হাওর ডেস্ক::
কয়েক ঘণ্টার ভারি বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে সিলেট নগরীর বেশ কিছু এলাকা। সড়ক উপচে পানি ঢুকে পড়েছে মানুষের বাসাবাড়ি-দোকানপাটে; এমনকি হাসপাতালেও। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী।
রোববার রাত ১টার দিকে ভারি বৃষ্টি শুরু হলে নগরীর বাসিন্দাদের বাসাবাড়িতে পানি ঢুকতে শুরু করে। সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল সিলেটে; তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা ধরে আসে।
সিলেট আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজিব হোসেন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ২২৬ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আর সোমবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৮ মিলিমিটার।
গত দুদিন ধরে সিলেটে ভারি বৃষ্টি না হওয়ায় এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পরিমাণ কম হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির খবর পাওয়া যাচ্ছিল। তবে এরমধ্যে আবার ভারি বৃষ্টি হওয়ার কারণে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি দিকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা পানি উন্নয়ন বোর্ডের।
সকালে বিভিন্ন স্থান ঘুরে এবং খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর তালতলা, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, দাঁড়িয়াপাড়া, বেতেরবাজার, শিবগঞ্জ, মেজরটিলা, পাটানটুলা, ছালিবন্দর, বাগবাড়ি, যতরপুর, কাজিরবাজার, শেখঘাট, কলাপাড়া, পীরমহল্লা, মাছিমপুর, ছড়ারপার, ইলাশকান্দি, উপশহর ও বাদামবাগিচাসহ নগরীর অন্তত একশ এলাকার বাসাবাড়িতে পানি ঢুকেছে।
সকাল থেকে সিলেটের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উপশহরের কোথাও কোথাও হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানি উঠেছে।
নগরীর যতরপুর এলাকার বাসিন্দা সুমন মিয়া বলেন, “গত কয়েকদিন ধরেই রাস্তাঘাটে পানি ছিল; কিন্তু গতকাল রাতের বৃষ্টির পর এখন বাসার ভেতরেও পানি ঢুকে পড়েছে।
“রাত থেকেই বাচ্চাদের নিয়ে কষ্ট করছি। পানি কমার কোন লক্ষণ নেই; কেবল বেড়েই চলছে। তারওপর বৃষ্টিপাত তো আছেই।”
সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি ও নগরীর জামতলা এলাকার বাসিন্দা রজত কান্তি গুপ্ত বলেন, “বাসায় পানি প্রবেশ করেছে; দুর্ভোগে পড়েছি।”
ভারি বৃষ্টিতে বাসায় পানি ঢুকে পড়ায় সব জিনিসপত্র ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সোবাহানীঘাটের বাসিন্দা হুছনা বেগম।
এখন পরিস্থিতি কী? উত্তরে তিনি বলছিলেন, “রাতে থেকে পানি আরও বেড়েছে। বাসার জিনিসপত্র তো নষ্ট হয়েছেই, সঙ্গে বিশুদ্ধ খাবার পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে পানি নিয়ে সমস্যায় রয়েছি আমরা।”
কলাপাড়ার বাসিন্দা পারভেজ আহমেদ বাসার উঠানে পানি চলে এসেছে; অল্প কিছু সময়ের মধ্যে বাসার ভেতরেও প্রবেশ করবে বলে আশঙ্কা করছেন বলে জানান।
সিলেটের স্থানীয় একটি পত্রিকার ফটো সাংবাদিক রেজুওয়ান আহমেদ বলছিলেন, বৃষ্টির ছবি তুলতে গিয়ে সকালে নগরীর ৬ নম্বর ওর্য়াডের ইলাশকান্দি, বাদামবাগিচা এলাকায় কোমর পানি দেখেছেন তিনি।
এছাড়াও তালতলা পয়েন্ট, ছাড়ারপার এলাকার বাসাবাড়িতে হাঁটু পানি রয়েছে। এসব এলাকার বাসিন্দারা তাকে জানিয়েছেন, রাত থেকেই বাসাবাড়িতে পানি ঢুকছে।
বাসদ সিলেট জেলার সদস্য সচিব ও নগরীর বাসিন্দা প্রণব জ্যোতি পাল বলছেন, “বৃষ্টি হলেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েন।
“বারবার দাবি তোলার পরও সুরমা নদীর খনন কাজ হয়নি। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংষ্কার হয়নি।”
নগরীর বিভিন্ন বাসাবাড়ির পাশাপাশি সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও পানি ঢুকেছে। এতে রোগীদের নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছে কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের উপপরিচালক সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন, “হাসপাতালের ভেতরে-বাইরে সব জায়গায় পানি ঢুকেছে। এজন্য চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে।
“বিশেষ করে ২৭ নম্বর ওর্য়াডে পানি প্রবেশ করায় মেঝেতে থাকা রোগীদের নিয়ে সমস্যা পড়েছি; এখন এক বেডে দুইজন করে রোগী রাখতে হচ্ছে।”
হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ ও প্রশাসনিক ব্লকেও পানি ঢুকেছে বলে জানান এ চিকিৎসক।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ১২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সিলেটে বৃষ্টি হওয়ার কারণে শহরের পানি সুরমা নদীতে নামতে পারছে না।
“এতে করে শহরের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে শহরের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যেতে পারে।”
দীপক বলেন, “সুরমা নদীর পানি সিলেট শহর পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার এবং কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
“আর কুশিয়ারা নদীর পানি জকিগঞ্জ পয়েন্টে প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। তবে জেলার অন্য নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।”
সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর সাংবাদিকদের বলছেন, মধ্যরাত থেকে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। এর মধ্যে বন্যার কারণে সুরমা নদীর পানিও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এতে নগরের পানি ছড়া-খাল দিয়ে নদীতে গিয়ে মিশতে পারছে না। কোথাও কোথাও বরং নদীর পানি ছড়া দিয়ে নগরে ঢুকেছে।
ভারী বৃষ্টিপাতে পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছে জানিয়ে সাজলু বলেন, “বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে গেছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজন অনুযায়ী আশ্রয়কেন্দ্র চালু, শুকনো খাবার বিতরণসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”