স্টাফ রিপোর্টার::
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষকদের অনলাইন বদলি নীতিমালা ভঙ্গ করে তাহিরপুর থেকে শাল্লায় বদলির আদেশ পাওয়া শিক্ষিকা রোমানা আক্তারের বদলিজনিত যোগদান না করানোর একাধিক আবেদনের পরও যোগদানের আদেশ দিয়ে তাকে যোগদান করিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এসএম আব্দুর রহমান। রোমানা আক্তার নামের ওই শিক্ষিকার অবৈধ বদলি ঠেকাতে বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান প্রীতম দাস ইউএনও বরাবর লিখিত আবেদন করেছিলেন। ইউএনও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারসহ অধিদপ্তরে লিখলেও বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসকে যোগদানের জন্য চাপ সৃষ্টি করে তাকে বাধ্য করেছেন যোগদান করাতে।
জানা গেছে সম্প্রতি তাহিরপুর উপজেলার সোহালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক তথ্য গোপন করে নেত্রকোণা জেলার খালিয়াজুড়ি উপজেলায় বদলির বদলে শাল্লা উপজেলার মাহমুদ নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলির আদেশ পান। এই বদলিতে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করেন তাহিরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। এই বদলির আদেশ ও যোগদানের ফলে আগামী শিক্ষক নিয়োগে শাল্লা উপজেলার একটি সহকারি শিক্ষকের পদ স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনা অবগত হয়ে শাল্লা উপজেলার চাকুয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান প্রীতম দাশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন মামুদ নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পদ না থাকার পরও বাইরের জেলার বদলির দাবিদার রোমানা আক্তারকে বড়ো অংকের ঘুষের বিনিময়ে শাল্লায় বদলি করা হয়েছে। ওই আবেদনের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই শিক্ষিকার স্বামীর খালিয়াজুড়ি কলেজের কর্মস্থলের কাগজপত্র, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানার কাগজপত্র, বিয়ের কাগজপত্র দিয়ে অনৈতিক এই বদলি ঠেকানোর জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের লিখিত চিঠি দেন। কিন্তু এই আবেদন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের আবেদন অবজ্ঞা করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম আব্দুর রহমান বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের আবেদনের দিনেই অধিদপ্তরের একটি দুর্নীতিবাজ চক্রের সঙ্গে যোগসাজসে ওই দিনই শিক্ষিকা রোমানা আক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে শাল্লা উপজেলার গঙ্গানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অর্ডার করিয়ে নিয়ে আসেন। পরে ১ জুন জেলা শিক্ষা অফিসার ওই শিক্ষিকাকে দ্রুত গঙ্গানগরে যোগদানের জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে লিখিত আদেশ দেন। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার এই আদেশ পেয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গত ৪ জুন ওই শিক্ষিকাকে শাল্লার গঙ্গানগরে যোগদান করিয়ে নেন। এর ফলে আগামী শিক্ষক নিয়োগে শাল্লা উপজেলার সহকারি শিক্ষকের একটি পদ স্থায়ী ভাবে বন্ধ হয়ে গেলে। এতে বঞ্চিত হবেন শাল্লার চাকুরিপ্রার্থীরা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান প্রীতম দাস বলেন, আমি বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দেশ ও এলাকার স্বার্থ দেখে লিখিত আবেদন করেছিলাম। বদলি নীতিমালা ভঙ্গ করে, তথ্য গোপন করে একজন শিক্ষিকা খালয়াজুরির বদলে শাল্লায় বদলির আদেশপ্রাপ্ত হয়েছেন। এই বিষয়টি জানার পর আমি শাল্লার চাকুরিজীবীদের স্বার্থে তাকে যোগদান না করানোর জন্য লিখিত আবেদন করি। কিন্তু দুর্নীতিবাজ চক্র আমার আবেদনের দিনেই অধিদপ্তর থেকে একটি আদেশ নিয়ে আসে। পরে জেলা শিক্ষা অফিসারও লিখিত আদেশ দেন ওই শিক্ষিকাকে যোগদান করাতে। এই অনৈতিক বদলি ও যোগদান না ঠেকিয়ে উল্টো তাকে অন্য বিদ্যালয়ে যোগদানের আদেশ দিয়েছেন জেলা শিক্ষা অফিসার। শাল্লার স্বার্থ বিঘিœত হওয়ায় আমি এ বিষয়ে মামলা করবো।
শাল্লা উপজেলা শিক্ষা অফিসার তাপস রায় বলেন, গত ১ জুন ডিপিইও স্যার অধিদপ্তরের আদেশ উল্লেখ করে ওই শিক্ষিকাকে যোগদান করানোর নির্দেশনা দেওয়ার পর আমি ৪ জুন যোগদান করিয়েছি। একই সঙ্গে অনৈতিকভাবে বদলির আবেদন করে আদেশ পাওয়ার ঘটনায় লিখিত অভিযোগ করায় সেটিও তদন্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে শিগ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।