বিশেষ প্রতিনিধি::
রাত পোহালেই ভোট উৎসবে মাতবে হাওর জেলা সুনামগঞ্জের ৫টি নির্বাচনী আসনের প্রায় ২৭ লাখ মানুষ। জমজমাট প্রচারণার মাঠে ভোট যুদ্ধ শেষে ফলাফলের অপেক্ষায় প্রার্থী ও সমর্থকরা। রাত পোহালেই জেলার ১৯ লাখ ২২ হাজার ১৬৯ ভোটার ভোটপ্রয়োগ করবেন। নির্বাচন শেষে বিজয়ের হাসি হাসবেন ৫ প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। তবে এবার প্রচারকাজে তুচ্চ ঘটনা ছাড়া সংঘাত ও মারমুখি আচরণ ছিলনা প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে। এদিকে নির্বিঘেœ ভোট নিতে প্রশাসনিক নিরাপত্তার চাদরে ছেয়ে ফেলা হয়েছে নির্বাচনী এলাকা। নাশকতাকারীদের সামাজিক প্রতিরোধের পাশাপাশি প্রশাসনও তাদের ব্যাপারে কঠোর আছে। ফলে জেলায় বড়ো ধরনের কোন দুর্ঘটনা ঘটাতে পারেনি দুষ্কৃতিকারীরা। তারপরও প্রশাসন নির্বিগ্নে ভোট দিতে কঠোর থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
নির্বাচনী বিশ্লেষক ও সচেতন মহল জানিয়েছেন বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট হরতাল, অবরোধ, ভাংচুর, জ্বালাও-পোড়াও করেও নির্বাচনী ট্রেনকে প্রতিহত করতে পারেনি। সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় যথাসময়ে তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন সম্পন্ন করে সরকার। সারাদেশের ন্যায় আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দেন। যাছাই-বাছাই শেষে ও প্রার্থীতা সম্পন্ন করে ২৯জন প্রার্থী ভোটযুদ্ধে টিকে থাকেন। প্রতীক পাবার পর তারা প্রচারণায় নামেন। সুনামগঞ্জের ৫টি আসনের মধ্যে সবকটিতেই জমজমাট প্রচারণা ছিল। বিশেষ করে সুনামগঞ্জ, সুনামগঞ্জ-২, সুনামগঞ্জ-৩ ও সুনামগঞ্জ-৪ আসনে জমজমাট প্রচারণায় ছিলেন প্রার্থীরা। ১, ২ ও ৫ আসনে স্বতন্ত্রপ্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠ জমিয়ে রেখেছিলেন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জনসভা, জনসংযোগসহ নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। এবার সুনামগঞ্জ-১. সুনামগঞ্জ-২ আসনে তীব্র প্রতিদ্বন্ধিতা হবে বলে মনে করছেন রাজনীতি সচেতন মানুষজন। পাশাপাশি সুনামগঞ্জ-৪ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ড. মোহাম্মদ সাদিকের মধ্যে কিছুটা প্রতিদ্বন্ধিতা হলেও শেষ পর্যন্ত ভালো ভোটের ব্যবধানে মোহাম্মদ সাদিকই বিজয়ী হবেন। প্রচারণাকালে তার প্রতিটি নির্বাচনী জনসভায় সাধারণ মানুষদের ঢল নামতো। সুনামগঞ্জ-৫ আসনে মুহিবুর রহমান মানিকের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম আহমদ চৌধুরী কিছুটা প্রতিদ্বন্ধিতা করলেও শেষ পর্যন্ত মানিকই ভোটযুদ্ধে এগিয়ে থেকে বিজয়ী হবেন এমনটা জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মানুষজন। তবে জেলার একমাত্র নির্ভার প্রার্থী হিসেবে আছেন সুনামগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি। তিনি ভোটযুদ্ধে জমজমাট প্রচারণা চালিয়ে এখন বিজয়ের অপেক্ষায় আছেন।
প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গত কয়েকদিন ধরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাতভর কঠোর টহল দিচ্ছে। দুষ্কৃতিকারীরা যাতে ভোট কেন্দ্রের ক্ষতি না করতে পারে এবং নির্বিঘœ ভোট উৎসবে বাধা দিতে না পারে সে লক্ষ্যে ছক সাজিয়েই টহল বাড়ানো হয়েছে। তাছাড়া ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীসহ সচেতন ভোটাররাও দুষ্কৃতিকারীদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে আছেন। পাশাপাশি ভোট উৎসবে অংশ নিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসার কথা জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। ভোটের কাস্টিং যাতে ভালো হয় সে লক্ষ্যে দিনভর কাজ করার কথা জানিয়েছেন তারা।
৮৮টি ইউনিয়ন, ১২টি উপজেলা ও চারটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত ৫টি নির্বাচনী এলাকায় ৭০০টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে। নির্বাচনী বুথ রয়েছে ৪ হাজার ১২৯।
ভোটের নিরাপত্তায় ৫টি আসনে ১৯ প্লাটুন বিজিবি, দেড় হাজার পুলিশ, প্রায় ১ হাজার সেনা বাহিনী, ১২ প্লাটুন র্যাব, বিপুল সংখ্যক আনসার সদস্য রয়েছে। এছাড়াও ২৪টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, ৭৪টি মোবাইল টিম, ৩৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ১২ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বে রয়েছেন।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, অন্যান্য স্থানের মতো সুনামগঞ্জে নির্বাচনী প্রচারণা জমজমাট ছিল। কিছু বিচ্ছন্ন ঘটনা ছাড়া বড়ো ধরনের কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। তবে গত শুক্রবার রাতে কয়েকটি খড়ের ঘরে আগুন দেওয়া ও মধ্যনগরে একটি ভোট কেন্দ্রে আগুন দেয়ার ঘটনার পর আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যৌথ টহল জোরদার করেছে। আজ সারারাত কঠোর অবস্থানে থাকবে সবাই। আশা করি নির্বিঘেœ ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হবে।