হাওর ডেস্ক ::
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন ২৪ ডিসেম্বর। সম্মেলনে শীর্ষ দুই পদে নতুন মুখ আসার সম্ভাবনা নেই। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, সভাপতি পদে শেখ হাসিনার বিকল্প কেউ এখনো তৈরি হয়নি। কেউ কেউ বলছেন, তিনি যতদিন পৃথিবীতে আছেন, ততদিনই আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে থাকবেন। ফলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে সাধারণ সম্পাদক পদ।
বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, সব আলোচনা চুকিয়ে সাধারণ সম্পাদক পদে আওয়ামী লীগের ইতিহাসে প্রথম তৃতীয়বারের মতো দায়িত্ব পাচ্ছেন ওবায়দুল কাদের। তবে প্রেসিডিয়াম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে চমক আসতে পারে। রদবদল হওয়ার সম্ভাবনা আছে সদস্য পদেও। তবে কেন্দ্রীয় কমিটির কলেবর বাড়বে না, ৮১ সদস্যেরই থাকবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বঙ্গবন্ধুর পরিবারের পরেই দেশের মানুষের আবেগ ও অনুভূতির জায়গায় আছে জাতীয় চার নেতার পরিবার। এই আবেগ ও অনুভূতি বিবেচনায় নিয়ে জাতীয় চার নেতার পরিবারের সদস্য জায়গা পেতে পারেন এবারের কমিটিতে। ত্যাগী নেতাদের পাশাপাশি কমিটিতে থাকতে পারেন তৃণমূলের অনেক মুখও।
গত ৪১ বছরে আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে শেখ হাসিনা ছাড়া কেউ প্রার্থিতা করেননি। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে শুরু করে দলের বিভিন্ন পদে সবসময় নেতাকর্মীরা তাদের আকাক্সক্ষার কথা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রকাশ করেছেন। সূত্র বলছে, সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদের নানা দিক বিবেচনায় অনেকটা নিশ্চিত। তবে এ তালিকায় আরও রয়েছেন- দলের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ড. আবদুর রাজ্জাক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ও ড. হাছান মাহমুদ।
প্রেসিডিয়াম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদক ও সদস্য পদে চমক আসতে পারে বলে জানা গেছে। সূত্রমতে, প্রেসিডিয়াম থেকে বেশ কয়েকজন নেতাকে উপদেষ্টা পরিষদে আনা হতে পারে। সেই শূন্য জায়গায় বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক থেকে অন্তত দুজনকে প্রেসিডিয়ামে নেওয়া হতে পারে।
এ ছাড়া নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমকে দলের যুগ্ম ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আনার পরিকল্পনা চলছে। ইতোমধ্যে এই তালিকার দুজন নেতাকে দলীয় হাইকমান্ড থেকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। অবশ্য এ বিষয়ে এই চার নেতার কেউই আমাদের সময়ের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
অন্যদিকে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান কমিটি থেকে বেশ কয়েকজনকে বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে দলীয় হাইকমান্ড। বাদ পড়া নেতাদের ঢাকা সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে কিংবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন স্থানে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
আর তাদের স্থলে সাবেক ছাত্রনেতা, দুঃসময়ে অবদান রাখা কজন তৃণমূল নেতা এবং সংখ্যালঘু কোটায় অনেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পেতে পারেন। কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসার তালিকায় রয়েছেন বলরাদ পোদ্দার, খলিলুর রহমান, সাবেক ছাত্রনেতা এইচএম মাসুদ দুলাল, মনিরুজ্জামান মনির, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি যথাক্রমে শেখ বজলুর রহমান ও আবু আহম্মেদ মন্নাফী।
অন্যদিকে জাতীয় চার নেতার পরিবারের সদস্য হিসেবে খায়রুজ্জামান লিটন ইতোমধ্যে দলের সভাপতিম-লীর সদস্যপদ পেয়েছেন। তাকে পুনরায় সেখানে রাখা হতে পারে। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমিকে সভাপতিম-লীর সদস্য করা হয়েছে। এবারের কমিটিতেও তাকে সেখানে রাখা হতে পারে। মোহাম্মদ নাসিম মারা যাওয়ার পর শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী পরিবারের কেউ দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেই।
বর্তমান কমিটিতে এই পরিবার থেকে প্রয়াত ড. মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে শেহেরনি সেলিম রিপন অথবা তানভীর শাকিল জয়কে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আনা হতে পারে। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মারা যাওয়ার পর শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের পরিবার কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়ে। এবারের ওই পরিবার থেকে ডা. জাকিয়া নূর লিপি কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পেতে পারেন।
দলের সভাপতিম-লীর এক সদস্য আমাদের সময়কে বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের সামনে মাঠের বিরোধী দল ও দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবিলার মতো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ফলে এই সম্মেলনে অনেক ভেবে-চিন্তে কেন্দ্রীয় কমিটি নির্ধারণ করতে হবে। বিগত দিনে বঙ্গবন্ধু কন্যার নির্দেশে যারা ক্রাইসিস মোকাবিলায় উত্তীর্ণ কিংবা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন, তাদের বিষয়টা অগ্রাধিকার পাবে, এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।