হাওর ডেস্ক::
বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকার, বিরোধী দলসহ সব পক্ষকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হতে পারে—বিভিন্ন মহলের এমন জল্পনাকল্পনার মধ্যে গতকাল বুধবার রাত ১১টার পর এই ঘোষণা এলো।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন ওয়াশিংটনে বলেছেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যে বা যারা বাধা দেবে, তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে যুক্তরাষ্ট্র। সরকারি দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, সরকারের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ সবার জন্য এই ব্যবস্থা প্রযোজ্য হবে।
অ্যান্টনি ব্লিনকেন টুইট বার্তায় বাংলাদেশের জন্য মার্কিন ভিসা নীতি প্রসঙ্গে বলেছেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উৎসাহিত করতে তিনি ওই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছেন। এই নীতির আওতায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার জন্য দায়ী বা সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপরও ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার নিয়মিত ব্রিফিংয়ের শুরুতে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন উৎসাহিত করতে মার্কিন ভিসা নীতি পড়ে শোনান। ভিসা নীতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যকে সহায়তা করতে অভিবাসন ও জাতীয়তা আইনের ধারা ২১২(ধ)(৩)(ঈ) (“৩ঈ”)-এর অধীনে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করা হলো।
এই নীতির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত যেকোনো বাংলাদেশি ব্যক্তির ভিসা প্রদানে বিধি-নিষেধ আরোপ করতে পারবে।
আগেই জানত বাংলাদেশ সরকার : যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেন বলেন, নতুন এই ভিসা নীতির মধ্যে বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা/কর্মচারী, সরকারপন্থী ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র গত ৩ মে বাংলাদেশ সরকারকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে বলে ব্লিনকেনের বার্তায় উল্লেখ করা হয়।
যেসব কাজকে বাধা হিসেবে দেখবে যুক্তরাষ্ট্র : গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে, এমন কাজের মধ্যে রয়েছে ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয়-ভীতি দেখানো, সহিংসতার মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগে বাধা দেওয়া।
এ ছাড়া বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক দল, ভোটার, নাগরিক সমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখা।
সুষ্ঠু ভোটের দায়িত্ব সবার : ব্লিনকেন বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব ভোটার, রাজনৈতিক দল, সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী, সুধীসমাজ, গণমাধ্যমসহ সবার। যারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায়, তাদের সবাইকে আমাদের সমর্থন দিতে আমি এই নীতি ঘোষণা করছি।’
নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি, হুঁশিয়ারি দিয়েছে : ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেন, এই ঘোষণার মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। তবে নতুন নীতির ফলে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের যে ক্ষমতা আছে, তা জানানো হয়েছে।
মুখপাত্র বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে বার্তা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘সামরিক বাহিনী, বিচার বিভাগসহ সবার জন্য বার্তাটি হলো, জবাবদিহি করানোর ক্ষমতা আমাদের আছে। অনিয়মের প্রমাণ পেলেই আমরা ব্যবস্থা নেব।’
সরকার বিচলিত নয় : জানতে চাইলে গত রাতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি নিয়ে বাংলাদেশ সরকার বিচলিত নয়। কারণ সরকার নিজেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ।
শাহরিয়ার আলম বলেন, প্রথমত এটি সরকারের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নয়। এতে বরং বিএনপিরই উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। কারণ নির্বাচনের সময় বা আগে-পরে সহিংসতাও ভিসা বিধি-নিষেধের আওতায় পড়ছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির বিষয়ে সরকার আজ বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দিতে পারে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, আমেরিকার এই সিদ্ধান্ত নেতিবাচক কিছু নয়। তারা স্বাধীন রাষ্ট্র। তাদের দেশে কাকে ভিসা দেবে, না দেবে নিতান্তই তাদের বিষয়। তবে একটি স্বাধীন দেশ, অন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের বিষয়ে এ ধরনের মন্তব্য করাটা শিষ্টাচারের আওতা অতিক্রম করে।
সুষ্ঠু নির্বাচনে সহায়ক হবে, ভাবছে বিএনপি : যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এটি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির একটি অংশ। যেসব দেশে নির্বাচন নিয়ে কারচুপি হয়, সেসব দেশে যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। আমি মনে করি, এই ঘোষণা বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সহায়ক হবে।’
সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ বাড়বে : এই নীতি ঘোষণার ব্যাখ্যা জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের বাংলাদেশ ও এশিয়া বিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা জেফরি ম্যাকডোনাল্ড গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য চাপ বৃদ্ধি করবে।