হাওর ডেস্ক::
সাধারণ ক্রেতার ভরসা ছিল পোল্ট্রি মুরগিতে। পোল্ট্রির সুবাদে মাঝে মধ্যেই পাতে নেওয়া যেত মাংস। নিম্ন আয়ের মানুষের বাড়িতে মেহমান আসলে ব্রয়লার মুরগির মাংসই ছিল আপ্যায়নের মাধ্যম। সেই ব্রয়লারের কেজি এখন ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গেছে দাম। সেই প্রভাব পড়েছে দোকানেও। ক্রেতাও কমে গেছে অনেক। এবার দেখা গেল মুরগির মাংস বিক্রি হচ্ছে পিস বা টুকরো করে।
চট্টগ্রামের চকবাজারের কাঁচাবাজারে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি পিস বা টুকরা হিসেবে মুরগির মাংস বিক্রি শুরু হয়। এলাকার সমাজকর্মী মো. কায়সার আলী চৌধুরীর উদ্যোগে ব্যবসায়ীরা মুরগি টুকরা করে বিক্রি করতে রাজি হন। এর দেখাদেখি গতকাল শনিবার থেকে একই বাজারে ‘ন্যূনতম ২৫০ গ্রাম গরুর মাংস বিক্রয় করা হয়’ এ রকম নোটিশ ঝুলিয়েছেন দোকানিরা। পাশের দোকানে আগে থেকেই ঝোলানো আছে ‘এখানে মুরগির মাংস পিস হিসেবে বিক্রয় করা হয়’। তাঁরাও চাইছেন এই পদ্ধতি চালু হোক। এই উদ্যোগের কারণে স্বল্প আয়ের মানুষের পাতেও মুরগি ও গরুর মাংস উঠবে।
চট্টগ্রামে গরুর মাংসের কদর বেশি। অতিথি আপ্যায়নেও গরুর মাংস তালিকার সবার ওপরে থাকে। কিন্তু দাম চড়া হওয়ায় এক শ্রেণির মানুষের নাগালের অনেকটা বাইরে চলে গেছে গরুর মাংস। এ অবস্থায় চকবাজারে এমন উদ্যোগ এসেছে।
ফার্ম ও সোনালি—দুই ধরনের মুরগিকে পিস হিসেবে বিক্রির ধারণাটি প্রথম আসে চকবাজার এলাকার সমাজকর্মী মো. কায়সার আলী চৌধুরীর কাছ থেকে। উদ্যোগের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চকবাজার এলাকার বেশির ভাগ মানুষই শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী ও চাকরিজীবী। এই শ্রেণির মানুষের কাছে মুরগিই ছিল কম দামে খাওয়ার বড় সম্বল। সম্প্রতি মুরগির দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় আমি নিজে দেখেছি ক্রেতার ধস নেমেছে। অনেকেই ইচ্ছা থাকলেও আস্ত মুরগি কিনতে পারছিলেন না। তাঁদের জন্যই আমার মাথায় এই আইডিয়া আসে।’
কায়সার আলী বলেন, ‘গত ২১ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের সেলিম পোলট্রি শপের মালিকের সঙ্গে আমার কথা হয়। তাঁকে মুরগি পিস হিসেবে বিক্রির পরামর্শ দিই। প্রথমে ইতস্তত করলেও পরে যৌক্তিকতা বুঝতে পেরে একমত হন এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে বিক্রি শুরু করেন তিনি।’
সেলিম পোলট্রি শপের ম্যানেজার আবদুল কাদির কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পিস হিসেবে খুব বেশি বিক্রি হচ্ছে তা কিন্তু নয়। আর এতে আমারও কোনো বাড়তি লাভ নেই। কিন্তু একটি মানসিক স্বস্তি আছে; এ জন্যই এই উদ্যোগ আমার মালিকের।’ তিনি বলেন, চট্টগ্রামের বাজারে বর্তমানে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি। অন্যদিকে সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩১০ থেকে ৩২০ টাকায়। সেই হিসাবে ব্রয়লার মুরগির চার ভাগের এক ভাগ প্রতি টুকরার দাম পড়বে ৫৫ থেকে ৫৭ টাকা। আর সোনালি মুরগির মাংসের প্রতি টুকরার দাম পড়বে ৭৭ থেকে ৮০ টাকা।
সেলিম পোলট্রি শপের পাশাপাশি আরো দুটি দোকানে গতকাল থেকে চালু হয়েছে টুকরা করে মুরগির মাংস বিক্রি। এর একটি আলমগীর পোলট্রি সেলস সেন্টার। দোকান মালিক মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘আমরাও শুরু করেছি নতুন এই উদ্যোগ। সবাই একসঙ্গে বিক্রি শুরু করলে নিশ্চয়ই সুফল মিলবে।’
সেলিম পোলট্রি শপের পাশে থাকা দুটি গরুর মাংসের দোকানেও ভাগ হিসেবে বা ২৫০ গ্রাম হিসেবে মাংস বিক্রি শুরু হয়েছে গতকাল থেকে। গরুর মাংস বিক্রেতা ইলিয়াস হোসেন সওদাগর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ক্রেতারা কোনো ধরনের সংকোচ ছাড়াই সর্বনিম্ন ২৫০ গ্রাম হিসেবে হাড়সহ এবং হাড় ছাড়া মাংস কিনতে পারবেন। প্রথম দিনেই বেশ ভালোই সাড়া মিলেছে। মুরগির মাংসের চেয়ে গরুর মাংসে সাড়া বেশি।’
তিনি বলেন, অনেক শিক্ষার্থী সপ্তাহে একবার গরুর মাংস কিনতেন; কিন্তু বর্তমানে এক মাসেও একবার আসেন না। সেই ক্রেতারা নিশ্চিত বাজারে আসবেন। আর সবাই একসঙ্গে এই পদ্ধতিতে বিক্রি শুরু করলে একেবারেই সংকোচ থাকবে না।’
গতকাল চকবাজারে হাড়সহ গরুর মাংসের কেজি বিক্রি হয় ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকায়। আর হাড় ছাড়া গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮২০ থেকে ৮৫০ টাকায়। সেই হিসাবে হাড়সহ ২৫০ গ্রাম গরুর মাংসের দাম ১৮০ থেকে ১৯০ টাকার মধ্যে। হাড় ছাড়া গরুর মাংস ২০৫ থেকে ২১৩ টাকায় কিনতে পারছেন ক্রেতারা।
(সৌজন্যে: দৈনিক কালের কণ্ঠ)