হাওর ডেস্ক::
উপজেলা পরিষদ আইন থেকে ‘মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা’ রাখার বিধান বাতিল করা হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ৫ জুন পর্যন্ত এ রায় স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
এ রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করলে বুধবার (০৫ এপ্রিল) এ আদেশ দেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাছান চৌধুরী। রিটকারীপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আজমালুল হোসেন, আইনজীবী মো. মিনহাদুজ্জামান লিটন।
আদেশের পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ (১) ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করে তা বাতিলের যে রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট, সে রায় আগামী ৫ জুন পর্যন্ত স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত। এ সময়ের মধ্যে রায়ের অনুলিপি পেলে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে লিভটু আপিল করা হবে। না পেলে স্থাগিতাদেশ বাড়াতে আবেদন করা হবে। তবে হাইকোর্টের রায় স্থগিত হওয়ায় উপজেলা পরিষদ আগের নিয়মে অর্থাৎ ইউএনও পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন বলে জানান আইন কর্মকর্তা মেহেদী হাছান চৌধুরী।
উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮ এর ৩৩ (১) বলা হয়েছে, ‘উপজেলা নির্বাহী অফিসার পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হইবেন এবং তিনি পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করিবেন।’
২৯ মার্চ হাইকোর্ট এই ধারাটি বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। আদালত রায়ে বলে দেন, আগের নিয়মে ইউএনওরা উপজেলা পরিষদে সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবেন। রাষ্ট্রীয় বা জাতীয় অনুষ্ঠান বা যেকোনো আনুষ্ঠানিকতার চিঠি বা ব্যানারে ইউএনওরা ‘উপজেলা প্রশাসন’ ব্যবহার করতে পারবেন না।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে উপজেলা পরিষদ চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসলে ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি দেশের ৪৮১টি উপজেলায় নির্বাচন হয়। ওই বছর ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে নির্বাচিত চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানরা শপথ নেন। ২০০৯ সালের ৬ এপ্রিল স্থানীয় সরকার (উপজেলা অধ্যাদেশ) বিলুপ্ত করে উপজেলা পরিষদ আইন-১৯৯৮ সংশোধন করে সরকার।
ওই আইনে ইউএনওকে উপজেলা পরিষদের সচিব করা হয়। তখন ইউএনওরা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জানান, আইন সংশোধনের মাধ্যমে তাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। পরে উপজেলা চেয়ারম্যানদের প্রবল আপত্তির মুখে ২০১১ সালে উপজেলা পরিষদ আইন সংশোধন করে ইউএনওদের ‘মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা’ করা হয়। উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮ এর ৩৩ (১) বলা হয়েছে, ‘উপজেলা নির্বাহী অফিসার পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হইবেন এবং তিনি পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করিবেন।’ আর ৩(২) ধারায় বলা হয়েছে, ‘পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিপালন এবং বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য কার্যাবলি পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সম্পাদন করিবেন। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে পরিষদের ‘মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা’ করা নিয়ে আপত্তি তোলেন পরিষদের চেয়ারম্যানরা। বর্তমানে উপজেলা পরিষদের বেশির ভাগ কমিটির সভাপতি হন ইউএনও। উপদেষ্টা রাখা হয় চেয়ারম্যানকে।
এ রকম বিধানে সৃষ্ট জটিলতায় উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও দুমকি উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ ও অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মনোহরদী উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খান, গাজীপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রিনা পারভীন, কালিয়াকৈর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম আহম্মেদ ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রাশেদা আক্তার ২০২০ সালে ৭ ডিসেম্বর আইনটির ৩৩ ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন। আর আইনটির ১৩ ও ৩৩ ধারা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালের ১৫ জুন আরেকটি রিট করেন পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আব্দুল আজিজসহ তিন উপজেলা চেয়ারম্যান। ওই বছরই আগস্টে উপজেলা পরিষদ আইনের ২৯ ও ৩৩ ধারা চ্যালেঞ্জ করে আরেকটি রিট করেন বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মিনহাদুজ্জামান লীটন। তিনটি রিটেই ৩৩ ধারার বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে পরিষদের ‘মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা’ ঘোষণার ৩৩ ধারা কেন অসাংবিধোনিক ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে। মন্ত্রী পরিষদ সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব ও আইন সচিবসহ বিবাদিদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এসব রুল একীভুত করে চূড়ান্ত শুনানির পর গত ২৯ মার্চ রায় দেন হাইকোর্ট।