হাওর ডেস্ক::
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে যশোরের বাঘারপাড়ার আমজাদ হোসেন মোল্লাসহ চার আসামির মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।
বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রোববার এ মামলার রায় ঘোষণা করে।
দণ্ডিত অন্যরা হলেন- ওহাব মোল্লা, মাহতাব বিশ্বাস ও ফছিয়ার রহমান মোল্লা।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর আইনজীবী সাহিদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এটি ট্রাইব্যুনালের ৫২তম রায়।
ট্রাইবুনালের অন্য দুই বিচারক হলেন বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম।
১৬৯ পৃষ্ঠার রায়ের প্রথমাংশ পাঠ করেন বিচারপতি হাফিজুল আলম। দ্বিতীয়াংশ পাঠ করেন বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার। রায়ের মূল অংশ পাঠ করেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ওই সময়ে যারা নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছে, তারা মানবতার শত্রু।
রায় ঘোষণাকালে এ মামলায় গ্রেপ্তার একমাত্র আসামি আমজাদ হোসেন মোল্লা আসামির কাঠগড়ায় বসা ছিলেন।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, মো. সাহিদুর রহমান, তাপস কান্তি বল, সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি ও রেজিয়া সুলতানা চমন উপস্থিত ছিলেন। আর আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট গাজী এম এইচ তামিম।
আসামিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের চারটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ছয়জনকে হত্যা, আটক, নির্যাতনের প্রমাণ উঠে এসেছে। এ কারণে ট্রাইব্যুনাল চার আসামিকে ফাঁসির রশিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্দেশ দিয়েছে।
এর আগে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক সানাউল হক জানিয়েছিলেন, যশোর বাঘারপাড়া থানার প্রেমচারা গ্রামের মৃত সোবহান মোল্লার ছেলে আমজাদ হোসেন মোল্লা বাঘারপাড়া থানার রাজাকার কমান্ডার ছিলেন।
১৯৭১ সালে মুসলিম লীগে যুক্ত ছিলেন আমজাদ। তবে কয়েক বছর আগে গ্রেপ্তার হওয়ার সময় তিনি আওয়ামী লীগে যুক্ত ছিলেন।
প্রসিকিউশন থেকে জানানো হয়েছে, দণ্ডিতদের মধ্যে কেবল আমজাদই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। বাকি তিনজন পলাতক। এর আগে মামলায় আসামি ছিলেন পাঁচজন। তাদের মধ্যে নওশের আলী নামের একজন মারা গেছেন।
যুদ্ধাপরাধ: যশোরের ৫ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত
২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল এ মামলার তদন্ত শুরু হয়, ২০১৮ সালের ১৬ এপ্রিল তা শেষ হয়। যশোর জেলা প্রশাসকের দেওয়া রাজাকারদের তালিকাতেও আসামিদের নাম রয়েছে।
গত ১১ মে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে যশোরের বাঘারপাড়ার মো. আমজাদ হোসেন মোল্লাসহ চার আসামির বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়।
এরপর রোববার এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।
যে চার অভিযোগ প্রমাণিত হলো
অভিযোগ-১: ১৯৭১ সালের ৩ ভাদ্র বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বাঘারপাড়া থানার উত্তর চাঁদপুর গ্রামের মো. ময়েনউদ্দিন ওরফে ময়নাকে তার বাড়ি থেকে আটক করে প্রেমচারা রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায় আসামি মো. আমজাদ হোসেন মোল্লা ও তার সহযোগীরা।
সেখানে তিনদিন আটক রেখে নির্যাতন করে ৬ ভাদ্র বেলা ১২টার দিকে খুড়দা গ্রামের বিজয় দাশের দেবদারু বাগানে কুয়ার পাশে দাঁড় করিয়ে আসামি মো. আমজাদ হোসেন মোল্লা গুলি করে হত্যা করে ময়নাকে।
অভিযোগ-২: ১৯৭১ সালের ২০ জুলাই বেলা ১টার দিকে আসামি আমজাদ হোসেন মোল্লা ও তার সহযোগীরা বাঘারপাড়া খাজুরা বাজার থেকে ডা. নওফেল উদ্দিন বিশ্বাসকে আটক করে প্রেমচারা রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পরদিন বেলা ১২টায় থানা সদরের মহিরাম গ্রামের মাঠে গুলি করে করে হত্যা করে।
অভিযোগ-৩: আমজাদ হোসেন মোল্লা ও তার সহযোগীরা ১৯৭১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সকাল ৮-৯টার দিকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তাকারী সুরত আলী বিশ্বাস, মোক্তার বিশ্বাসকে তাদের বাড়ি থেকে ধরে প্রেমচারা রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে তিনদিন নির্যাতনের পর ২৩ সেপ্টেম্বর বেলা ১২টার দিকে খুড়দা গ্রামের বিজয় দাশের দেবদারু বাগানে কুয়ার পাশে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে লাশ য়ায় ফেলে দেয়।
অভিযোগ-৪: মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের পার করে দেওয়ার কারণে মাগুরার শালিখা থানার সীমাখালী বাজার ঘাটের মাঝি রজব আলী বিশ্বাসকে ১৯৭১ সালের ১৫ অগাস্ট আসামি আমজাদ হোসেন মোল্লা ও তার সহযোগীরা ধরে নিয়ে যায়। পরে প্রেমচারা গ্রামের চিনারাশি আম বাগানে নিয়ে রজব আলী বিশ্বাসকে গলা কেটে হত্যা করে।