বিশেষ প্রতিনিধি::
২০২২ সালে ভয়াবহ বন্যা ছিল সুনামগঞ্জে শতাব্দীর ভয়াবহ দুর্যোগ। জেলার ১২ উপজেলার ৯০ ভাগ বাসাবাড়ি-সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ও রাস্তাঘাট ডুবে গিয়েছিল। কৃষকের গোলার পাকা ধান নষ্ট হয়েছিল। ভয়াবহ দুর্যোগে বিদ্যুৎ গ্যাস ও মোবাইল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল সপ্তাবহ্যাপী। কিন্তু ২০২৩ কৃষিতে আশির্বাদ ডেকে এনেছিল হাওরের কৃষকের জন্য। বোরো ও আমনের বাম্পার ফলনের সঙ্গে হাওরের কৃষি উন্নয়নে দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান অনুমোদন দিয়ে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে গেছে। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (এটিআই) নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে জেলার শান্তিগঞ্জ ও জগন্নাথপুর উপজেলায়। হাওরের কৃষি উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানে বিরাট ভূমিকা রাখবে এই দুটি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। খাদ্য উদ্ধৃত্ত জেলায় আসছে নতুন বছরও আশির্বাবদ ডেকে আনবে বলে মনে করছেন কৃষকরা।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে সুনামগঞ্জে ছোট বড়ো মিলিয়ে ১৪২টি হাওর আছে। দেশের চাহিদার ৫ ভাগের এক ভাগ ধান উৎপাদিত হয় হাওরে। চলতি আমন মওসুমে জেলায় আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলায় ৮২ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তা ছাড়িয়ে আমন আবাদ হয়েছিল ৮৩ হাজার ৩৬৯ হেক্টর। যা থেকে প্রায় দুই লাখ ছয় হাজার টন ধান পাওয়া যাবে। যার বাজারমূল্য প্রায় ৯২৫ কোটি টাকা। এছাড়াও চলতি বছর জেলায় স্মরণকালের বোরো ফসলের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়েনি হাওরের ফসল। বছর ভালো হওয়ায় ধানের সঙ্গে সম্পূর্ণ খড় যা গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় তাও সংরক্ষণ করতে পেরেছেন কৃষক। এ বছর জেলার ১৪২টি ছোট বড়ো হাওরে ২ লাখ ২২ হাজার ৩০০ হেক্টরের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯৫ হেক্টর আবাদ হয়েছিল। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এখানে প্রায় নয় লাখ মে. টন ধান উৎপাদিত হয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রায় তিন লাখ মে.টন টন উদ্বৃত্ত থেকেছে। এবার হাওরে উৎপাদিত ধানের মূল্য প্রায় ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বেশি। তবে এবার বোরো মওসুমে কৃষি বিভাগের মতে লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে আরো ১০ হাজার মে.টন ধান বেশি উৎপাদিত হয়েছিল। এভাবে ২০২৩ হাওরের কৃষির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বাম্পার ফলনের সঙ্গে কৃষি উন্নয়নে দুটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান অনুমোদনও হাওরের কৃষির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন হাওর আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।
সুনামগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় চলতি বছর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। জগন্নাথপুর-রাণীগঞ্জ সড়কের পাশে এই ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ১৭৭ কোটি টাকা। এটির কাজ শেষ হলে হাওরের কৃষকের সন্তানরা কৃষিতে ডিপ্লোমা ডিগ্রি নিয়ে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি হাওরের কৃষির উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারবে। এছাড়াও সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে অনুমোদিত হয়েছে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। সুনামগঞ্জে এই প্রতিষ্ঠানটি অনুমোদনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি ছিল। অবশেষে চলতি বছর শান্তিগঞ্জে প্রাতিষ্ঠানিক অনুমোদন শেষে একটি ভাড়াটে অফিসে কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। হাওরের উন্নত ধান ও ফসল নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি মাঠ পর্যায়ে গবেষণা চালাবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এছাড়াও চলতি বছর শান্তিগঞ্জে ১০৩ কোটি টাকা ব্যয়ে শিল্প ও কারিগরি কেন্দ্র (বিটাক) নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক বিজন সেনরায় বলেন, ২০২৩ সাল হাওরের কৃষি উন্নয়নের জন্য বিরাট গুরুত্বের। স্মরণকালের বাম্পার বোরো ফসল হয়েছে। আমনেরও ভালো ফলন হয়েছে। তবে দুটি প্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় আমরা আনন্দিত। কাজগুলো যথাসময়ে ও যথা নিয়মে দ্রুত সম্পন্ন হলে আমাদের কৃষির জন্য উপকার নিয়ে আসবে।
সুনামগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, এটিআই ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে গত মাসে। হাওরাঞ্চলে কৃষি অর্থনীতির জন্য বিরাট গুরুত্ব নিয়ে আসবে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়াও ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটও হাওরের কৃষির সার্বিক উন্নয়নে বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসবে।