হাওর ডেস্ক::
গণতন্ত্র, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন আগেই ছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নতুন করে অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে আজ শনিবার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ে বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ ও চীন। গতকাল শুক্রবার ঢাকায় এসেছেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার সুন ওয়েইডং।
তিনি বৈঠকে চীনা প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এ বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হবে। সমসাময়িক আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয় আলোচনায় আসতে পারে।
বিশেষ গুরুত্ব পেতে পারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের সহযোগিতা। এ ছাড়া চীনের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভে (জিডিআই) বাংলাদেশের যোগ দেওয়ার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক নিয়েও আলোচনা করা হতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, বৈঠকে উচ্চ পর্যায়ের সফর নিয়ে আলোচনা করা হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ বছরই বেইজিং সফরের আমন্ত্রণ জানাতে চায় চীন।
শেখ হাসিনা ২০১৯ সালে সর্বশেষ চীন সফরে গিয়েছিলেন। এই সফরে চীনের ভাইস মিনিস্টার ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। তিনি পদ্মা সেতু পরিদর্শনেও যাবেন।
চীনের ভাইস মিনিস্টারের এই সফর পূর্বনির্ধারিত হলেও সময় এবং প্রেক্ষাপট বিবেচনায় একে তাৎপর্যপূর্ণ বলছে কূটনৈতিক সূত্রগুলো। এটি হবে চলতি বছরে চীন থেকে বাংলাদেশে উচ্চ পর্যায়ের তৃতীয় সফর।
চীন থেকে উচ্চ পর্যায়ের তিনটি সফরের কাছাকাছি সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে বা বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন পর্যায়ে সফর হয়েছে বা কোনো ঘটনা ঘটছে। বিশ্লেষকদের বিবেচনায় এ বিষয়টিও আছে।
গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় থাকা রুশ জাহাজ বাংলাদেশ, ভারতে ভিড়তে না পেরে চীনের উদ্দেশে যাত্রা করেছিল। গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লুর ভারত ও বাংলাদেশ সফরের প্রাক্কালে ঢাকায় যাত্রাবিরতি এবং বিমানবন্দরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিন গ্যাং। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সেটিই ছিল ছিন গ্যাংয়ের প্রথম বিদেশ সফর।
গত এপ্রিলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন যখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেনের সঙ্গে বৈঠকের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখন হঠাৎ চীনের বিশেষ দূত দেং সিজুনের সফরের কথা জানতে পারে বাংলাদেশ। ঝটিকা সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে বৈঠক করে ফিরে যান তিনি। বিষয়টি পরে জানাজানি হয়। তখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, ওই সফরে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। মিয়ানমারের ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর চাপ বাড়ছে। রোহিঙ্গা জেনোসাইডের অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলা চলছে। আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের (আইসিসি) কৌঁসুলির দপ্তরও অভিযোগ অনুসন্ধান করছে। দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায় চীন।
এ মাসের মাঝামাঝি যখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে নতুন নিষেধাজ্ঞা বা বিধি-নিষেধের গুঞ্জন চলছিল তখন ভাইস মিনিস্টার সুন ওয়েইডংয়ের সফর প্রস্তাব করে চীন। তাঁর এই সফরের দুই দিন আগে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করল। তাতে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জানায়।
যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালে গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি। এ নিয়ে যখন বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা চলছিল তখন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রশংসা করে বিবৃতি দিয়েছিলেন ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত। কোনো দেশের রাজনৈতিক ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে ওই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় মনে করে চীন। এ ক্ষেত্রে বাইরের কারো হস্তক্ষেপকে চীন সমর্থন করে না বলে বিবৃতিতে বলা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন কোয়াডসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা ও কৌশলগত উদ্যোগ নিয়ে চীনের উদ্বেগ আছে। চীন মনে করে, চীনের উত্থান ঠেকাতেই যুক্তরাষ্ট্র তার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল সাজিয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে গত এপ্রিলে বাংলাদেশও নিজস্ব ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা ঘোষণা করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এখানে যুক্তরাষ্ট্র, চীন- দুই পক্ষেরই স্বার্থসংশ্লিষ্ট কিছু না কিছু আছে। বাংলাদেশ ২০১৬ সালে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে (বিআরআই) যোগ দিয়েছে। চীন তার বিআরআইয়ের আওতায় কানেক্টিভিটির অংশ হিসেবে পদ্মা সেতুকে দেখিয়ে থাকে। পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের ঠিকাদার ও ঋণদাতাও চীন।