হাওর ডেস্ক::
সিলেট মহানগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে গ্রহণ করা হয়েছিল সুরমা নদী খনন প্রকল্প। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে আগামী জুনে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী- ১৭ মাসে প্রকল্পের কাজ হয়েছে ৬০ ভাগ। বাকি দুই মাসে তারা বাকি কাজ সম্পন্ন করতে চায়। আর এই সময়ের মধ্যে ৪০ ভাগ কাজ সম্পন্ন অসম্ভব, বলছেন সচেতন মহল। পাউবোর বিরুদ্ধে অপরিকল্পিত কাজের অভিযোগও তুলছেন তারা। তাদের দাবি, নদী খননের নামে প্রকল্পের পুরো ৫০ কোটি টাকাই জলে গেছে।
এদিকে সিলেট নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে নদী খনন করা হলেও প্রকল্প নিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) সঙ্গে কোনো সমন্বয় করেনি পাউবো।
সিসিক কর্মকর্তারা বলছেন- জলাবদ্ধতা নিরসনে এই খনন কাজ খুব কাজে আসবে না।
জানা গেছে, ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় সিলেট মহানগরের প্রায় অর্ধেক এলাকা তলিয়ে যায়। কিছু এলাকায় সৃষ্টি হয় দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতা। জলজটের প্রধান কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা দায়ী করেন সুরমার নাব্যতা হ্রাসকে। এরপর থেকে মহানগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সুরমা খননের দাবি ওঠে। এর প্রেক্ষিতে শহরতলির লামাকাজি থেকে কুশিঘাট পর্যন্ত ১৫.৫০ কিলোমিটার সুরমা নদী খননের একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
৫০ কোটি টাকা ব্যয়ের ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে। চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হবে প্রকল্পের মেয়াদ। প্রকল্পের কাজ ৬০ ভাগ সম্পন্ন হলেও গেল শুষ্ক মৌসুমে সুরমা নদীতে বিশাল বিশাল চর জাগতে দেখা গেছে। যেসব স্থানে ড্রেজিং করা হয়েছে সেসব স্থানের পাশেই আগের মতো চর জেগেছিলো।
বিশেষ করে কুশিঘাট ও কাজিরবাজার সেতু সংলগ্ন এলাকায় খেলার মাঠসদৃশ চর দেখে খনন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নগরবাসী।
আর সচেতন মহল বলছেন, খননের নামে পাউবো টাকা জলে ঢেলেছে। নদীর উৎসমুখ থেকে কাজ শুরু না হওয়ায় এই খনন কাজ কোনো কাজে আসবে না।
পাউবো সিলেট অফিস সূত্র জানায়, গত ১৭ মাসে প্রকল্পটির ৬০ ভাগের একটু বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী দুই মাসে বাকি ৪০ ভাগ কাজ সম্পন্নের জন্য জোর দেওয়া হচ্ছে। সময় না বাড়িয়ে জুন মাসেই প্রকল্পটি শেষ করতে চায় পাউবো।
প্রকল্প-সংশ্লিষ্টদের দাবি, নদীর তলদেশে প্রচুর পরিমাণ প্লাস্টিক ও পলিথিনের স্তর পড়ায় ড্রেজিং কাজ বার বার ব্যাহত হয়েছে। এতে কাজে কিছুটা ধীরগতি এসেছে। খনন করতে গিয়ে প্রায়ই মেশিন বিকল হওয়ার ঘটনা ঘটায় বন্ধ রাখতে হয়েছে কাজ। বর্তমানে আলমপুর কুশিঘাট, ঘাসিটুলা ও তেমুখী ব্রিজের কাছে নদী খনন কাজ চলছে।
পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানান, প্রকল্পের মেয়াদের যে দুই মাস বাকি আছে এই সময়ের মধ্যে কাজ প্রায় শেষ করার চেষ্টা চলছে। নদীর তলদেশে প্লাস্টিক ও পলিথিনের স্তর না থাকলে কাজে আরও গতি আসতো। নদী খননের ফলে সিলেট মহানগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ ড্রেজিং অংশে নদীর পানি ধারণক্ষমতা বেড়েছে। তিনি বলেন- তবে জলাবদ্ধতা নিরসনে নদী খনন একমাত্র পন্থা নয়।
পরিবেশবাদী সংগঠন ‘সেভ দ্য হেরিটেজ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’র প্রধান সমন্বয়ক আবদুল হাই আল হাদী মনে করেন- জলাবদ্ধতা কিংবা বন্যা নিয়ন্ত্রণে গৃহীত সুরমা নদী খননের পুরো প্রকল্পটিই অপরিকল্পিত। নদীর মধ্যখানে সাড়ে ১৫ কিলোমিটার খনন করে সুফল পাওয়ার আশা করা বোকামি। নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি কিংবা পানিপ্রবাহ বাড়াতে হলে সুরমার উৎসমুখ থেকে খনন শুরু করা উচিৎ ছিলো। সুরমার সঙ্গে যুক্ত শাখা নদী ও বড় খালগুলোর উৎসমুখ খনন করে পানিপ্রবাহ বাড়াতে হবে। তা না করে নদীর মধ্যখান থেকে খনন করা হলে বর্ষা মৌসুমে পলি পড়ে খননকৃত জায়গা ভরে যাবে। এতে কোনো সুফলই মিলবে না।
৫০ কোটি টাকার এই প্রকল্প সিলেট মহানগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে কোনো কাজেই আসার সম্ভাবনা নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে পাউবোর এই খনন কাজ নিয়ে অনেকটা ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করেছেন সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।
তিনি জানান, মহানগরের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য নদী খনন হলেও পাউবো এ নিয়ে সিসিকের সঙ্গে কোনো সমন্বয় করেনি।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম জানান, সুরমা নদীর কিছু অংশ ড্রেজিংয়ের ফলে জলাবদ্ধতা কিছুটা কমবে। তবে জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য উৎসমুখসহ ছড়া ও খাল পরিষ্কার রাখতে হবে। নদী খনন প্রক্রিয়া ২-৩ বছর পর পর না করলে স্থায়ী সুফল মিলবে না।