স্টাফ রিপোর্টার::
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোহনপুর ও কাঠইর ইউনিয়ন নিয়ে বিস্তৃত ডাকুয়ার হাওরের পানি নিষ্কাশনের কান্দাগাওয়ের খাল খনন না করে ২০১৮ সনে অপরিকল্পিত বাধ দেওয়ায় এখন মওসুমের শুরুতে পূর্বাংশে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে মোহনপুর, শান্তিপুর, পৈন্দা, নোয়াগাঁও, কান্দাগাঁওসহ ৫ গ্রামের কৃষকরা পরষ্পর মুখোমুখি অবস্থানে আছেন। পূর্বাংশে জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ায় নোয়াগাঁও-কান্দাগাঁওয়ের কৃষকরা পানিনিষ্কাশনের জন্য বাঁধ কেটে দিতে চাইলে পশ্চিমের অংশের মোহনপুর, শান্তিপুর গ্রামের কৃষকরা প্রতিরোধের প্রস্তুতি নেন। এ নিয়ে দুই ৫ গ্রামের কৃষক মাইকিং করে পরষ্পরের মুখোমুখি অবস্থানে গেলে হাঙ্গামার ভয়ে সচেতন লোকজন প্রশাসনকে বিষয়টি অবগত করেন। শুক্রবার দুপুরে সদর উপজেলা এসিল্যান্ড এমদাদুল হক শরিফ ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধান দিয়ে এসেছেন। তিনি পূর্বাংশের কিছু পানি নিষ্কাশনের জন্য বাধের নিচে দেওয়া ৬ ইঞ্চি পাইপ খুলে দিয়ে পূর্বাংশের কিছু পানি কমানোর আহ্বান জানালে দুই পক্ষই বিষয়টি মেনে নেয়। শুক্রবার দুপুরে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে এভাবেই সমাধান দিয়ে এসেছেন। তবে পূর্বাংশের পানি কিছটা নিষ্কাশিত হওয়ার পর পাইপের মুখ আবার বন্ধ করে দেয়ার দায়িত্ব দিয়ে এসেছেন মোহনপুর ও কাঠইর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যনকে। এসময় স্থানীয় কৃষকরা কান্দাগাও খালের দখলদারদের উচ্ছেদ করে খালটি খনন করে হাওরের পানি নিষ্কাশনের স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়েছেন।
কৃষকরা জানান, ২০১৭ সালে ডাকুয়ার হাওরের মাঝামাঝি স্থানে অপরিকল্পিতভাবে মোহনপুর-কান্দাগাঁও অংশে বেড়িবাধ দেওয়া হয়। তাছাড়া বৈষবেড় ও কলাইয়া অংশের পানিও এসে ডাকুয়ার হাওরের পূর্বাংশে চাপ তৈরি করছে। অতীতে এই হাওরের পূর্বাংশের পানি কান্দাগাও খাল দিয়ে নিষ্কাশিত হতো। কিন্তু প্রভাবশালীরা খালটি দখল করায় এবং বিভিন্ন স্থানে ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন আর পানি নিষ্কাশন হচ্ছেনা। ফলে ডাকুয়ার হাওরের পূর্বাংশে প্রতি বছর স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এসময় গোপনে পূর্বাংশের কৃষকরা বাঁধ কেটে দিলে পশ্চিমাংশের হাওরের ফসল ঝূঁকির মুখে পড়ে যায়। এতে একই হাওরের দুই এলাকার কৃষকরা মুখোমুখি অবস্থানে চলে আসেন। এ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডও বিব্রত থাকে। কৃষকরা জানান, কান্দাগাঁও খালটি উদ্ধার করে খনন করে দিলেই এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়ে যাবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে প্রতি বছরই এই মওসুমে ডাকুয়ার হাওরে এই সমস্যা দেখা দেয়। কৃষকদের দাবির প্রেক্ষিতে চলতি অর্থ বছর এই হাওরের ফসল রক্ষায় ডাকুয়ার হাওরের পানি নিষ্কাশনের জন্য কান্দাগাঁও খাল খননের একটি প্রকল্প জমা দেয় সদর উপজেলা কাবিটা মনিটরিং ও বাস্তবায়ন কমিটি। কিন্তু জেলা কমিটি এই প্রস্তাবটি বাতিল করে দিলে কাজের অগ্রগতি থেমে যায়। যার ফলে খাল খনন করা সম্ভব হয়নি।
শুক্রবার সরেজমিন এই সমস্যার সাময়িক সমাধান করতে গেলে এসিল্যান্ডকে ঘিরে ধরেন স্থানীয় কৃষকরা। তারা অচিরেই এই খাল খনন করে স্থায়ী সমাধানের দাবি জানান। এই দুই পক্ষই উত্তেজিত ছিল। এসময় এসিল্যান্ড এমদাদুল হক শরিফ স্থানীয় কৃষকদের কথা দেন তিনি অফিসে গিয়ে পুরনো কাগজপত্র বের করে এবং খননের প্রস্তাবের সকল কাগজপত্র বের করে জেলা প্রশাসককে এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে অনুরোধ জানাবেন। এর আগ পর্যন্ত দুই পক্ষকে শান্তিপূর্ণ ও সহঅবস্থানে থেকে ফসলের সুরক্ষায় আন্তরিকভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি পাইপের মুখ সাময়িকভাবে খুলে দিয়ে পানি নিষ্কাশনের আহ্বান জানালে উভয় পক্ষের কৃষকরাই মেনে নেন।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পাউবোর এসো আশরাফুল সিদ্দিকী বলেন, প্রতি বছরই ডাকুয়ার হাওরের ফসল ওঠার আগে পানিনিস্কাশন নিয়ে দুই এলাকার কৃষক মুখোমুখি চলে আসেন। আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে এসে সাময়িক সমাধান করে যাই। কৃষকদের দাবির প্রেক্ষিতে আমরা এবারও কান্দাগাঁও নদী খননের প্রকল্প জমা দিয়েছিলাম। অনুমোদন না হওয়ায় কাজ হয়নি।
উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা এমদাদুল হক শরিফ বলেন, আমি দুই পক্ষের উত্তেজনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে এসে কৃষকদের বুঝিয়ে আপাতত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দিয়ে এসেছি। উভয় পক্ষ উত্তেজিত থাকলেও তারা মেনে নিয়েছেন। এখন পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে। তবে এর স্থায়ী সমাধান দরকার। তাই আমি খালের কাগজপত্র বের করে খননের উদ্যোগ নিতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করবো।