স্টাফ রিপোর্টার::
‘গণমাধ্যমে হলুদ সাংবাদিকতা প্রতিরোধ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা’ শীর্ষক কর্মশালায় হলুদ সাংবাদিক হিসেবে জেলা দাপিয়ে বেড়ানো বিতর্কিত সাংবাদিকদের সনদপত্র দিয়ে সাংবাদিকতার স্বীকৃতি দেওয়ায় সুনামগঞ্জ জেলায় কর্মরত ১১ টেলিভিশন সাংবাদিক নিজেদের সনদপত্র ফেরত দিয়েছেন। শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রেসকাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের কাছে একযোগে সনদপত্রসহ প্রশিক্ষণ উপকরণ ফেরত দিয়ে বেরিয়ে আসেন। প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া মূলধারার অন্যান্য দায়িত্বশীল সাংবাদিকরাও এ ঘটনায় প্রতিবাদী সাংবাদিকদের প্রতি সংহতি জানান।
সনদপত্র বর্জনকারদের মধ্যে একাত্তর টেলিভিশন, চ্যানেল টোয়েন্টিফোর টেলিভিশন, ডিবিসি টেলিভিশন, এনটিভি, চ্যানেল টোয়েন্টিফোর, আরটিভি, বৈশাখী টিভি, এখন টিভি, বাংলা টিভিও রয়েছে। এছাড়া এই সাংবাদিকদের প্রতি সুনামগঞ্জের আরো বেশ কয়েকজন দায়িত্বশীল পত্রিকা ও টেলিভিশনে কর্মরত সাংবাদিকরাও সার্টিফিকেট বর্জনকারী সাংবাদিকদের প্রতি সংহতি জানান।
আরটিভির প্রতিনিধি শহীদনূর আহমেদ সনদপত্র ফেরতের বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, প্রেসকাউন্সিলের প্রশিক্ষণটি সময়োপযোগী ছিল। কিন্তু এই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় চোরাকারবারী, প্রতারক, বখাটে, নারী নিগ্রহকারী, হলুদ সাংবাদিক হিসেবে দাপিয়ে বেড়ানো দুর্নীতিবাজ ও বিতর্কিতদেরও গোপনে প্রশিক্ষণে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তারা পিছনে গিয়ে ঘাপটি মেরে বসে অনুষ্ঠান শেষে সার্টিফিকেট হাতিয়ে নেয়। হলুদ সাংবাদিকতা বিরোধী এই সনদ এখন লাইসেন্স হিসেবে ব্যবহার করবে এই অপসাংবাদিকরা। এ কারণে আমার ১১জন টেলিভিশন সাংবাদিক সার্টিফিকেট ফেরত দিয়েছি।
সার্টিফিকেট ফেরত প্রদানকারী এখন টিভির জেলা প্রতিনিধি লিপসন আহমদ বলেন, হলুদ সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানানোটা ঠিক হয়নি। স্থানীয় কর্মকর্তারা প্রেসকাউন্সিলকে বুঝিয়ে অপসাংবাদিকদের নেতাদের সঙ্গে আতাত করে তারা হলুদ সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণে নিয়ে এসেছিলেন সার্টিফিকেটের আশায়। অনুষ্ঠানে মূলধারার সাংবাদিকরা হলুদ সাংবাদিকতা বিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। নানা পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষে কর্তৃপক্ষ হলুদ সাংবাদিক হিসেবে পরিচিতদের দায়মুক্তির সার্টিফিকেট দেওয়ায় আমরা সার্টিফিকেট ফেরত দিয়েছি। প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছিলেন এমন একাধিক দায়িত্বশীল সাংবাদিকরাও আমাদেরকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
সুনামগঞ্জ জেলা তথ্য অফিসার আব্দুস সাত্তার বলেন, কয়েকজন টিভি সাংবাদিক সার্টিফিকেট ফেরত দিয়েছেন। তারা বলেছেন বিতর্কিতদের সার্টিফিকেট দেওয়ায় তারা তা করেছেন। আমরা বিব্রতকর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য অনুষ্ঠানে চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা সার্টিফিকেট ও অন্যান্য প্রশিক্ষণ উপকরণ ফিরত দিয়ে চলে গেছেন।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, বিষয়টি আমাদের জন্য বিব্রতকর। আমি মন্ত্রী মহোদয়সহ হাওরের ধানকাটার কাজে ব্যস্ত থাকায় নজর দিতে পারিনি। তবে আগামীতে প্রকৃত সাংবাদিকদেরই আমন্ত্রণ জানানো হবে। আমরাও চাই বিশুদ্ধ সাংবাদিকরা দেশ ও জাতির জন্য কাজ করুন।