বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের দিরাই পৌর শহরের মহিলা মাদরাসায় মুহতামিমের (অধ্যক্ষ) বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগী ছাত্রীর পরিবার। গত ২০ জুলাই পৌর শহরের জনৈক প্রবাসীর এক কন্যা দিরাই পৌরসভার মজলিশপুর হালিমাতুস সাদিয়া (রাঃ) মহিলা মাদরাসার মুহতামীম মাওলানা আবদুল লতিফ ওরফে কালা হুজুর কর্তৃক শ্লীলতাহানীর শিকার হন ওই মাদরাসা ছাত্রী। পরিবার যাতে আইনী আশ্রয় নিতে না পারে প্রভাবশালী ওই মুহতামিম মাদরাসার অধীনস্থ কমিটিসহ বিভিন্ন মহলকে নিয়ে চাপ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী ছাত্রীর পরিবার। মুহতামিম ওই ছাত্রীর বাড়িতে তার ঘনিষ্ট আলেমদের পাঠিয়েও ওই ছাত্রীর পরিবারকে নিবৃত করতে না পেরে হুমকি ধমকিও দিচ্ছেন। গত ২৩ জুলাই রোববার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে হয়রানীর বর্ণণা দিয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন ছাত্রীর মামা। এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। এর আগেও ওই মাদরাসার মুহতামিমের যৌন হয়রানির শিকার হয়ে অনেক ছাত্রী মাদরাসা ছেড়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন পরিবারের লোকজন।
দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর দায়েরকৃত লিখিত আবেদন ও স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দিরাই পৌরসভার মজলিশপুর হালিমাতুস সাদিয়া (রাঃ) মহিলা মাদরাসায় মুহতামীম (অধ্যক্ষ) হিসেবে মাওলানা আবদুল লতিফ ওরফে কালা হুজুর দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্বে আছেন। প্রয়াত উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুছের জীবদ্দশায় ওই মাদরাসার গরু চুরি করে বিক্রির অভিযোগেও শালিস হয়েছিল ওই মাদরাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তিনি ছাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করার পাশাপাশি যৌন হয়রানি করেন প্রায়ই। তার উত্যক্তপণায় বিভিন্ন সময়ে মাদরাসা ছেড়ে চলে গেছে একাধিক ছাত্রী। নির্যাতিত ছাত্রীরা পরিবারের কাছে মুহতামিমের যৌন হয়রানির বিচার দিলেও লোকলজ্জার ভয়ে পরিবার আইনের আশ্রয় নেয়নি। এসব বিষয় মাঝে-মধ্যে প্রকাশ পেলে তার প্রভাব ও তার অধীনস্থ মাদরাসা পরিচালনা কমিটির তার প্রতি আনুগত্যের কারণে ওই মাদরাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা ব্যবস্থা নিতে পারছেন না।
লিখিত আবেদনে জানা যায়, গত ২০ জুলাই দিরাই পৌর শহরের এক প্রবাসীর কন্যা ওই মাদরাসার ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন ওই মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আব্দুল লতিফ। গত ২০ জুলাই তিনি ওই ছাত্রীকে একটি কক্ষে একা পেয়ে শ্লীলতাহীর চেষ্টা চালান। তার কবল থেকে মুক্ত হয়ে ওই ছাত্রী মাদরাসার অন্যান্য ছাত্রীদের কাছে ছুটে এসে রক্ষা পায়। ওই ছাত্রী বাড়িতে এসে তার মা ও মামাদের কাছে বিষয়টি অবগত করলে তারা মুহতামিমের সঙ্গে দেখা করে প্রতিবাদ করলে তিনি উল্টো হুমকি ধমকি দেন। পরে ওই ছাত্রীর পরিবার আইনী পদক্ষেপ নিতে চাইলে মাদরাসা পরিচালনা কমিটির লোকজন মুহতামিমের পক্ষ হয়ে আপসের চেষ্টা চালায়। কিন্তু ভুক্তভোগী পরিবার এিভাবে সমাধানের বিষয়টি প্রত্যাখান করলে স্থানীয় কয়েকজন আলেমের নেতৃত্বে ৮ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করে বিষয়টি সুরাহার দায়িত্ব দেয় মুহতামিমের অধীনস্থ পরিচালনা কমিটি। ৮ সদস্যের ওই কমিটি ভিকটিম ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে ছাত্রী ও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সত্যতা পায়। তারা আলাপ আলোচনা করে বিষয়টি নিষ্পত্তির চেষ্টা করলে ভুক্তভোগী পরিবার আইনের আশ্রয় নেওয়ার কথা জানিয়ে দেয়।
ঘটনা নিষ্পত্তিতে ভিকটিমের বাড়ি যাওয়া মাওলানা নূরউদ্দিন আহমদ জানান, ওই ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে আমরা তার ও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলি। আমাদের কাছে ঘটনাটি সত্য মনে হয়েছে।
কিন্তু তদন্ত কমিটির লোকজন একমত হতে না পারায় আমরা ব্যবস্থা নিতে পারিনি।
মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য ও দিরাই পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ইয়াহিয়া চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, আমরা বিষয়টি সঠিক ভাবেই শেষ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু একমত হতে পারি নাই। পরে শুনেছি ভিকটিম ছাত্রীর পরিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ভিকটিমের মা আলেয়া বেগম (ছদ্মনাম) বলেন, আমার স্বামী প্রবাসে থাকেন। আমি সন্তানদের নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকি। সেখান থেকেই আমার মেয়ে মাদরাসায় যেতো। মাদরাসার মতো দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে গিয়েও আমার মেয়ে মুহতামিমের লোলুপ দৃষ্টিতে পরেছে। আমরা তার বিচার চাই। মহিলা মাদরাসার প্রতি সরকারি নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান ওই মা।
ভিকটিমের মামা ও উপজেরা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগকারী বলেন, এই কালা হুজুর একজন চরিত্রহীন। মহিলা মাদরাসায় তিনি ছাত্রীদের অনৈতিক প্রস্তাব দেন এবং যৌন হয়রানি করেন। অনেক ছাত্রী তার উত্যক্তপণার কারণে মাদরাসা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। আমরা তার কঠিন শাস্তি চাই। এই দাবিতেই আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি। অভিযোগ করায় তিনি উল্টো হুমকি ধমকি দিচ্ছেন।
অভিযুক্ত মুহতামীম আবদুল লতিফ অভিযোগটিকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান মামুন বলেন, আমি এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি থানার ওসি সাবের সঙ্গেও কথা বলেছি। বিষয়টি গুরুত্বসহকারেই দেখছি।