বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার এক দিনমজুরের নামে ভুতুড়ে বিল পাঠিয়ে তাকে হয়রানি করছে সুনামগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। ভুতুড়ে বিল থেকে পরিত্রাণ পেতে ওই দিনমজুর জেলা ও উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে এসে লিখিত আবেদন দিলেও আবেদন নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এদিকে ভুতুড়ে বিল পরিশোধ না করলে মামলার ভয় দেখাচ্ছে পল্লী বিদ্যুৎ।
পল্লী বিদ্যুৎ থেকে সরবরাকৃত বিদ্যুৎ বিল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে শান্তিগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাক ইউনিয়নের ধনপুর গ্রামের দিনমজুর কবীর হোসেনের গ্রাহক নম্বর ১০৬২০৬৫২৬৪০২০। গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিলের কাগজ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ১ হাজার ৬২৫ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়েছে মর্মে বিল দিয়েছে শান্তিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিস। এর আগে নভেম্বরে ৪৫ ইউনিট, অক্টোবরে ১০ ইউনিট, সেপ্টেম্বরে ৫০ ইউনিট, আগস্টে ৪৫ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়েছে। কিন্তু ডিসেম্বরে ১৬২৫ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়েছে বলে বিল দেয় কর্তৃপক্ষ। বিল পেয়ে আঁতকে ওঠেন দিন মজুর। তিনি পরদিন শান্তিগঞ্জ উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে এসে এজিএম নাজির হোসেনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানালে অভিযোগ নেননি তিনি। পরে জেলা অফিসে এসে জোনাল ম্যানেজারের অফিসে লিখিত আবেদন দিতে চাইলে ওই অফিসও আবেদনটি নেয়নি। পরে তিনি আবারও শান্তিগঞ্জ অফিসে গিয়ে তার এই সমস্যার সমাধান করে দেওয়ার জন্য বারবার এজিএম নাজির হোসেনকে অনুরোধ করেন। অনুরোধে ওই কর্মকর্তা গণিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করে গণিগঞ্জ অফিসের কর্মকর্তা দিন মোহাম্মদ আরিফ ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে দেখেন ওই দিনজমুর মাত্র দুটি লাইট ব্যবহার করেন। তার ঘরে কোনও ফ্যানও নেই। ওই পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহারও করেননি তিনি। তবে মূল সংযোগ লাইনের সঙ্গে তার ঘরের সংযোগ লাইনে ত্রুটি ছিল। এ কারণে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছিল। পরে তার সংযোগ লাইন মেরামত করে দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তার ভুতুড়ে বিলের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি। এখন বারবার এই বিল পরিশোধের জন্য তাড়া দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগকারী কবীর হোসেন বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ নিয়মিত যে বিল দিতো তাও বেশি ছিল। আমি বারবার লাইনম্যানস বিলম্যানকে সমস্যা দেখার জন্য বললেও তারা কেউ গুরুত্ব দেয়নি। অবশেষ যখন বিশাল ভুতুড়ে বিল দেয় তখন আমি বাধ্য হয়ে অফিসে এসে ধর্ণা দেই। তিনি বলেন, আমার ঘরে কোন ফ্যান নাই। মাত্র দুটি বাতি জ্বালাই। কিভাবে ১৬২৫ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়েছে বলে আমার প্রায় ২২ হাজার টাকার উপরে বিল আসে গত ডিসেম্বর মাসে। এই বিল পরিশোধ করতে হলে বাড়ি বিক্রি করে করতে হবে। আমার অন্য উপায় নেই। পল্লী বিদ্যুতের লাইন ম্যান ও লাইন টেকনেশিয়ান এসেও সরেজমিন তদন্ত করে দেখে গেছে আমি এই বিদ্যুৎ ব্যবহার করিনি। তাদের সমস্যার কারণেই আমার নামে ভুতুড়ে বিল এসেছে।
ইউপি সদস্যা মোছাব্বির হোসেন বলেন, কবীর হোসেন খুবই গরিব মানুষ। সে একটি ফ্যান কেনার সামর্থ্যও রাখেনা। শুধু রাতে লাইট জ্বালান। এই লোকের নামে ভূয়া বিল দিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ। এরা গরিব মানুষদের হয়রানি করছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
গণিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের লাইন ম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, এই সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। এখন আর সমস্যা নেই এবং বিলও বেশি আসছেনা। ওই গ্রাহকের লাইনে সমস্যা থাকার কারণে বিল বেশি এসেছিল। এখন তাকে এই বিল দিতে হবে। এই বিল মাফ করার কোনও সুযোগ নেই।
সুনামগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের জেনারেল ম্যানেজার মিলন কুমার কু- বলেন, কেন এত বিল আসছে আমি বলতে পারবনা। এটা স্থানীয় অফিস বলতে পারবে। আমি এসব সমাধান করার জন্য বসে আছি নাকি? আমার অনেক কাজ আছে।