1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০১ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

মিয়ানমারে সেনা অভিযান: উত্তর-পশ্চিম রাখাইন রাজ্যে ৪শ নিহত রোহিঙ্গা

  • আপডেট টাইম :: শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৯.৫৮ এএম
  • ৪৭৪ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন::
মিয়ানমারে সাম্প্রতিক সেনা অভিযান শুরুর পর থেকে গেল এক সপ্তাহে উত্তর-পশ্চিম রাখাইন রাজ্যে ৪শ জন নিহত হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক যৌথ প্রতিবেদন থেকে এ কথা জানা গেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর বিদ্রোহীদের সাম্প্রতিক হামলা এবং এর জবাবে জোরালো এক সেনা-অভিযানে এইসব প্রাণহানি হয়েছে। মিয়ানমারের ডি-ফ্যাক্টো সরকার নিহত ৪শ জনের মধ্যে ৩৭০ জনকে সন্ত্রাসী বলে উল্লেখ করেছে। তবে রোহিঙ্গা-অধ্যুষিত রাখাইনে নিরাপরাধ বেসামরিকদেরকে হত্যা করা হচ্ছে উল্লেখ করে তা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে বিশ্বসম্প্রদায়।
গত বছর অক্টোবরের সামরিক অভিযানের পর থেকে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণের মধ্য দিয়ে দেখিয়েছে, মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর এথনিক ক্লিনজিং বা জাতিগত নিধনযজ্ঞ জারি রয়েছে। সেখানে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে বলেও মনে করে তারা। সাম্প্রতিক ক্লিয়ারেন্স অপারেশনের লক্ষ্যে সেনা মোতায়েন শুরু হতেই রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। জাতিসংঘ সূত্রকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স তাদের বৃহস্পতিবারের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক অভিযানকালে (ক্লিয়ারেন্স অপারেশন) বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সম্ভাব্য সংখ্যা অন্তত ২৭,৪০০। নো ম্যানস ল্যান্ডে আটকে আছেন আরও ২০,০০০ রোহিঙ্গা। সবশেষ রয়টার্স-গার্ডিয়ানের শুক্রবারের যৌথ প্রতিবেদনে ৩৮,০০০ রোহিঙ্গার বাংলাদেশে পালিয়ে আসার খবর প্রকাশিত হয়েছে। তবে পালিয়েও রেহায় মিলছে না রোহিঙ্গাদের। কাতারভিত্তিক আলজাজিরা খবর দিয়েছে, পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করলেই গুলি করা হচ্ছে বেসামরিক রোহিঙ্গাদের। যারা গোলাগুলির শিকার হচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে দুর্গত রোহিঙ্গারা
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমকে উদ্ধৃত করে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা চলতি মাসের ১২ তারিখ জানিয়েছিল, মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের সুনির্দিষ্ট অঞ্চলে নতুন করে কারফিউ জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেখানকার সেনা-গণতান্ত্রিক ডিফ্যাক্টো সরকার। একই সময়ে মোতায়েনকৃত সেনার সংখ্যা বাড়ানোর খবর দিয়েছিল ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ১৭ আগস্ট সাউথ এশিয়া মনিটর-এর প্রতিবেদনে সেনা অভিযান শুরুর কথা জানানো হয়। সেনা অভিযান শুরুর কয়েকদিনের মাথায় মিয়ানমারের ডি-ফ্যাক্টো সরকার এক বিবৃতিতে বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) রাখাইন রাজ্যের ‘বিদ্রোহী রোহিঙ্গা’রা ২৪টি পুলিশ চেকপোস্টে সমন্বিত হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করে। দাবি অনুযায়ী রাতভর সংঘর্ষে রোহিঙ্গা-পুলিশ-সেনাসনদস্য মিলে অন্তত ১০৪ জন নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করে সেনাসূত্র। এরপরই রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান জোরদার করা হয় বলে দাবি তাদের।
রাখাইনের এইসব পোড়া ঘর বহন করছে রোহিঙ্গা-নিপীড়নের সাক্ষ্য
সেনাসূত্রকে উদ্ধৃত করে গার্ডিয়ান ও রয়টার্সের ওই যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক সপ্তাহের সহিংসতায় ৩৭০ ‘সন্ত্রাসী’, ১৩ নিরাপত্তারক্ষী এবং ১৪ জন বেসামরিক নিহত হয়েছেন। তবে ব্রিসবেন টাইমস-এর ২৬ আগস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আবার পুড়ছে মিয়ানমারের রাখাইন। পুড়ছে পৃথিবীর সবথেকে নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর সহায়-সম্বল-ভাগ্য। প্রতিবেদনে সেনা উপস্থিতির যে চিত্র ধরা দিয়েছে, তাতে একে ‘জলপাই রঙের অন্ধকার’র সামিল বলে মনে হচ্ছে। ডি-ফ্যাক্টো সরকারের সেনারা ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্যজুড়ে। বাড়ির পর বাড়িতে আগুন জ্বলছে। চলছে রাউন্ডে রাউন্ডে গোলাগুলি। নিহতদের শোকে বাকরুদ্ধ আত্মীয়স্বজন। চারদিকে কান্নার শব্দ। স্বজনের লাশ পেছনে ফেলে রুদ্ধশ্বাসে পালাচ্ছে মানুষ। নিহতদের শোকে বাকরুদ্ধ আত্মীয়স্বজন। চারদিকে কান্নার শব্দ। স্বজনের লাশ পেছনে ফেলে রুদ্ধশ্বাসে পালাচ্ছে মানুষ। তবে পালিয়েই রেহায় মিলছে না তাদের।
কাতারভিত্তিক আলজাজিরা ক’দিন আগে খবর দিয়েছে, পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করলেই গুলি করা হচ্ছে বেসামরিক রোহিঙ্গাদের। যারা গোলাগুলির শিকার হচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এবার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম তাদের শুক্র ও শনিবারের প্রতিবেদনে নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে গিয়ে রোহিঙ্গাদের ডুবে যাওয়ার খবর প্রকাশ করেছে। নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে গিয়ে ২০ জনেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম ডুবে গেছে বলে গার্ডিয়ান ও রায়টার্সের ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির বাংলা ভার্সনে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিবিজি সূত্রে ১৭ জনের প্রাণহানি নিশ্চিত করা হয়েছে।

