বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের দুর্গম হাওরাঞ্চল থেকে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে যাত্রা শুরু করেছেন প্রাথমিক ও গনশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী। দুর্গূম এলাকা হিসেবে সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলকে বেছে নিয়ে শিগ্রই দুর্গম পাহাড়েও ছুটে যাবেন বলে জানিয়েছেন। হাওরের বিদ্যালয় পরিদর্শনকালে তিনি সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর পাশাপাশি শিক্ষকরা নিয়মিত ও যথাসময়ে স্কুলে এসে পাঠদান দিচ্ছেন কি না তা খোজ খবর রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। ১১ মার্চ সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তিনি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার হাওরবেষ্টিত কয়েকটি বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। এর আগের দিন ১০ মার্চ তিনি সুনামগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমিতে জেরার ১১ উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়েল শিক্ষার্থীদের অভিভাকক মায়েদের সঙ্গে সমাবেশে মিলিত হয়ে তাদের কথাবার্তা শুনেন।
সোমবার সকাল ১০টায় সড়কপথে তাহিরপুর উপজেলা সদরে পৌঁছান প্রতিমন্ত্রী। পরে স্পিডবোট যোগে উপজেলার শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের দুর্গম উমেদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান। ওই বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে গিয়ে নিজেই তিনি শিক্ষার্থীদের পাঠদান করান এবং শিক্ষকদের পাঠদান কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি শিক্ষার্থীদের কাছে জাতীয় দিবসগুলোর বিষয়ে জানতে চান এবং বিদ্যালয়ে দুপুরের খাবার, বর্ষাকালীন যাতায়াত বিষয়ে জানতে চান। এই বিদ্যালয় পরিদর্শন শেষে তিনি একই ইউনিয়নের আনন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তাহিরপুর উপজেলা সদর ইউনিয়নের সূর্য্যেরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিশর্দন করেন। এখানেও তিনি ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন ও শিক্ষকদের পাঠদান কার্যক্রম পরিদর্শন করে মূল্যবান পরামর্শ দেন। বিদ্যালয়গুলো পরিদর্শনকালে প্রতিমন্ত্রী হাওরাঞ্চলে ঝড়েপড়া ঠেকাতে অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। এসময় হাওরাঞ্চলের অভিভাবকরা তাকে বর্ষাকালীন যাতায়াত দুর্ভোগ, ঝূকি, নগদে উপবৃত্তি প্রাপ্তির সমস্যা, স্কুলে দুপুরের খাবার পরিবেশন বিষয়ে দাবি জানান। এসময় প্রতিমন্ত্রী হাওরাঞ্চলের মা ও অভিভাবকদেরকে সন্তানদের নিয়মিত স্কুলে আসার অনুরোধ জানিয়ে শিক্ষকদের নিয়মিত যাতায়াত ও পাঠদান বিষয়েও খোজ খবর রাখার কথা বলেন।
এসময় প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট রনজিত সরকার, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোছাম্মদ নুরজাহান খাতুন, সিলেট বিভাগীয় উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দিন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহন লাল দাশ ও তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা পারভীন প্রমুখ।
এদিকে এর আগের দিন গত ১০ জানুয়ারি সুনামগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমিতে হাওরাঞ্চলের ১১ উপজেলার মায়েদের নিয়ে ‘মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে সামাজিক উদবুদ্ধকরণ ও মা সমাবেশে’ কথা বলেছিলেন। এখানেও মায়েরা প্রতিমন্ত্রীকে সব বাচ্চাদের স্কুলে দুপুরে খাবারের ব্যবস্থা, বর্ষাকালীন দুর্যোগপূর্ণ পরিবেশে স্কুলে বিশেষ নৌকার ব্যবস্থা এবং উপবৃত্তির টাকা ব্যাংক বা হাতে হাতে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। এসময় মন্ত্রী বলেন, সবাই সুন্দর ও ভালো জায়গায় যেতে চায়। সুন্দর ও উন্নত জায়গা নিয়ে আসলে ভাবার কিছু নাই। আমার মনে হয়েছে যদি আমি দুর্গম এলাকা থেকে শুরু করতে পারি তাহলে মনে হবে আমি প্রান্তিক মানুষের জন্য কিছু করতে পারবো। আর এই ভাবনা থেকেই হাওরে চলে এসেছি। রমজানের মাঝামাঝি সময়ে পাহাড়েও যাবো।
অনলাইন বদলিতে অনিয়মের প্রসঙ্গ উত্তাপন করা হলে এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিক্ষক বদলি সহজ করার জন্য অনলাইন সিস্টেম চালু করা হয়েছে। এতে ট্রান্সফারেন্সি এসেছে। এই ট্রান্সফারেন্সির জন্যই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব কিছু ডিজিটালাইজ করে দিয়েছেন। আমরাও বদলি ও নিয়োগে ট্রান্সফারেন্সি এনেছি। এখন স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট নাগরিকের জন্য তিনি স্কুল ফিডিং ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগে নিয়োগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হতো এই অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, আগে নিয়োগে কি হতো দেশবাসী সব জানে। তবে ২০২৩ সন থেকে নিয়োগে স্বচ্ছতা এসেছে।