স্টাফ রিপোর্টার::
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম ও এলাকাবাসীর দাবি পূরণ করলেন সদর উপজেলার জয়নগর বাজার মঈনুল হক কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও জেলার বিশিষ্ট দানশীল ব্যক্তিত্ব মঈনুল হক। এলাকার এসএসসি উত্তীর্ণ দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীর ভর্তি ফিস নিজস্ব তহবিল থেকে প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। শনিবার কলেজ ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত এলাকাবাসীর শালিস বৈঠকে এ ঘোষণা দেওয়ায় তাকে অভিনন্দন জানান শালিসে উপস্থিত চারটি ইউনিয়নের স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, শালিসকারী ব্যক্তিত্বসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার হাজারো মানুষ। এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে কলেজের অনাকাঙ্খিত ঘটনার শান্তিপূর্ণ সমাধানে স্বস্তি প্রকাশ করেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সর্বস্তরের এলাকাবাসী।
উল্লেখ্য সম্প্রতি একটি মহলের ইন্দনে কোমলমতি কিছু শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে ভর্তি ফিস ইস্যুতে কলেজ ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করে তুলা হয়। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে মারামারিতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। পরবর্তীতে এ নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাস উত্তপ্ত হয়ে ওঠলে স্থানীয় আওয়ামী লীগে দ্বন্দের জেরে একটি মহল বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা চালায়। এই ঘটনা বুঝতে পেরে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মঈনুল হক সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করে সম্পূর্ণ বিষয় খুলে বলেন। এসময় জেলা প্রশাসক প্রতিষ্ঠাতা মঈনুল হককে হাওর দুর্যোগের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফিস বিষয়ে সহায়তার আহ্বান জানান।
মোহনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো. আব্দুর রশিদের সভাপতিত্বে ও সাচনা বাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম শামীমের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত শালিস বৈঠকে সদর উপজেলার মোহনপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জের শিমুলবাক-ভীমখালি ও জামালগঞ্জের সাচনাবাজার ইউনিয়নের স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, এলাকার শালিসকারী ব্যক্তিত্বসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের হাজারো মানুষ উপস্থিত ছিলেন। তারা অবহেলিত এলাকায় কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য দাতা মঈনুল হকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। এসময় প্রতিষ্ঠাতা অনাকাঙ্খিত ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে কলেজ পরিচালনায় এলাকাবাসীর সার্বিক সহায়তা কামনা করেন।
শালিস অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাচনা বাজার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল করিম শামীম, শিমুলবাক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জিতু, মোহনপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নূরুল হক, সাচনাবাজার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল হক আফিন্দি, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আতাউর রহমান, শিমুল বাক ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ, কালের কণ্ঠ ও একাত্তর টিভির সাংবাদিক শামস শামীম, দৈনিক সুনামগঞ্জের সময়ের সম্পাদক সেলিম আহমেদ, সাংবাদিক জসিম উদ্দিন, তরুণ সমাজকর্মী মো. আখলাকুর রহমান, শালিসী ব্যক্তিত্ব আবু বক্কর, মো. মানিক মিয়া, এখলাছুর রহমান প্রমুখ। শালিস বৈঠকে কলেজ প্রতিষ্ঠাতা মো. মঈনুল হক ও অধ্যক্ষ মো. মতিউর রহমানও তাদের বক্তব্য রাখেন। কলেজ ব্যবস্থাপনা কমিটি পুনর্গঠন এবং কলেজের আর্থিক ব্যবস্থাপনার বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেন শালিসী ব্যক্তিত্বরা। শালিস বৈঠক শেষে কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের ভুল বুঝতে পেরে বাজারে মঈনুল হকের অফিসে এসে দুঃখপ্রকাশ করে তাকে জড়িয়ে ধরে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে।
শালিসকারীদের সামনে নির্ধারিত বক্তব্যে কলেজ প্রতিষ্ঠাতা মো. মঈনুল হক বলেন, অনাকাঙ্খিত ঘটনার পর আমি আমাদের জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম মহোদয়ের সঙ্গে দেখা করে বিস্তারিত ঘটনা খুলে বলেছিলাম। তিনি আমাকে কলেজ প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে হাওরের দুর্যোগের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফিসে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তাছাড়া এলাকার মানুষও আমাকে অনুরোধ করেছিলেন। আমি তাদের কথা মেনে এ কলেজে ভর্তি হওয়া এসসসি উত্তীর্ণ সকল শিক্ষার্থীদের ফিস নিজে বহনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি আরো বলেন, মূলত গত তের বছরের হিসেব চাওয়ায় এবং কলেজের একাউন্ট হিসেব না খুলার কারণ জানতে চাওয়ায় আমার প্রতি কিছু কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভুল বুঝানো হয়েছিল। যার কারণে এই অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। আজ এই শালিসে এলাকাবাসী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা প্রকৃত ঘটনা জানতে পেরেছেন।
শালিস বৈঠকের সঞ্চালক রেজাউল করিম শামীম বলেন, মঈনুল হক শুধু এই কলেজই প্রতিষ্ঠা করেননি। তিনি এলাকার রামনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ এবং শান্তিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছেন। তাছাড়া বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসায় তিনি অনেক সহায়তা করে থাকেন। আজ তিনি শালিস বৈঠকে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীর ভর্তি ফিস প্রদান করে আবারও মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন। এই ধরনের মহানুভব মানুষদের সম্মান করার জন্য এলাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি আরো বলেন, আজ এই শালিসে এসে বুঝতে পেরেছি কলেজ ব্যবস্থাপনায় অনেক অসঙ্গতি আছে। বিশেষ করে আর্থিক বিষয় সম্পূর্ণ অস্বচ্ছ। কলেজের আর্থিক অসঙ্গতি দূর করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি পরিচালনা কমিটি ও এলাকাবাসীকে অনুরোধ জানান।