বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কালিপুর গ্রাম। গত ১৭ মে থেকে পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণ শুরু হলে ১০ মে ঢলের পানিতে গ্রামটি সয়লাব হয়ে যায়। গ্রামের একমাত্র সড়কটি ডুবে যায়। ডুবে যায় গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক ঘরবাড়ি। প্লাবিত ঘরের মধ্যেই বন্যার্তরা খাঁট উচু করে, মাচা বানিয়ে অবস্থান করেছেন। তিনদিন আগ থেকে পানি নেমে যাওয়ায় আগের মতো স্বাভাবিকভাবে এখন বাড়িতে আছেন। যারা শিশুদের কথা চিন্তা করে পরিবারকে অন্যত্র পাঠিয়েছিলেন তারাও পরিবারের শিশু ও নারীদের নিয়ে এসেছেন।
কালিপুরের প্রবেশ মুখের টিনশেডের একটি বস্তিতে ছিল হাঁটু পানি। ১২টি পরিবার এখানে বসবাস করে। ১০টি পরিবার বস্তি ডুবে যাওয়ার পর অন্যত্র চলে যায়। কিন্তু দুটি পরিবারের আশ্রয় নেওয়ার জায়গা না থাকায় এখানেই খাটের নিচে ইট বিছিয়ে কোনমতে মাথা গুজার ঠাই করে নিয়েছিল। প্রতিবেশির নির্মাণাধীন বাসার ছাদে রান্না করে কোনমতে দিন পার করেছিলেন তারা। তাদের এই দুঃসহ অবস্থা থাকার পরও কেউ তাদের ত্রাণ দেননি বলে জানান।
এই বস্তিতে ৫ ছেলে মেয়ে নিয়ে বসবাস করেন স্বামী পরিত্যাক্তা নাজমা বেগম। দুই দিনের বর্ষণে যখন বস্তিটি ডুবে যায় তখন দুই ছোট সন্তানকে নিয়ে বস্তির কুঠরির একমাত্র খাটটির নিচে ইট বিছিয়ে উচু করে কোনও রকম আশ্রয় নেন। দোকান থেকে চিড়া, মুড়ি, বিস্কুট এনে খেয়ে প্রথম দিন কাটিয়ে দেন। পরদিন পাশে নির্মাণাধীন একটি বাসার ছাদে ইট দিয়ে চুলো বানিয়ে কোনওমতে রান্না করে সন্তানদের খাওয়ান।
বুধবার দুপুরে ওই বস্তিতে গিয়ে দেখা যায় পানি নেমে গেছে। তবে চত্বরটি স্যাতসেতে। বস্তির ভিতরে ডু মেরে দেখা গেল ভেজা কাড়প, জিনিষপত্র জড়ো করে মাঠে শুকানোর জন্য দিচ্ছেন। তার ছোট মেয়ে কক্ষটি পরিষ্কার করছিলেন।
নাজমা বেগম বলেন, আমরা খুব কষ্টে ছিলাম তিনটি দিন। খেয়ে না খেয়ে থেকেছি। কোন সহায়তা পাইনি। কেউ আমাদের খোজও নেয়নি। বন্যার কারণে কয়েকদিন কাজ করতে না পারায় এখন খাওয়া-ধাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে।
একই বস্তির আমির উদ্দিন বলেন, আমি দিনমজুর মানুষ। ৫ ছেলে ও ১ মেয়ে নিয়ে বস্তিতে ১২টি পরিবারের সঙ্গে আমিও থাকি। আমার আশ্রয়ের সুযোগ না থাকায় বস্তিতেই পানিবন্দি অবস্থায় ছিলাম। এখন পানি কমায় নষ্ট হওয়া জিনিষপত্র গোছগাছ করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করছি। কিন্তু চারদিকে পানি থাকায় ছেলে-মেয়ে ও আমাদের সবারই চর্মরোগ হয়ে গেছে। কাজ বন্ধ থাকায় খাওয়া-ধাওয়াও সমস্যা হচ্ছে।
কালিপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের ঘরবাড়ি পানিতে নিমজ্জিত হওয়ার পর তার স্ত্রী ও ছোট ছোট চার ছেলে মেয়েকে শশুর বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। গতকাল আবার তাদের নিয়ে এসেছেন। বন্যায় তার ঘরের কাচা মেঝে নষ্ট করে দিয়ে গেছে। এখন মাটি দিবেন সেই জায়গাও নেই। তাই এই স্যাতস্যাতে ঘরেই তিনি ছেলে মেয়ে নিয়ে বসবাস করছেন।
রফিকুল ইসলাম বলেন, যেভাবে পানি বেড়েছিল তা দেখে গত শুক্রবার পরিবার ও চার ছেলে মেয়েকে শশুর বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। দুদিন পর থেকেই পানি নামতে শুরু করেছে। গতকাল স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে এসেছি। তবে ঘর-দরোজা নষ্ট করে দিয়ে গেছে। মেঝেতে কাদা জমেছে।
সুনামগঞ্জ পৌর মেয়র নাদের বখত বলেন, আমার পৌর শহরের বর্ধিত এলাকার বেশিরভাগ ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছিল। তবে দ্রুত পানি নেমে যাওয়ায় তেমন ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি। আমরা পৌরসভা ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে জিআরের চাল, নগদ টাকা ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছি। পৌর শহরের দুটি আশ্রয় কেন্দ্রেও সহায়তা দিয়েছি। তবে ৩-৪ দিন আগে ওই দুটি আশ্রয় কেন্দ্র থেকেও লোকজন বাড়িতে ফিরে গেছে।