বিশেষ প্রতিনিধি::
পরিবেশ ও প্রাণ প্রকৃতি রক্ষার স্বার্থে সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদী বালু মহাল সাময়িক ইজারা বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান। যাদুকাটা নদীকে রক্ষা করার জনন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ইজারা বাতিলের দাবি জানান তিনি। সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সুনামগঞ্জ সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত ‘হাওরের বাধ, কৃষি, নদী ও পরিবেশ সংকট’ বিষয়ক আলোচনাসভায় তিনি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন। উন্নয়ন সংগঠন এএলআরডি, বেলা ও পানি অধিকার ফোরাম আয়োজিত আলোচনাসভায় জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। হাওরের প্রাণ ও প্রকৃতির নানা সংকট তুলে ধরেন ভুক্তভোগী এলাকার মানুষেরা।
সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান তার বক্তব্যে বলেন, অবাধে যাদুকাটায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হচ্ছে। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কিভাবে বললে আপনারা বালু উত্তোলন বন্ধ করতে পারবেন। দয়া করে বালু উত্তোলনে কর্মসংস্থানের দোহাই দিবেন না। কারণ বালু উত্তোলনের ফলে মৎস্যজীবীরা ওখানে গিয়ে মাছ ধরতে করতে পারেনা। বালু উত্তোলনকারীদের সংখ্যা মৎস্যজীবীদের সংখ্যার চেয়ে অনেক কম। মৎস্যজীবীরা মাছ ধরে বাজারে যে মাছ বিক্রি করে সেই ভোক্তার পরিমাণ বালু উত্তোলনকারীদের চেয়ে অনেক বেশি। কেবল ফিতা দিয়ে মেপে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে পারবেননা। আপনারা জানেন, ফিতার মাপ ওরা মানবেনা। এজন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেন, দু বছরের জন্য ইজারা বন্ধ রাখেন।
তিনি সিলেটের জাফলং পাথর কোয়ারি বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা জাফলংয়ে অনেক সফলতা পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর দফতরও আমাদের পক্ষে ইন্টারফেয়ার করেছে। বলেছে এখানে পাথর উত্তোলন করা যাবেনা। কারণ ওখানে পর্যটকদের থেকে যে আয় হয় তা পাথর উত্তোলনের চেয়ে বেশি। কারণ পাথর উত্তোলনের টাকা কয়েকজনের পকেটে যায়। আর পর্যটকের টাকা যায় জাতীয় ট্রেজারিতে। যাদুকাটার অবস্থাও এমন হতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যাদুকাটা নদী পর্যটকদের কাছে একটি প্রিয় স্থান। সেখানেও পর্যটকরা আসলে বালু উত্তোলনের চেয়ে বেশি টাকা আসবে।
পার্শবর্তী টাঙ্গুয়ার হাওরের ট্যুরিজম বিষয়ে তিনি বলেন, হাওরে পাখি মারার বিষয়ে জনসেচতনতার পাশাপাশি আইনের প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে। টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকদের প্রবেশের নীতি প্রতিপালিত হচ্ছেনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু টাঙ্গুয়ার হাওর নয় হাওরের প্রাণ, প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার জন্য একই নিয়ম করতে হবে। হাওরে পর্যটক ও হাউসবোট নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এছাড়া যারা হাওর শুকিয়ে মাছ ধরে মাছের বংশ নষ্ট করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
আলোচনাসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুব আলম, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শামসুল করিম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. নজরুল ইসলাম।