্তব্যে বলেন, আমি সব সময় সুনামগঞ্জকে বুকে ধারণ করি। এই সুনামগঞ্জের কাছে আমার অশেষ ঋণ। তিনি বলেন, আমি দশ বছর বয়সে প্রথম বক্তৃতা দিয়েছিলাম আজকের এই লাইব্রেরিতে। আমাদের ক্লাসমিটের ছোট ভাই পানিতে পড়ে মারা গিয়েছিল। তখন আমাদের ভাই আব্দুল হাই আমাকে এই শোকসভায় জোর করে বক্তব্য দিয়েছিলেন। সেই স্মৃতি এখনো আমাকে নাড়া দেয়।
দেশের সঙ্গে প্রবাসীদের সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা প্রবাসীরা দেশের সঙ্গে সেতুু বন্ধন স্থাপন অব্যাহত রেখেছি। এখন আমরা কেউ সাত সমুদ্র তেরো নদীর দেশের বাসিন্দা নই। আমরা এখন গ্লোবাল ভিলেজে বসবাস করি। প্রবাস-দেশ এখন কাছাকাছি। সুতরাং আমি লন্ডনে থেকেও সুনামগঞ্জের বাসিন্দা হিসেবে ভাবি। সুনামগঞ্জের সঙ্গে আমার এই প্রেম অটুট থাকবে।
উপস্থিত সুধীজনদের কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত এই আয়োজনে বিষ্ময় প্রকাশ করে বলেন, আমাদের বয়সী যারা আছি আমি চাই তাদেরকে সম্মান-সংবর্ধনা না দিয়ে বরং আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যারা প্রবাসে ভালো করছে ওরা দেশে আসলে তাদেরকে এই সম্মান দেওয়া হোক। তাহলে দেশের সঙ্গে, নাড়ির সঙ্গে একটি সেতুবন্ধুন গড়ে ওঠবে। আমি চাই আমাদের প্রবাসী মেধাবী প্রজন্মের সঙ্গে দেশের সেতুবন্ধন গড়ে ওঠুক। এজন্য তিনি সুনামগঞ্জ পৌরসভা, জগৎজ্যোতি পাঠাগারসহ সুধীজনদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বিলেতে তার দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও পার্লামেন্ট নির্বাচনে দুইবার এমপি পদে নির্বাচনের জন্য মনোনীত হওয়ার প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে শাহাগীর বখত ফারুক বলেন, আমি দুইবার পার্লামেন্টে নির্বাচন করার জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলাম। ওই দেশে সংসদ নির্বাচন করতে আমাদের মতো অটোমেটিক সিলেকশন করেনা। একটা কঠিন পর্যায় অতিক্রম করে আসতে হয়। মনোনয়ন পাওয়ার লড়াইয়ে একটি হোটেলে এসে থাকতে হয়। সেখানে সারা দেশের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা জড়ো হোন। তাদের সামনে যে কোন বিষয় নিয়ে প্রথমে দশ মিনিট বক্তব্য দিতে হয়। পরে শিডিউল অনুযায়ী কাজ করে বিভিন্ন পর্যায়ে পর্যবেক্ষনের মধ্য দিয়ে কাজ করতে হয়। পার্টির নির্বাচিত এমপিরা সামনে বসা থাকেন। তারা প্রশ্ন করেন। তারা মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নির্দিষ্ট বিষয়ে বক্তব্য শুনেন। তারপর গ্রুপ ডিসকাশন করতে হয়। এসব পর্যায় অতিক্রম করার পর সিলেকশন কমিটি মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মার্কিং করবে। রিটেন, ভাইভা নিবে। সব শেষে বলবে দুই সপ্তাহ পরে বাসায় চিঠি যাবে তুমি এমপি কেন্ডিডিট হতে পারবেন কি না।
এভাবে কঠিন যাত্রাসার মাধম্যে আমরা বাঙালিরা আস্তে আস্তে রাজনীতির চাষ করে আজকের পর্যায় তৈরি করেছি। আমরা এই অবস্থার মাধ্যমে বিলেতে রাজনীতি করে আজকের অভিবাসী তরুণদের ওঠে আসার রাস্তা করে দিয়েছি। এই যে পলিটিক্যাল কাল্টিভিশেনের পথ ধরেই এখন বাঙালিরা ওঠে আসছে। আমি যখন এমপি হিসেবে নির্বাচন করি তখন আমার আসনে একশ বছরের ইতিহাসে কোন বাঙালি জয়ী হতে পারেননি। তিনি বলেন, এভাবে ধিরে ধিরে রুশনারা আলী, রূপা হকরা ওঠে আসছেন। এখন আমাদের ৫ জন বাঙালি এমপি।