স্টাফ রিপোর্টার::
রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশের প্রবীণ সাংবাদিক ও বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা সালেহ চৌধুরীর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। রবিবার দুপুরে বাদ যোহর মরহুমের নিজ গ্রাম সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার গচিয়া বাজার মাঠে তৃতীয় যানাজা অনুষ্ঠিত হয়। যানাজায় বিপুল মানুষের সমাগম ঘটে। যানাজা শেষে গ্রামে পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকায় মারা যান সাংবাদিক সালেহ চৌধুরী। সেখানে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় প্রথম যানাজা ও জাতীয় প্রেসক্লাবে দ্বিতীয় যানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
সাংবাদিক সালেহ চৌধুরীর যানাজায় উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ মুহিবুর রহমান মানিক, সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন, দিরাই উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান তালুকদার, মুক্তিযোদ্ধা বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু, উপজেলা চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী বীরপ্রতীক, সুনামগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি আবু সুফিয়ান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সদস্যসচিব মালেক হুসেন পীর, অভিনেতা ফজলুল কবির তুহিন প্রমুখ। যানাজার আগে তার মরদেহে পুষ্পার্ঘ্য অর্পন করা হয় বিভিন্ন সংগঠন ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে। পরে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
সালেহ চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধের ৫নং সেক্টরের টেকেরঘাট সাব সেক্টরে থেকে হাওরাঞ্চলের আঞ্চলিক সমন্বয়ক হিসেবে যুদ্ধ করেন। একই সঙ্গে যোদ্ধা ও সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। টেকেরঘাট সাবসেক্টর প্রতিষ্ঠায় তার অসামান্য অবদান রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা ভাতায় তিনি শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবর সংরক্ষণ করে গেছেন।
সাংবাদিক সালেহ চৌধুরী স্বাধীনতাপূর্ব দৈনিক পাকিস্তানের সাব এডিটর ছিলেন। স্বাধীনতার পরে তিনি এই পত্রিকার ফিচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের বাংলাদেশের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। দাবা ও আঁকাআঁকির নেশার মধ্যেও নিয়মিত জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় লেখালেখি করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ, অনুবাদ, সাহিত্য, জীবনীসহ বিভিন্ন বিষয়ে তার একাধিক গ্রন্থ রয়েছে। সর্বশেষ তিনি ‘ভাটি এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ’ নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন।
সাংবাদিক সালেহ চৌধুরী স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে ৬ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জে যে অনন্য শহীত মিনার নির্মিত হয় তার নক্সাকার ছিলেন। সবুজ জমিনে লালবৃত্তের উপরে লেখা ‘যাদের রক্তে মুক্ত এ দেশ’ তার দেওয়া স্লোগান। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অপরাজেয় বাংলার’ নামকরণও তিনি করেছেন। বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী সাংবাদিক সালেহ চৌধুরী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গঠিত সেক্টরস কমান্ডার ফোরামের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।