বিশ্ব সম্প্রদায় এ নিয়ে মিয়ানমারের ডি-ফ্যাক্টো সরকারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সুচিকে সতর্ক করেছে বিশ্বসম্প্রদায়। গার্ডিয়ান-রয়টার্সের যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিরপরাধ বেসমারিক হত্যাকাণ্ড বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে তারা।
গত বছরের অক্টোবরে একই ধরনের হামলায় ৯ পুলিশ নিহত হওয়ার পর রাখাইন রাজ্যে বড় আকারের সামরিক অভিযান হয়েছিল। তখন সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করার অভিযোগ ওঠে। জাতিসংঘ মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকাণ্ডকে জাতিগত নিধনযজ্ঞ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের সামিল বলে উল্লেখ করে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা স্যাটেলাইট ইমেজ প্রকাশের মধ্য দিয়ে রাখাইনের দমনপীড়ন ও বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার তথ্য হাজির করে। তবে মিয়ানমার ওইসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে শুরু থেকেই। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে কফি আনানের নেত্বত্বে আলাদা তদন্ত কমিশন গঠন করে তারা। সেই তদন্ত কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের একদিনের মাথায় নতুন করে হামলা ও সংঘর্ষ শুরু হয় বৃহস্পতিবার থেকে। শুক্রবার থেকে বেসামরিক রোহিঙ্গাদোএর ওপর সেনানিপীড়নের খবর সামনে আসতে শুরু করে।

মিয়ানমারএর ডি-ফ্যাক্টো সরকারের আমন্ত্রণেই রাখাইন পরিস্থিতি তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছিল কফি আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশন। সেই তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদনেও সংখ্যার বিচারে রোহিঙ্গাদেরকে‘বিশ্বের সবথেকে বড় রাষ্ট্রহীন সম্প্রদায়’ হিসেবে অভিহিত করে নাগরিকতা নিশ্চিতের আহ্বান জানানো হয়। প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয় আরোপিত সমস্ত বিধিনিষেধ। এতে সতর্ক করা হয়, স্থানীয় জনগনের বৈধ অভিযোগ উপেক্ষিত হলে তারা জঙ্গিবাদে ঝুঁকতে পারে।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!