হাওর ডেস্ক::
ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নকে বাংলাদেশ সর্বাধিক গুরুত্ব দেয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, “প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে দেশের উন্নতি হয়, আমরা সেটাই প্রমাণ করেছি। আমি মনে করি বিশ্বের জন্য এটা একটা দৃষ্টান্ত।”
বুধবার ভারতীয় ঋণে বাস্তবায়িত তিনটি প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
ভার্চুয়াল এ অনুষ্ঠানে আন্তঃদেশীয় আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেলপথ, খুলনা-মোংলা পোর্ট রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প এবং বাগেরহাটের রামপালে মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্টের দ্বিতীয় ইউনিটের উদ্বোধন করা হয়।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যৌথভাবে প্রকল্প তিনটি উদ্বোধন করেন। শেখ হাসিনা গণভবন থেকে এবং নরেন্দ্র মোদী তার দিল্লির বাসভবন থেকে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর যৌথ উদ্বোধন আমাদের দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের মধ্যকার অনন্যসাধারণ বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক সহযোগিতার বহিঃপ্রকাশ।
“বিগত বছরগুলোতে আমরা দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছি। যার মধ্যে রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধি, উন্নয়ন সহযোগিতা, সাংষ্কৃতিক মেলবন্ধন, এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগ সহজীকরণ ছাড়াও অনেক কিছু।
বিদ্যুৎ ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমাদের অর্জন দ্বিপক্ষীয় ক্ষেত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।”
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা নেওয়ার সময় বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সরকারের অগ্রাধিকার ছিল জানিয়ে সরকারপ্রধান এ দুটি খাতে সরকারের অর্জিত সাফ্যল্যের উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য ভারত সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
উদ্বোধন হওয়া তিনটি প্রকল্প উভয় দেশের জনগণের সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “এই প্রকল্পগুলো আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট আরো সাশ্রয়ী মূল্যে নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বিশেষ অবদান রাখবে।
“বিদ্যুৎ উৎপাদনে অন্যান্য ব্যয়বহুল উৎস থেকে আমাদের নির্ভরতাকে কমিয়ে নিয়ে আসবে। এই প্রকল্পটি গ্রিডের স্থিতিশীলতার পাশাপাশি সাশ্রয়ী নির্ভরযোগ্য ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে সহায়তা করবে।”
আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ দুই দেশের জনগণের মধ্যে, বিশেষ করে ভারতের উত্তর-পূর্বাংশের সঙ্গে সংযোগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধি করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের সহায়ক হবে বলে আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
খুলনা-মোংলা বন্দর রেল সংযোগ প্রকল্পটি মোংলঅ বন্দরকে বিদ্যমান রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করবে জানিয়ে তিনি বলেন, “এতে করে আমদানিকৃত পণ্যের কন্টেইনারগুলো রেলপথের মাধ্যমে সহজেই দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সাশ্রয়ীভাবে পরিবহন সম্ভবপর হবে।”
প্রমাণ হয়েছে, প্রতিবেশীর সঙ্গে বন্ধুত্ব উন্নয়নে সহায়ক: শেখ হাসিনা
প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ভারত সরকারের সহযোগিতাকে সাধুবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর, আর সেই সাথে চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট যাতে ভারত ব্যবহার করতে পারে, সেজন্য আমরা উন্মুক্ত করেছি। মোংলা ও চট্টগ্রাম পোর্ট আঞ্চলিক সহযোগিতার একটা ক্ষেত্র উন্মুক্ত করে দিয়েছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, গত ১৫ বছর ধরে ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল একটি দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
“বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম অর্থনীতির দেশ। আমাদের দেশে যে চরম দারিদ্র্যের হার ২৫.১ শতাংশ ছিল, তা ২০২২ সালে ৫.৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। মাথাপিছু আয় ৫৪৩ মার্কিন ডলার থেকে প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি করে ২ হাজার ৭৬৫ মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছি।
“আমাদের দেশটাকে নিয়ে আমাদের একটা স্বপ্ন আছে, লক্ষ্য আছে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমাদের সরকার অবকাঠামোগত উন্নয়নের ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছে।”
ভারতে অনুষ্ঠিত জি ২০ শীর্ষ সম্মেলনে দাওয়াত দেওয়ায় এবং দিল্লী সফরে উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব আরো সুদৃঢ় করতে ভারতের আন্তরিকতার জন্যও তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করার পাশাপাশি ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমা যৌথভাবে প্রযোজনা করায় ভারত এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।
আসন্ন দীপাবলী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং ভারতের জনগণকে অগ্রিম শুভেচ্ছা জানান তিনি।