সাগর দাশ:
শাল্লায় সাম্প্রদায়িক হামলার বাদী বিবেকানন্দ মজুমদার আর নেই। তিনি উপজেলার হবিবপুর ইউপির নয়াগাঁও গ্রামের বসন্ত কুমার মজুমদারের বড় ছেলে। ১৯ফেব্রুয়ারি সকাল পৌনে ১০টায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬১বছর। বিবেকানন্দ মজুমদার স্ত্রী ২ছেলে সন্তান ও এক কন্যা সন্তান রেখে গেছেন। বিবেকানন্দ মজুমদারের তিন সন্তানই সরকারি চাকুরীজীবী। তারা হলেন-বিপ্লব মজুমদার, বিপ্রেশ মজুমদার ও মেয়ে স্বর্ণালী মজুমদার। জানা যায়, ১১দিন ধরে আইসিইউতে থাকার পর মৃত্যুর কাছে হার মানেন তিনি। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে বিবেকানন্দ মজুমদারের শেষকৃত্যানুষ্ঠান হবে নয়াগাঁও গ্রামের নিজ বাড়িতে। তার মৃত্যুর খবর শুনে শোকার্ত উপজেলাবাসী। বিবেকানন্দ মজুমদার ২০১৪ সাল থেকে মৃত্যুর পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বপালন করে গেছেন। ২০১৬ সালে ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে উপজেলার ২নং হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। প্রয়াত জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের হাতধরে রাজনীতিতে আসেন বিবেকানন্দ মজুমদার। ২০২১ সালের ১৭ মার্চ তার নিজ গ্রাম নয়াগাঁওয়ে একটি সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটে। একই গ্রামের ঝুমন দাশ হেফাজতের তৎকালীন নেতা মামুনুল হক নিয়ে তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ১৫ মার্চ। এই বিতর্কিত স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠে পরিস্থিতি। ১৬মার্চ হামলার উদ্দেশ্যে দিরাই উপজেলার চন্ডীপুর, নাচনী ধনপুর ও শাল্লা উপজেলা কাশীপুর গ্রামের মামুনুল হকের শতশত সমর্থক লাঠিসোঁটা, রামদা, লোহার রড নিয়ে হামলার উদ্দেশ্যে উপজেলার দাঁড়াইন নদীর পাড়ে জমায়েত হতে থাকেন। খবর পেয়ে তৎকালীন ইউএনও আল মুক্তাদির হোসেন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (আল আমি) ও থানা পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেন। পাশাপাশি ঝুমন দাশকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দেন।
ওই রাতেই উপজেলার শাসখাই বাজার থেকে ঝুমন দাশকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু ১৭মার্চ অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের দিন সকাল সাড়ে ৮টায় ওই ৪টি গ্রামের মসজিদের মাইকে হামলা করার ঘোষণা দেয়া হয়। মসজিদের মাইকে এমন ঘোষণা শুনতেই উত্তেজিত হয়ে হাজারো মানুষ জড়ো হতে থাকে। বরাম হাওরের পাঠাখাউরি ও দাঁড়াইন বাজার দিয়ে দু’টি ভাগে ভাগ হয়ে হেফাজতের অ্যাকশন, মামুনুল হকের অ্যাকশন স্লোগান দিতে দিতে হামলা করে উভয় উপজেলার ৪টি গ্রামের মানুষ। এতে নয়াগাঁও গ্রামের ৮৮টি বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও ভাংচুর করা হয়। এই ঘটনায় তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান ও সদ্য উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিবেকানন্দ মজুমদার বাদী শাল্লা থানার একটি মামলা দায়ের করেন। এতে দিরাই উপজেলার নাচনী গ্রামের শহিদুল ইসলাম (স্বাধীন মেম্বার)কে প্রধান আসামী করে আরও ১৪৯৯ জনকে আসামী করা হয়। বিবেকানন্দ মজুমদারের দায়ের করা মামলায় শতাধিক হামলাকারী কিছুদিন জেল খাটেন। পরে সবাই জামিনে বেরিয়ে আসেন। বর্তমানে সাম্প্রদায়িক হামলার মামলার বাদী বিবেকানন্দ মজুমদারের মৃত্যু হওয়ায় হামলাকারীদের সুষ্ঠু বিচার নিয়ে হতাশা আছেন ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসী। হামলায় ২কোটিরও বেশি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।
এবিষয়ে ৪নং ইউপি সদস্য বিশ্বরূপ দাশ বলেন তার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। নয়াগাঁও গ্রামের ঝুমন দাশকে কেন্দ্র করে যে হামলা হয়েছিল তার বাদী ছিলেন তিনি। এই ঘটনার পর থেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। মামলাটির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকটাই হত্যাশায় আছেন বলে জানান তিনি।