1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৯ অপরাহ্ন

সুরঞ্জিতের সাবেক এপিএস ও ধর্মপাশার ফারুক যেভাবে জড়ালেন জঙ্গিবাদে

  • আপডেট টাইম :: বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২, ৫.০৮ পিএম
  • ১৭১ বার পড়া হয়েছে

হাওর ডেস্ক:
ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা তদন্তে নতুন নতুন তথ্য বেরিয়ে আসছে। দুবাইয়ের একটি নম্বর দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ খুলে কারাবন্দি অবস্থায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুর্ধর্ষ জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন সাবেক রেলমন্ত্রী প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক তালুকদার। জঙ্গি ছিনতাই পরিকল্পনার পুরোটা জানতেন তিনি।
গত ২০ নভেম্বর দুই জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেল ও মইনুল হাসান শামীমের সঙ্গে লাপাত্তা হন এক নারীও। তিনি হলেন জঙ্গি সোহেলের স্ত্রী ফাতেমা খানম শিখা। প্রকৌশলী শিখার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে। ছিনতাই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কে বা কারা শিখাকে তাঁর গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ থেকে পুরান ঢাকার আদালত চত্বর পর্যন্ত এনেছিলেন, এটি তদন্ত করতে গিয়ে আইনজীবী ফারুকের নাম আসে। শিখার বাবা মো. হোসাইন পুলিশকে জানিয়েছেন, ২০ নভেম্বর সকালে ময়মনসিংহে যান ফারুক। এর পর শিখা সন্তানসহ তাঁর সঙ্গে বেরিয়ে আসেন। ওই ঘটনার এক মাস আগেও শিখার সঙ্গে দেখা করতে ময়মনসিংহে যান ফারুক। ওই সময় শিখার বাবার সঙ্গে পরিচিত হন তিনি। প্রথম দিন বাসার বাইরে ফারুকের সঙ্গে কথা বলেছিলেন সোহেলের স্ত্রী। ওই ব্যক্তির বেশভূষা দেখে শিখার বাবার তখনই সন্দেহ হয়েছিল- তিনি কোনো জঙ্গি গ্রুপের সদস্য। তবে কে, কী কারণে ফারুক তাঁর মেয়ের সঙ্গে দেখা করেছেন- এটি পরিস্কার করে বলেননি। এমনকি হোসাইনের জামাই সোহেলের বোন তানজিলা আফরোজ জাহানকে ফারুক বিয়ে করেছেন- এটিও জানাননি। তদন্ত-সংশ্নিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এ ব্যাপারে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটপ্রধান ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, তথ্যপ্রযুক্তিগত তদন্তে ছিনতাই অপারেশনে ফারুকের সংশ্নিষ্টতা পাওয়া গেছে। কারাগারে থাকাকালে জঙ্গিবাদে ভিড়েছেন তিনি। তাঁরা বিভিন্ন দেশের নম্বর ব্যবহার করে গোপনে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখতেন। ফারুক কীভাবে দুই জঙ্গিকে পালাতে সহযোগিতা করেছেন, সে ব্যাপারে শিখার বাবা সাক্ষী হিসেবে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

তদন্ত-সংশ্নিষ্ট একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, ২০১৭ সালের দিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলায় ছয় মাসের মতো কারাগারে ছিলেন সাবেক রেলমন্ত্রীর এপিএস ফারুক। ওই সময় তাঁর সঙ্গে কারাগারে পরিচয় হয় লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার আসামি আনসার আল ইসলামের শীর্ষ জঙ্গি সোহেলের। এর পর তাঁদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়েছিল। ফারুকের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জ। পড়াশোনা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগে। জামিন পেয়ে কারাগার থেকে বের হওয়ার পরও সোহেলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়াই জঙ্গি সোহেলের বোন তানজিলাকে বিয়ে করেন ফারুক। সোহেলের ইচ্ছাতেই এ বিয়ে হয়েছিল। কারাগার থেকে নবদম্পতিকে শুভেচ্ছাও জানান মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি। এর পর ফারুক তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে মোহাম্মদপুরে বসবাস শুরু করেন।

পুলিশের আরেক কর্মকর্তার ভাষ্য, প্রযুক্তিগত তদন্তে তাঁরা দুবাইয়ের একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর পেয়েছেন। দুবাইয়ে থাকা পরিচিত কোনো ব্যক্তির সহায়তা নিয়ে নিজের নামে বিদেশি নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপ খুলেছিলেন তিনি। ওই নম্বর ব্যবহার করেই কারাগারে সোহেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। পুলিশের একটি টিম কাশিমপুর কারাগারে সোহেলের কক্ষে তল্লাশি করতে যায়। এ ছাড়া জঙ্গি ছিনতাইকাণ্ডের আগে পুরান ঢাকার আদালত চত্বর রেকি করেছেন ফারুক। আর ঘটনার দিনও আদালত চত্বরে উপস্থিত ছিলেন। ছিনতাই মিশন শেষে জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগের তথ্যপ্রযুক্তিগত আলামত ডিলিট করেন ফারুক।

তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা জানান, ছিনতাই পরিকল্পনার বিষয়টি আগে থেকে জানার কারণেই ঘটনার দিন সকালে ময়মনসিংহ থেকে সোহেলের স্ত্রী শিখাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন ফারুক। আর এ ঘটনার পর ফারুকের কাছে মেয়ের খোঁজ জানতে চান শিখার বাবা। উত্তরে সাবেক এপিএস বলেন, ‘শিখাকে নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। সে ভালো আছে।’ জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় এরই মধ্যে সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন শিখার বাবা।

এক দশকের বেশি সময় ধরে উগ্রপন্থিদের ব্যাপারে খোঁজ রাখেন এমন একজন কর্মকর্তা জানান, বেশ কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য পান- হাইকোর্টের একজন আইনজীবী জঙ্গিবাদে জড়িত। কারাবন্দি উগ্রপন্থিদের সঙ্গে নিয়মিত গোপনে যোগাযোগ রাখেন তিনি। তবে আইনজীবীর নাম-পরিচয় বের করতে পারছিলেন না গোয়েন্দারা। দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ের পর ফারুকের সংশ্নিষ্টতার বিষয় স্পষ্ট হওয়ায় গোয়েন্দারা নিশ্চিত হন, জঙ্গিদের একাধিক মামলায় আইনজীবী হিসেবে তিনি কাজ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে জঙ্গি আলী আহসান ওসমান ও গুনভীর মামলাও। কারাগারে থাকাকালে জঙ্গিদের সংস্পর্শে এসে সর্বনাশ ঘটে তাঁর। আইনজীবী পেশার আড়ালে তিনি জঙ্গিদের সহযোগিতা করেছেন। আদালত থেকে শ্যালক সোহেলকে ছিনিয়ে নিতে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেন। আদালত চত্বরে অপর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি মোজাম্মেল হোসেন সায়মনের স্ত্রী তৃষ্ণার সঙ্গে ফারুক কথা বলেন। ১ নভেম্বর পুরান ঢাকার আদালত চত্বর রেকি করেন তিনি।

তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা বলছেন, জঙ্গিরা সাধারণত নিজেদের পরিবারের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনে বিশ্বাসী। এ কারণে সোহেল তাঁর বোন তানজিলাকে ফারুকের কাছে বিয়ে দিয়েছেন। এর আগে তানজিলা দীর্ঘদিন আরেক জঙ্গি হৃদয়ের সঙ্গে প্রেম করেছেন। হৃদয়ের মূল কাজ হলো জঙ্গি দলের সদস্য হয়ে বড় বড় ডাকাতি করে সংগঠনের অর্থ জোগাড় করা। তার বিরুদ্ধে ১১টি ডাকাতির মামলা আছে। পলাতক হৃদয়কে খোঁজা হচ্ছে। এ ছাড়া জঙ্গি সোহেলের স্ত্রী শিখার ভাই মোজাম্মেলও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি। তার পরিবারের চার সদস্য উগ্রপন্থায় জড়িত। সোহেলের বোন তানজিলাও উগ্রপন্থায় সম্পৃক্ত।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!