আওয়ামী লীগ তো প্রায় সারাজীবন মাইর খাওয়া দল। ৭৩ বছরের রাজনীতিতে ক্ষমতায় ছিলো সবমিলিয়ে ২১ বছরের মতো। বাকী ৫০ বছরের অধিক মাইরের উপরই আছে।
কাদের মাইর খাইছে আওয়ামী লীগ? ইস্কান্দার মীর্জা, আইয়ূব খান, ইয়াহিয়া খানের মতো পাকিস্তানী সামরিক জান্তা; জিয়াউর রহমান, এরশাদের মতো বাংলাদেশী সামরিক জান্তা; খালেদা নিজামী তারেক জিয়াদের মতো ম্যাগলোম্যানিয়াকদের।
জনগনের মাইর খায়নি কোনদিন আওয়ামী লীগ। এই দেশের জনগন কি শাসকদের মাইর দেয় নাই কোনকালে? দিছে তো। ’৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে বিচারকদের এজলাস, ঘরবাড়ি- পালিয়ে প্রানে বেঁচেছে পাকিস্তানী দালালেরা। ‘৯০ এর গন অভ্যুত্থানে মাইর দিয়েছে এরশাদের সাঙ্গপাঙ্গদের, ল্যাংটা করে পিটানো হয়েছে এরশাদের মন্ত্রীদের। মাইর দেয়া হয়েছে রাজাকারদের, মানুষ পিটিয়েছে কানসাটে ফুলবাড়িতে- বিএনপি আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে।
আওয়ামী লীগরে এনার্কির ভয় দেখিয়ে লাভ আছে? নকশাল, সর্বহারা, জাসদের গণবাহিনী আর জামাত শিবিরের এনার্কির মোকাবেলা করেই আওয়ামী লীগ টিকে গেছে।
মাঠপর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি- আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার প্রতি সবচেয়ে বিশ্বস্ত হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারগুলো। প্রায় দেড় লক্ষ পরিবার উল্লেখযোগ্য পরিমান ভাতা সহ নানা সুবিধা পাচ্ছেন এসময়ে। সুবিধা না পেলেও রক্তের টানে এঁরা বিশ্বস্ত। দুই ডিসিমিল জায়গার মালিকানা সহ পাকা ঘর পেয়ে গেছেন লক্ষাধিক পরিবার, মোট নয় লক্ষ পাবেন। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, ১০ টাকা কেজি চাল, ভিজিডি কার্ডের চাল- প্রতি ইউনিয়নে গড়ে দু হাজার মানুষ উপকারভোগী হলে সাড়ে চার হাজার ইউনিয়নে সরাসরি উপকারভোগী প্রায় এক কোটি মানুষ। তর্কের খাতিরে বলা যেতে পারে, এই উপকারভোগীরা কেনো আওয়ামী লীগের প্রতি বিশ্বস্ত থাকবে, যে কোন সরকারেই এসব সুবিধা পাবে। এর আগে জানতে হবে, এসব সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী কোন সময়ে চালু হয়েছে, কোন সময়ে বিকশিত হয়েছে। মনে রাখতে হবে, ২০০১ এ ক্ষমতায় ফিরে বিএনপি সরকার ইউনিয়ন পর্যায়ের সব কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দিয়েছিলো কারন এগুলো শেখ হাসিনার চালু করা ছিলো। দেশের মোট ভোটারের ৩০% (+) চরম দুঃসময়েও আওয়ামী লীগ ছাড়েনি, ছাড়বেনা।
আওয়ামী লীগ তার এসব রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক, সামাজিক পুঁজি ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারবে কিনা, বর্তমান আওয়ামী লীগের সেই দক্ষতা ও মনোযোগ আছে কিনা- এ নিয়ে আমার নিজের সন্দেহ আছে। সে অন্য আলাপ। কিন্তু আওয়ামী লীগকে শ্রীলংকার ভয় দেখিয়ে কুপোকাত করা যাবে- এ কল্পনা আসলে রিজভী ফখরুলও করেনা।
(লেখকের ফেইসবুক থেকে নেওয়া)