স্টাফ রিপোর্টার::
শতাধিক কোমলমতি শিশু-কিশোর। সারিবদ্ধ হাঁটছে শহরের পিচঢালা পথে। হাতে ফেস্টুন। তাতে লেখা সময়োপযোগী শাণিত পঙতি। কণ্ঠে তাদের সলিল চৌধুরীর কবিতা ‘শপথ, ইস্তেকবাল হোসেনের ‘আজ মিছিলে বন্যা হবে’, সুকান্তের ‘আমরা এসেছি’সহ দ্রোহী কবিদের কবিতার শাশ্বত পঙতি। কণ্ঠ ছেড়ে সমস্বরে রাজপথে গাইছে তারা কবিতা। পিছন থেকে স্লোগান দিচ্ছেন তাদের আবৃত্তির শিক্ষক। এভাবেই টানা চারবারের মতো এবারও মতো এবারও মহান একুশে উপলক্ষে সুনামগঞ্জে ব্যতিক্রমী কবিতা মিছিল করেছে শহরের আবৃত্তি সংগঠন সত্যশব্দ ও নাট্যসংগঠন প্রসেনিয়াম থিয়েটার। সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে বুধবার বিকেলে তাদের কবিতা মিছিলটি বের হয়। শহর প্রদক্ষিণ করে আবারও শহিদ মিনারে এসে শেষ হয়। এতে সত্যশব্দের শিশু কিশোর আবৃত্তিশিল্পী সহ সমমনা সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিশু-কিশোর ও অভিভাবকরাও অংশ নেন। কবিতা মিছিলে অংশ নিয়ে ফেস্টুনে ফুটিয়ে তুলেন বর্তমান সময়কে। শপথ নেন সর্বস্তরে বাংলাভাষা প্রচলনের।
সংগঠনের সংশ্লিষ্টরা জানান টানা চার বছর ধরে ব্যতিক্রমী এই কবিতা মিছিল নিয়ে রাস্তায় নামছে প্রসেনিয়াম থিয়েটার ও সত্যশব্দ। সংগঠনের প্রায় শতাধিত শিশুশিল্পীসহ শহরের সমমনা অন্যান্য সংগঠনের শিশু ও অভিভাবকরাও কবিতা মিছিলে অংশ নিয়ে কবিতার শাণিত পঙতি কণ্ঠে তুলে নেন। তারা জানান, বায়ান্নের একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় বন্দুকের নলের মুখে মিছিল নিয়ে রাজপথে বারুদ হয়ে ফুটেছিল এদদেশের ছাত্রজনতা। শাণিত কবিতার মাধ্যমে একুশের সেই দৃশ্যায়নই ফুটিয়ে তোলতেই এই আয়োজন। নতুন প্রজন্ম যাতে সেই চেতনায় তাদের আগামী বিনির্মাণ করতে পারে এবং সেই চেতনার আলোকে দেশ গড়ে তোলতে পারে তারই প্রচেষ্টা এই কবিতা মিছিল।
মিছিলে সলিল চৌধুরীর ‘এই মিছিল সবহারার সব পাওয়ার এই মিছিল, প্রতিভা আর যশোদা মার রক্তবীজ এই মিছিল, স্বামীহারা অনাথিনীর এই মিছিল, শিশুহারা মাথাপিতার অভিশাপের এই মিছিল’, সকান্তু ভট্টাচার্য্যরে ‘কারা যেন আজ দুহাতে খুলেছে, ভেঙেছে খিল, মিছিলে আমরা নিমগ্ন তাই, দোলে মিছিল’, ইস্তেবাল হোসেনের ‘আজ মিছিলে বন্যা হবে, কাল অসূরের চাবুক খেয়ে আর কতকাল চেপ্টে রবো, ছটকা চাবুক আর খাবোনা, লাল কচুরির ফণাই হবো’,সহ অনেক দ্রোহী কবির কবিতাকে স্লোগান বানিয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে।
কবিতা মিছিলের আয়োক আবৃত্তিশিল্পী দেবাশীষ তালুকদার শুভ্র বলেন, আমরা কবিতা মিছিল আয়োজন করছি গত চার বছর ধরে। এই মিছিলের স্লোগান গোন পরিচিত স্লোগান নয়। এখানে রক্তে আগুন ধরানো কবিতার শাণিত পঙতিমালা উচ্চারিত হয় শিশু-কিশোরদের কণ্ঠে। ফেস্টুনে বর্তমান সময়ের বহুমুখি সংকট তুলে ধরার চেষ্টা থাকে। এবারও শিশু-কিশোরদের সঙ্গে রাজপথে কবিতা মিছিলে শরিক হয়ে কণ্ঠ ছাড়েন সমমনা সাংস্কৃতিক সংগঠনের বন্ধুরাও। তিনি বলেন, আলোক উজ্জ্বল অডিটোরিয়ামের সজ্জিত মঞ্চ ও ড্রয়িংমের বন্ধ দরজার বাইরে বেরিয়ে আসা কবিতারা হাঁটতে থাকে রাজপথে। তাই এই মিছিল সব হারার সব পাওয়ার।
মিছিলে অংশগ্রহণকারী সমমনা সংগঠন কালচারাল ফোরামের সভাপতি সঙ্গীতশিল্পী সোহেল রানা বলেন, সত্যশব্দ ও প্রসেনিয়াম টানা চার বছর ধরে ব্যতিক্রমী এই কবিতা মিছিলের আয়োজন করছে। তারা শিশুদের সঙ্গে শহরের প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সমমনা লোকদেরও মিছিলে নামাতে পারছে। ব্যতিক্রমী এই মিছিল নতুন প্রজন্মকে পথ দেখাবে একুশের চেতনায় আগামী বিনির্মাণের।