হাওর ডেস্ক::
দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সীমান্তবর্তী সব নদ-নদীর পানি বাড়ায় বিস্তীর্ণ হাওরের একমাত্র বোরো ধান নিয়ে কৃষকদের দুঃশ্চিন্তার মধ্যে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী ৭২ ঘণ্টায় ‘আকস্মিক বন্যা’র কোনো ঝুঁকি নেই।
তবে দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি এপ্রিল মাসে ঘূর্ণিঝড়, তাপপ্রবাহ, শিলাবৃষ্টি ও কালবৈশাখীর দাপট থাকবে। কোথাও কোথাও স্বল্পমেয়াদী বন্যার শঙ্কার আভাসও রয়েছে।
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরও।
দেশের খাদ্যশস্যের একটি বড় জোগান আসে হাওর থেকে। বিশাল হাওর বিস্তৃত সাত জেলা নিয়ে। এ জমির পুরোটাই এক ফসলি। হাওরের বোরো ধান রক্ষায় রয়েছে ফসল রক্ষা বাঁধ। এ বাঁধ তলিয়ে গেলে মানুষের দুর্দশার সীমা-পরসীমা থাকে না। তাই বাঁধ নিয়ে শঙ্কা বোরো ফসল না তোলা পর্যন্ত কাটে না কৃষকের।
কৃষকরা জানিয়েছেন, ধান এখনও দুধ বা দানা পর্যায়ে। ফসল গোলায় তুলতে আরও ১৫ থেকে ২০ দিন অপেক্ষা করতে হবে। শনিবার থেকে হাওরের নদ-নদীতে পাহাড়ি ঢলের পানি ঢুকতে শুরু করেছে।
এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো ক্ষতি না হলেও সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরের একটি বাঁধ ভেঙে গেছে। বেশ কয়েকটি হাওরে ফাটল ধরার খবরে আগাম বন্যার শঙ্কায় ঘুম হারাম হয়ে গেছে লাখ লাখ কৃষকের।
এর মধ্যেই রোববার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া হাওর অঞ্চলের নদ-নদীর পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, “আগামী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টায় সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার প্রধান নদ-নদীর পানি আবার বাড়তে পারে এবং কিছু পয়েন্টে বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে।
“তবে, সার্বিকভাবে ৭২ ঘণ্টায় কোনো আকস্মিক বন্যার ঝুঁকি নেই।”
বাংলাদেশ-ভারতের আবহাওয়ার তথ্য জানিয়ে পাউবো পূর্বাভাসে বলেছে, সোমবার দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম ও মেঘালয় প্রদেশে ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা নেই। তবে পরবর্তীতে ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে (বৃহস্পতিবারে মধ্যে) পুনরায় ভারী বর্ষণ হতে পারে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট ও সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী অংশ, মেঘালায়ের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৫৭ মিলিমিটার বর্ষণ হয়েছে। এতে জেলার সুরমা, ধনু, যাদুকাটা, বৌলাইসহ অন্যান্য নদীতে পানি বাড়ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা (নিয়ন্ত্রণ কক্ষ) মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, হাওর এলাকায় পানি বাড়ার তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। সিলেট ও নেত্রকোণার আংশিক তথ্য এসেছে। সার্বিক তথ্য পাওয়ার পর অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে করণীয় জানানো হবে।
বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে রোববার বৈঠক হয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক (কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্প) ড. মো. শাহ কামাল খান বলেন, “এখনও পর্যন্ত পরিস্থিতি শঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু হয়নি। হাওর এলাকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।“
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া জানান, উজানে এ সময়ে ভারি বর্ষণ হয়ে থাকে। তবে আকস্মিক বন্যার শঙ্কা নেই।
সিলেট ও সুনামগঞ্জের নদ-নদীতে পানি স্থিতিশীল হয়ে কমতে শুরু করতে পারে সোমবার এবং তা বিপৎসীমার নিচে অবস্থান করতে পারে।
নেত্রেকোণায় ধনু, বৌলাই নদীর পানি বাড়া অব্যাহত থাকতে পারে এবং খালিয়াজুড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে গেল দুই বছর এপ্রিল-মে মাসে চোখ রাঙিয়েছিল উজানের বর্ষণ।
সেই সঙ্গে গণপরিবহন বন্ধ থাকা ও সংক্রমণ এড়াতে বেশিরভাগ মানুষ ঘরে থাকায় হাওর অঞ্চলের ধান কাটার শ্রমিক সংকট দেখা দেয়। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শ্রমিকদের ধান কাটতে হাওর এলাকায় পাঠানো হয়। রাতে থাকার জন্য ওইসব এলাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোও খুলে দেওয়া হয়েছিল। পরিস্থিতি সামলে বোরো ধানকাটা শেষ করা হয়।
(সূত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরডটকম)