অনলাইন ডেক্স:
শুরু হলো বাঙালির শোকের মাস। আজ শোকাবহ আগস্টের প্রথম দিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নৃশংসভাবে পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়সহ হত্যা করা হয়েছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। শুধু বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় বেঁচে যান। জাতির পিতার হত্যার মধ্য দিয়ে একাত্তরের পরাজিত শত্রুরা বিষাক্ত সাপের মতো ফণা তুলে গর্ত থেকে বেরিয়ে আসে এবং দেশকে মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শ ও চেতনা থেকে বিচ্যুত করার দিকে ঠেলে দেয়।
বহু সংগ্রামের মধ্য দিয়ে একুশ বছর পরে ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় ফিরে এসে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফেরানো শুরু করলেও ঐ কালো অধ্যায় জাতির ইতিহাস থেকে মুছে যেতে পারে না, যেখানে রয়েছে জাতির জন্য শিক্ষার অনেক ঐতিহাসিক উপাদান।
সেই হত্যাকাণ্ডের বিয়োগান্ত অধ্যায় সূত্রে জাতি আগস্ট মাসজুড়ে গভীর শোক ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৫ আগস্টের শহীদদের। ঘৃণা-ধিক্কার জানায় মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী চক্রান্তকারী ঘাতকদের।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ দিয়ে এর বিচারের পথ পর্যন্ত রুদ্ধ করা হয়েছিল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসার পর কলঙ্কিত সেই অধ্যাদেশ বাতিল এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু করা হয়। নানা কূটকৌশলের জাল ছিন্ন করে দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ায় ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের চূড়ান্ত রায় এবং পরবর্তী সময়ে পাঁচ ঘাতকের ফাঁসি কার্যকর করার মাধ্যমে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করা হয়েছে। তবে পুরো জাতি এখনও প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে বঙ্গবন্ধুর বাকি ছয় পলাতক খুনির ফাঁসি কার্যকর করার জন্য।
আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো শোকের মাসের মাসব্যাপী কর্মসূচি শুরু করেছে।
সারাদেশের মানুষ আজ থেকে বুকে শোকের প্রতীক কালো ব্যাজ ধারণ করবে। রয়েছে শোকর্যালি, টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার কবর ও বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে তার প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন, বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, স্বেচ্ছায় রক্তদান, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা প্রভৃতি।
বিকেল ৫টায় ধানমণ্ডি বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে কৃষক লীগের রক্তদান কর্মসূচি এবং ‘কৃষকের কণ্ঠ’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে যুবলীগের আয়োজনে মাসব্যাপী বঙ্গবন্ধুর জীবনভিত্তিক সংবাদচিত্র প্রদর্শনী আজ শুরু হবে। মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শোকর্যালি করবে। বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলা সকাল ৯টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও মাসব্যাপী কর্মসূচি শুরু করবে।
এই আগস্টেই ঘটেছিল জাতির ইতিহাসের আরও একটি বিয়োগান্ত ঘটনা। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে চালানো হয়েছিল ইতিহাসের ভয়াবহতম গ্রেনেড হামলা। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে চালানো ওই গ্রেনেড হামলা থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও ঝরে গিয়েছিল মহিলা আওয়ামী লীগ নেতা আইভি রহমানসহ ২৪টি তাজা প্রাণ।