মনিকা দাশ মনি::
নব্বই দশকে ভিন্নধারার আধুনিক বাংলা গানে তুফান তুলা শিল্পী সুমন চট্টপাধ্যায় সঙ্গীতে যন্ত্রশিল্পীদের অবদান স্বীকার করে বলেছিলেন, ‘গানের জগৎটা, বিশেষ করে আধুনিক যুগে যন্ত্রসঙ্গীতের অবদানে প্রতিদিন সমৃদ্ধ হয়। অথচ যন্ত্রশিল্পীরা কণ্ঠশিল্পীদের সমান মর্যাদা পাননা। কিন্তু ভেবে দেখুনতো, ভালো যন্ত্রশিল্পীরা না থাকলে কণ্ঠ শিল্পীরা কতটা অসহায়’। সুমন যন্ত্রশিল্পীদের ‘সহশিল্পী’ আখ্যা দিয়ে তখন একটি কালজয়ী গানও বেধেছিলেন। ‘সহ শিল্পীরা এসো/গোল হয়ে গেলে হেসো/পৃথিবীকে বলি যন্ত্রকে আর যন্ত্রীকে ভালোবেসো।’ সুমনের নমস্য সেই পরম্পরা যাপনকারী সহশিল্পীরা গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমির হাসনরাজা মিলনায়তনে যন্ত্রের ঝঙ্কারে মাতিয়েছেন বোদ্ধা শ্রোতাদের। তবলা, গিটার, ঢোল, বেহালা, দোতারা, যুগল বংশি, কিবোর্ড, বাঁশি, হারমোনিয়াম, মন্দিরাসহ নানা বাদ্যযন্ত্রে সন্ধ্যাটা জমিয়ে তুলেছিলেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত জেলা শিল্পকলা একাডেমির হাসন রাজা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত যন্ত্রসঙ্গীত উৎসবের উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. রেজাউল করিম। পরে প্রধান অতিথি হিসেবেও তিনি বক্তব্য দেন।
সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির সহ-সভাপতি বিজন সেনরায়ের সভাপতিত্বে ও জেলা কালচারাল অফিসার আহমেদ মঞ্জুরুল হক চৌধুরী পাভেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত যন্ত্রসঙ্গীত উৎসবে প্রবন্ধ পাঠ করেন দেবদাস চৌধুরী রঞ্জন। আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন দৈনিক সুনামকণ্ঠের সম্পাদক ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির সহসভাপতি বিজন সেন রায়, সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মনোনীত জেলা শিল্পকলা একাডেমির কার্যনির্বাহী সদস্য শামস শামীম। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অলক ঘোষ চৌধুরী, অঞ্জন চৌধুরী, বিখ্যাত বংশীবাদক কুতুব উদ্দিন।
উৎসবে সিনিয়র ও জুনিয়র তবলচিরা আলাদাভাবে তবলার লহড়া প্রদর্শন করেন। উপমহাদেশের প্রখ্যাত বংশিবাদক কুতুব উদ্দিন তার ছেলে আদিলকে নিয়ে বাঁশি বাজিয়ে শ্রোতাদের মোহাবিষ্ট করে রাখেন। এছাড়াও দেবদাস চৌধুরী রঞ্জন, বাউল তসকির আলী, সন্তোষ চন্দ, উত্তম দাশ, কপিল ঋষি, শৈলেন দাস, জাকির হোসেন, তাজু সরকার, নিজাম, মালেক, রফিক, আবু সালেক, মাহবুব, সীমান্ত চন্দ কাব্য নানা যন্ত্রে তাদের যাদুকরি পরিবেশনা উপস্থাপন করেন। নতুন প্রজন্মের গিটারিস্ট অনুপম প্রতীক, আবুল হাসনাত সুমন, আদিত ঘোষ চৌধুরী, অর্ণব দে, মাহি, অহি, তম্ময় গীটারের সুরে সুরে মাতিয়ে রাখেন দর্শকদের।
তবলা, গিটার, ঢোল, বেহালা, দোতারা, যুগল বংশি, কিবোর্ড, বাশি, হারমোনিয়াম, মন্দিরা, তবলার সমন্বয়ে কমপোজিশনও উপস্থাপন করেন যন্ত্রীরা। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শ্রোতারা উপভোগ করেন যন্ত্র উৎসব।
জেলা কালচারাল অফিসার আহমেদ মঞ্জুরুল হক চৌধুরী পাভেল বলেন, যন্ত্র উৎসবে জেলার প্রবীণ ও নবীণ প্রায় ৮০ জন গুণী যন্ত্রীকে উৎসবে অংশ নিয়ে অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করেছেন। ৮টি ইভেন্টে তারা বাদ্যযন্ত্র পরিবেশন করেন। আগামীতেও জেলা শিল্পকলা একাডেমি এ ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তৃণমূলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা যন্ত্রীদের তুলে আনবে।