স্টাফ রিপোর্টার::
দরিদ্র পরিবারের সন্তান ও পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম পুরুষ সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কলাইয়া গ্রামের আখতার (২৬)। প্রিয় ছোট বোনকে স্পাউস ভিসায় এক স্টুডেন্টের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে ইউরোপ পাঠাতে সব সহায় সম্বল বিক্রি করে দেয়। যখন ভিসা হয়ে যায় তখন খুবই খুশি হয় সে। কিন্তু ইউরোপের সংশ্লিষ্ট দেশের নির্দিষ্ট ফিস দিতে একদিন সময় বেঁধে দেয় কর্তৃপক্ষ। ওই টাকা সংগ্রহের জন্য গত সোমবার বাড়ি থেকে বের হয় আখতার। পরিচিত সবার কাছে টাকা ধার চায়। শেষে সুদে টাকা সংগ্রহের অভিযানে নামে। রাতে বাড়ি ফেরার পথে পাগলাবাজারে ঝড়ের মুখে পড়ে তাকে বহনকারী সিএনজিটি। সিএনজিতে গাছ ভেঙ্গে পড়লে তার গলা ও মেরুদণ্ডে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে সুনামগঞ্জ সদর হাসাপাতালে পাঠালে কর্তৃপক্ষ সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে।
ওসমানীতে ৭ এপ্রিল রবিবার ভোরে মৃত্যুবরণ করে আখতারুজ্জামান আখতার। ঝড়ের কবলে পড়ে পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যুতে একটি অসহায় পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আতœীয় স্বজনরাও কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন। রবিবার বাদ জোহর গ্রামের মাঠে তার নামাজে যানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যানাজায় শত শত মানুষ অংশ নিয়ে তার জন্য বিশেষ প্রার্থনা করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে আখতার সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কলাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দফতরির কাজ করতো। রাতদিন স্কুলে কাজ করার পাশাপাশি স্কুলের কম্পিউটার, অফিস ব্যবস্থাপনাসহ অধিকাংশ কাজই করতো। অবসর সময়ে গ্রামের শিশুদের সামান্য পারিশ্রমিক নিয়ে প্রাইভেট পড়াতো। মা, স্ত্রী, বোন ও এক সন্তান নিয়ে তার পরিবার। সামান্য এই আয়েই কোনওমতে চলতো তার সংসার। কিছুদিন আগে মাও মারা গেছেন। এবার কালবৈশাখী ঝড়ও তরুণ আখতারকে নিয়ে গেল। এখন অসহায় হয়ে পড়েছে পুরো পরিবার। তারা চোখে অন্ধকার দেখছে।
কলাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রানা তালুকদার বলেন, আখতার সরাসরি আমার ছাত্র ছিল। সে খুবই সৎ ও মানবিক মানুষ ছির। পরিবারের জন্য তার আতœত্যাগ আমরা কাছ থেকে দেখেছি। খুব কষ্ট করে সংসারের হাল ধরেছিল। এভাবে প্রাকৃতিক ঝড়ে তার জীবন নিভিয়ে গেল। এখন স্ত্রী, এক সন্তান ও বোনটি অসহায় হয়ে পড়েছে। তারা চোখে অন্ধকার দেখছেন।