হাওর ডেস্ক::
একাত্তরে গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সুনামগঞ্জের ১১ যোদ্ধাপরাধী আসামির বিচার শুরুর নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামসহ তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেয়। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম।
অভিযোগ গঠন করে ২২ জুন এই মামলায় সূচনা বক্তব্য ও সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ঠিক করে দিয়েছে আদালত।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। আসামি পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন।
পরে আইনজীবীরা জানান, মামলার ১১ আসামির মধ্যে মোহাম্মদ জুবায়ের হোসেন মনির, মো. জাকির হোসেন, মো. সিদ্দিকুর রহমান, মো. তোতা মিয়া টেইলার সুনামগঞ্জের শাল্লার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। এছাড়া মো. আব্দুল জলিল ও মো. আব্দুর রশিদ একই জেলার দিরাই থানার বাসিন্দা। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন। এই লোকজন ১৯৭১ সনে একাধিক গণহত্যা. অগ্নিসংযোগ, নারীনির্যাতনসহ নানা অপরাধে জড়িত ছিলেন। তাদের আত্নীয় পিডিপি নেতা আব্দুল খালেক ছিল এই অঞ্চলের শীর্ষ যোদ্ধাপরাধী। সে শ্যামারচর পুলিশ ফাড়ির অস্ত্র লুট করে তার বাড়িকে রাজাকারদের দুর্গ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিল। মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার অপরাধে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার বাবাকে গাছে ঝুলিয়ে, শরির ছিলে, লবন ছিটিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করেছিল জোবায়ের মনিরের বাবা আব্দুল খালেক ও তার রাজাকার বাহিনী। বিয়ের রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের নৌকার মাঝি মাখন মিয়া, তার বাবাসহ একই পরিবারের ৭জনকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। লুটপাট করেছিল হিন্দু অধ্যুষিত গ্রাম পেরুয়ায়।
তবে মামলার বাকি আসামিরা পলাতক। গ্রেপ্তারের স্বার্থে পলাতকদের নাম, পরিচয় ও ছবি প্রকাশ করা হয়নি।
প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন জানান, ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল থেকে ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
২০১৯ সালের ১৮ জুন মামলার ১১ আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ধানমণ্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনটি ভলিউমে মোট ১৫০ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেটি ছিল তদন্ত সংস্থার ৭১তম প্রতিবেদন।
আসামিদের মধ্যে মনির, সিদ্দিকুর, তোতা মিয়া ও রশিদ বিএনপির সমর্থক। জাকির শাল্লা উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এবং জলিল আগে বিএনপির সমর্থক হলেও এখন আওয়ামী লীগের সমর্থক।
আসামিদের বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন সুনামগঞ্জের দিরাই ও শাল্লা থানার বিভিন্ন এলাকায় ৩৪ জনকে হত্যা, পাঁচ নারীকে ধর্ষণ, ৩০টি বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, ৩১ জনকে অপহরণ ও ১৪ জনকে নির্যাতনের চারটি অভিযোগ আনা হয়।
এ মামলায় ২০১৬ সালের ২১ মার্চ তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন তদন্ত কর্মকর্তা নুর হোসেন। প্রতিবেদনে ওই কর্মকর্তাসহ ৩২ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।