স্টাফ রিপোর্টার::
সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. মোহাম্মদ সাদিক মহান দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশণে প্রথমবারের মতো বক্তব্য দিয়েছেন। তার বক্তব্যের সময় টেবিল চাপড়ে তাকে অভিনন্দন জানান অন্যান্য সংসদসদস্যবৃন্দ। তিনি তার সাবলীল বক্তব্যে চর্যাপদের কবিতা থেকে আধুনিক বাংলাসাহিত্যের দ্রোহি কবি সুকান্তের কবিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ বদলে যাওয়ার তুলনা দিয়েছেন। দেশ আন্তর্দেশে শেখ হাসিনা এক বিষ্ময়ের নাম বলে মন্তব্য করে সুনামগঞ্জ-৪ আসনের উন্নয়ন বঞ্চিত মানুষের বঞ্চনার চিত্র তুলে ধরেন। প্রথম বক্তব্যেই তিনি সুনামগঞ্জ সদরের ধারারগাঁও, পৈন্দা, ফতেপুর সেতুর কারণে ছিটমহলের মতো বসবাস করছেন বলে মন্তব্য করেন। তিনি এই আসনের জনগণের দাবিগুলো তুলে ধরেন। তিনি তার বক্তব্যে হাজার বছরের সংগ্রামী বাঙালি, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলন, ৭৫ সনের শহিদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে সুনামগঞ্জ-৪ আসনের জন্য তাঁর কর্মী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে পাঠানোর পর, সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুরের সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দ, নাগরিকগণ ও ভোটারগণ আমাকে বিপুল ভোটে জয়ী করেছেন, আমি তাদের কাছে গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যা আমাকে বেদনার সঙ্গে বলতে হচ্ছে, বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রার এই সময়ে সুনামগঞ্জ-৪ এলাকা প্রকৃত অর্থেই উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়ে আছে। উন্নয়নবঞ্চিত এই জনগোষ্ঠী রাজধানী থেকে দূরে স্তব্ধ হয়ে আছেন। অশ্রুসিক্ত মানুষ আমাকে যা বলেছেন, তা হলো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতায় সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় সুরমা নদীর ওপর ধারারগাঁও-হালুয়ারঘাট ব্রিজ চাই। মানুষের ক্রন্দনের ভাষা আমি এই মহান সংসদে উপস্থাপন করছি।
একটিমাত্র সড়কপথের মাধ্যমে সুনামগঞ্জ সারা বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত। এই ঝুঁকি থেকে সুনামগঞ্জকে মুক্ত করতে হলে ছাতক উপজেলা থেকে সুনামগঞ্জ জেলা সদর পর্যন্ত রেললাইন বিস্তৃত করা আবশ্যক। সুনামগঞ্জ শহর আজ সুরমার ভাঙনের মুখে অস্তিত্ব নিয়ে হুমকির সম্মুখীন। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় সুনামগঞ্জ টাউন প্রটেকশন প্রকল্প অত্যন্ত জরুরি। তা না হলে যেকোনো সময়ে সুনামগঞ্জ শহর ও এই জনপদ লুপ্ত হয়ে যেতে পারে।
শত শহীদের স্মৃতিবিজড়িত ডলুরা স্মৃতিসৌধের পাশ দিয়ে প্রতিবেশি বন্ধু দেশ ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ও যাতায়াতের জন্য একটি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ও স্থলবন্দর স্থাপন করা জরুরি। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিসহ আরও অনেক জটিলতার সমাধান করা সম্ভব। এলজিইডি’র কয়েকটি ছোট ছোট ব্রিজের অভাবে কিছু গ্রামীণ জনপদ প্রায় ছিটমহলের মতো হয়ে আছে। সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুরের বেশিরভাগ মানুষ দরিদ্র হওয়া সত্ত্বেও কর্মসৃজন থেকে তারা বঞ্চিত। কোনো এক পরিসংখ্যান নাকি বলেছে, তারা দারিদ্র্যসীমা থেকে উঠে চলে এসেছেন; যা সত্য নয়। তারা সীমান্তের কাছে ধুঁকে ধুঁকে কষ্ট পাচ্ছেন। তাদের কর্মসৃজনের জন্য পরিকল্পনার আওতায় আনা উচিত…”।
এভাবে তিনি তার নির্ধারিত ১০ মিনিটের মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন।