হাওর ডেস্ক::
বাংলা চলচ্চিত্র চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের মরদেহ ঢাকায় পৌঁছেছে। মঙ্গলবার (১৬ মে) সকালে একটি বিশেষ ফ্লাইটে সিঙ্গাপুর থেকে তার মরদেহ ঢাকায় পৌঁছায়।
ইউএস-বাংলার বিএস-৩০৮ ফ্লাইটটি সিঙ্গাপুর থেকে নায়ক ফারুকের মরদেহ নিয়ে সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ফ্লাইটটি সিঙ্গাপুরের স্থানীয় সময় ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে উড্ডয়ন করে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে।
অভিনেতা ফারুক দীর্ঘদিন সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। প্রায় আট বছর ধরে এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। সর্বশেষ ২০২১ সালের মার্চ মাসের প্রথম দিকে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সিঙ্গাপুরে যান তিনি। সে সময় পরীক্ষায় রক্তে সংক্রমণ ধরা পড়ে তার। এরপর থেকেই শারীরিকভাবে অসুস্থতা অনুভব করছিলেন তিনি। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে।
হাসপাতালে ভর্তির কয়েক দিন পর তার মস্তিষ্কেও সংক্রমণ ধরা পড়ে। সেখানে তার চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব চিকিৎসা ব্যর্থ করে সোমবার (১৫ মে) সিঙ্গাপুর স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
গত ফেব্রুয়ারিতেই দেশে ফেরার কথা ছিল অভিনেতা ও সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে দুই বছর ধরে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। তবে তার মন পড়ে থাকত বাংলাদেশে। দেশে ফেরার জন্য উদগ্রীব ছিলেন তিনি। ফারুকের স্ত্রী ফারহানা পাঠান গত জানুয়ারিতে জানিয়েছিলেন, ‘দেশে আসার জন্য ফারুক উদগ্রীব। জমে আছে সংসদীয় এলাকার অনেক কাজকর্ম। দেশে ফিরে কাজগুলো সারবেন বলেছেন।’
২০২১ সালের ৪ মার্চ নিয়মিত চেকআপের জন্য সিঙ্গাপুর যান অভিনেতা ও ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য ফারুক। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উচ্চ রক্তচাপ, মস্তিষ্ক, স্নায়ুতন্ত্রের নানা সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। ছিল পুরনো বেশ কিছু শারীরিক জটিলতাও।
১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন ফারুক। এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে ঢাকাই সিনেমায় তার অভিষেক ঘটে। প্রথম সিনেমায় তার বিপরীতে নায়িকা ছিলেন কবরী। এরপর ১৯৭৩ সালে খান আতাউর রহমানের পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ও ১৯৭৪ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘আলোর মিছিল’ নামে দুটি সিনেমায় পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
অভিনয়ের জন্য ১৯৭৫ সালে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন তিনি। ২০১৬ সালে ভূষিত হন আজীবন সম্মাননায়।
তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘সারেং বৌ’, ‘লাঠিয়াল’, ‘সুজন সখী’, ‘নয়নমনি’, ‘মিয়া ভাই’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সাহেব’, ‘আলোর মিছিল’, ‘দিন যায় কথা থাকে’ ইত্যাদি। ‘মিয়া ভাই’ চলচ্চিত্রের সাফল্যের পর তিনি চলচ্চিত্রাঙ্গনে ‘মিয়া ভাই’ হিসেবে খ্যাতি পান।