হাওর ডেস্ক::
আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি কার্যকর হতে পারে মার্চ মাসেই। এতে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে দেশেও ওঠা-নামা করবে দাম। একই সঙ্গে মার্চ মাসেই আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের দামও বাড়বে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, মার্চ মাস থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে যুক্ত করা হবে জ্বালানি তেলের দাম। নতুন দর মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকেই কার্যকর হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে গেলে দাম বাড়বে, আর কমে গেলে কমে আসবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, শিগগিরই বাড়তে পারে গ্যাস ও বিদ্যুতের দামও।
বিদ্যুতের দাম গ্রাহক পর্যায়ে বাড়লেও গ্যাসের দাম শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনেই বাড়বে। গ্রাহক পর্যায়ে সামান্য পরিমাণে বাড়তে পারে এবং বড় গ্রাহকদের তুলনামূলক বেশি বাড়বে।
নসরুল হামিদ আরো বলেন, সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়ে গেছে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন। আগে ডলার ৭৮ টাকায় পাওয়া যেত, এখন প্রায় ১২০ টাকার মতো হয়ে গেছে।
প্রতি ডলারে প্রায় ৪০ টাকার মতো বেশি খরচ হচ্ছে। এতে বিশাল ঘাটতি তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম অপরিবর্তিত থাকলেও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দাম সমন্বয় জরুরি হয়ে পড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমাতে নতুন করে দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই তৎপরতা আরো আগেই শুরু হয়।
কিন্তু মাঝে নির্বাচন থাকায় তা থেমে ছিল। বিশেষজ্ঞদের দাবি, নতুন করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে তা জনজীবনে নতুন করে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি শূন্যে নামাতে বাল্ক মূল্যহার প্রায় ৮০ দশমিক ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে বিপিডিবি। চলতি ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই তা কার্যকরের প্রস্তাব করা হয়েছিল। পাশাপাশি বাল্ক মূল্যহার বৃদ্ধির ফলে বিদ্যুৎ বিতরণ কম্পনি ও সংস্থাগুলোর লোকসান ঠেকাতে গ্রাহক পর্যায়েও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয় বিপিডিবি।
আইএমএফের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের শর্ত হিসেবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত পুরোপুরি ভর্তুকিমুক্ত করতে হবে। সরকারও এ ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসতে দীর্ঘদিন ধরে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আসন্ন রমজানের আগেই বিদ্যুতের দাম বাড়তে যাচ্ছে।
আগে গণশুনানির মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করার একক ক্ষমতা ছিল জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি)। সেখানে দাম বৃদ্ধির পক্ষে-বিপক্ষে নানা রকম যুক্তি-তর্ক হতো। ফলে ইচ্ছেমতো দাম বৃদ্ধির সুযোগ ছিল তুলনামূলক কম। কিন্তু গত বছর থেকে সরকার নির্বাহী আদেশে দাম বৃদ্ধির জন্য আইন করে। এরপর গণশুনানি ছাড়াই গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম তিন দফায় ১৫ শতাংশ এবং গ্যাসের দাম সর্বোচ্চ ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
বর্তমানে দেশীয় গ্যাসের উত্তোলন কমে যাওয়ার কারণে সরবরাহকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের ২৩ শতাংশই আমদানীকৃত। তার পরও চাহিদা ও সরবরাহে দৈনিক গ্যাসের ঘাটতি থাকছে প্রায় ১৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। বড় এই ঘাটতি কমাতে স্পট মার্কেট থেকে উচ্চমূল্যে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) আমদানি আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। আমদানি ব্যয় সামাল দিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের দাম নতুন করে বাড়ানোর কাজ শুরু করেছে জ্বালানি বিভাগ।
জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, আইএমএফ গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি (অটোমেটেড প্রাইসিং ফর্মুলা) কার্যকর করার শর্ত দিয়েছিল। আইএমএফের শর্ত পূরণে ডিজেল, পেট্রল, অকটেনসহ জ্বালানি তেলের দাম বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিল রেখে নিয়মিত সমন্বয় করার উদ্যোগ নেয় সরকার। শুরুতে এটি তিন মাস পরপর নির্ধারণের পরিকল্পনা ছিল। তবে এখন প্রতি মাসে দাম নির্ধারণের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
দাম নির্ধারণ পদ্ধতির বিষয়ে বিপিসির কর্মকর্তারা বলছেন, তেলের দাম নির্ধারণের দুটি অংশ থাকবে। প্রিমিয়াম (জাহাজ ভাড়া ও অন্যান্য), ট্যাক্স, বিপণন মার্জিন, ডিলারদের কমিশন ইত্যাদি মিলে একটি নির্ধারিত অংশ থাকবে, যা সাধারণত পরিবর্তন হবে না। অপর অংশটি আন্তর্জাতিক মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়বে বা কমবে। ফর্মুলা প্রণয়নে ভারতের জ্বালানি তেলের দরও বিবেচনায় রাখা হয়েছে।