হাওর ডেস্ক::
রক্ষণে তালগোল পাকানোর শুরু কিক অফের পরপরই। তৃতীয় মিনিটে অমার্জনীয় এক ভুলের খেসারত বাংলাদেশ দিল পেনাল্টি থেকে গোল হজম করে। বিরতির আগে আবারও রক্ষণের বোঝাপড়ার ভুলে বল জড়াল জালে। লেবাবনের বিপক্ষে প্রথমার্ধেই কোণঠাসা হয়ে পড়া বাংলাদেশ দ্বিতীয়ার্ধেও পেল না ঘুরে দাঁড়ানোর পথ। হার দিয়ে বিশ্বকাপ বাছাই শেষ করল হাভিয়ের কাবরেরার দল।
কাতারের খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার ২০২৬ বিশ্বকাপ ও ২০২৭ এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে লেবাননের বিপক্ষে ৪-০ গোলে হারে বাংলাদেশ। দারুণ হ্যাটট্রিকে জাতীয় দলের হয়ে নিজের বিদায়ী ম্যাচ রাঙালেন অধিনায়ক হাসান মাতুক, আরেক গোলদাতা নাদের মাতার।
পয়েন্ট নিয়ে বাছাই শেষের প্রত্যাশা ছিল বাংলাদেশের, হলো না তার কিছুই। ছয় ম্যাচে ১ পয়েন্ট নিয়ে ‘আই’ গ্রুপের তলানিতে থেকে শেষ করল তারা। এই ১ পয়েন্ট বাংলাদেশ পেয়েছিল বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় লেবাননের বিপক্ষে ১-১ ড্র করে।
বাছাইয়ের এই দ্বিতীয় ধাপে ২০ গোল হজম করে মাত্র ১টি গোলই দিতে পেরেছে বাংলাদেশ।
লেবাননের বিপক্ষে ওই ড্রয়ের আত্মবিশ্বাসে ভর করে, আর কদিন আগে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২-০ গোলে হারের ম্যাচে রক্ষণে দৃঢ়তা দেখিয়ে শেষটায় ভালো কিছুর ইঙ্গিত দেয় বাংলাদেশ, কিন্তু একের পর এক ভুলে সব হলো পণ্ড।
কিক অফের পরপরই নিজেদের ভুলে গোল হজম করতে বসেছিল বাংলাদেশ। ডিফেন্ডার কাজী তারিক রায়হান বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে মিতুল মারমাকে পাস দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু মিতুল বরাবর হয়নি, বল পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। হাঁপ ছেড়ে বাঁচে বাংলাদেশ।
অবশ্য সেই স্বস্তি উবে যায় খানিক বাদেই। এবার অপেশাদার আচরণ করে বসেন ডিফেন্ডার শাকিল হোসেন। কর্নারের পর বল দখলের লড়াইয়ে শাকিলের জার্সি পেছন থেকে টেনে ধরেন লেবাননের ডিফেন্ডার জিহাদ আইয়ুব। মেজাজ হারিয়ে শাকিল প্রতিপক্ষের আরেক খেলোয়াড়ের মুখে আঘাত করে দেখেন হলুদ কার্ড। সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। সফল স্পট কিকে লেবাননকে এগিয়ে নেন হাসান মাতুক।
ত্রয়োদশ মিনিটে বক্সের ভেতর থেকে ওমর চাবানের কোনাকুনি শট ঝাঁপিয়ে আটকে ব্যবধান দ্বিগুণ হতে দেননি মিতুল।
বাংলাদেশ প্রথম ভালো সুযোগটি পায় এর তিন মিনিট পর। ডান দিক থেকে অধিনায়ক জামালের পাস ধরে রাকিব হোসেন বক্সে ঢুকে শট নেন, এক হাতে ক্লিয়ার করেন গোলকিপার। ফিরতি শট নিতে শেখ মোরসালিন ও ইসা ফয়সাল ছুটেছিলেন, কিন্তু তারা বলের নাগাল পাওয়ার আগেই ক্লিয়ার করেন এক ডিফেন্ডার।
৩৩তম মিনিটে আবারও বাংলাদেশের ত্রাতা মিতুল। কর্নারের পর বল বক্সেই পেয়ে যান কাশেম জেইন, এই ডিফেন্ডারের সাইড ভলি ফিস্ট করে ফেরান মিতুল।
চাপ ধরে রেখে প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করে নেয় লেবানন। ডান দিক থেকে উড়ে আসা ক্রস ক্লিয়ার করতে পারেননি শাকিল ও তপু বর্মনের কেউ। দুজনের মাঝে নাদের মাতার বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিখুঁত শটে জাল খুঁজে নেন।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ব্যবধান বাড়ায় লেবানন। বক্সের ওপর থেকে দ্রুত ফ্রি কিক নেওয়ার পর আক্রমণে ওঠেন কারিম দারউচ। বাইলাইনের একটু ওপর থেকে তার আড়াআড়ি ক্রস গোলমুখে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে টোকায় বল জালে পাঠান হাসান।
৫৮তম মিনিটে মোরসালিনের পাস ধরে বক্সের ভেতর থেকে শট নিয়েছিলেন রাকিব, কিন্তু বল উড়ে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে। নষ্ট হয় বাংলাদেশের ম্যাচে ফেরার ভালো সুযোগটি।
দুই মিনিট পর দারুণ শটে কাছের পোস্ট দিয়ে মিতুলকে পরাস্ত করে হ্যাটট্রিক পূরণের আনন্দে মাতেন হাসান। এরপরই অধিনায়ককে তুলে নেন লেবানন কোচ। ১৮ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টেনে দেওয়া হাসান মাঠ ছাড়েন সতীর্থদের অভিনন্দনে সিক্ত হয়ে।
৬৯তম মিনিটে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার জামালকে তুলে ফরোয়ার্ড শাহরিয়ার ইমনকে নামান বাংলাদেশ কোচ। বাংলাদেশের খেলায় গতি বাড়ে কিছুটা, কিন্তু গোল থেকে যায় অধরাই।
৭৬তম মিনিটে নাদেরকে কাটিয়ে ইমন শট নিলেও বল কাঁপায় বাইরের জাল। একটু পর এই ফরোয়ার্ডের ক্রস রাকিবের কাছে পৌঁছানোর আগেই ক্লিয়ার করেন এক ডিফেন্ডার। এরপর কেবল সময় গড়িয়েছে, কিন্তু ঘুরে দাঁড়ানোর পথ পায়নি বাংলাদেশ।
গত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের পর এই এক বছরের মধ্যে এ নিয়ে তৃতীয়বার লেবাননের মুখোমুখি হলো বাংলাদেশ। বেঙ্গালুরুতে সাফে ২-০ গোলে হেরেছিলেন জামালরা। এরপর গত নভেম্বরে কিংস অ্যারেনায় বাছাইয়ের প্রথম লেগে ড্রয়ের পর এবার সঙ্গী হলো আরও বড় ব্যবধানের হার।