স্টাফ রিপোর্টার::
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার আটগাও ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের শহিদ পরিবারের সন্তান বীরাঙ্গনা বীর মুক্তিযোদ্ধা হতদরিদ্র জমিলা বেগম আর নেই। ১৪ জুন শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি ১ ছেলেও ১ মেয়ে, নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে মারা যান। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠন।
১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর একাত্তরের কুখ্যাত দালাল ও পিডিবি নেতা আব্দুল খালেকের নির্দেশে দৌরতপুর গ্রামের বাসিন্দা একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের নৌকার মাঝি মামদ আলীসহ তার পরিবারের ৭ পুরুষকে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয়। পরে মামদ আলীর মেয়ে জমিলা বেগম, ভাগ্নি, ভাতিজিসহ পরিবারের নারীদের ধরে যায় বাঙ্কারে। জমিলা খাতুনকেও রাজাকাররা বাঙ্কারে নিয়ে টানা কয়েকদিন নির্যাতন করে। পরে বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের উদ্ধার করেন। ১৯৭১ সনের এই গ্রামে গণহত্যা ও নারীনির্যাতনের বিষয়টি সামাজিক, রাজনৈতিকসহ নানাভাবে ধামাচাপা দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্থান পায়নি এই গণহত্যার প্রসঙ্গ। ২০১৮ সালে দীর্ঘদিনের মাঠ পরিদর্শন ও তথ্য সংগ্রহের পর সাংবাদিক শামস শামীম প্রথম বারের মতো এই গ্রামের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরেন। তিনি খনন করে দেখান কিভাবে রাজাকার খালেক, শরাফত, সোবানসহ স্থানীয় দালাল রাজাকাররা দৌলতপুর-উজানগাও গ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগীদের পরিবারের উপর নির্যাতন করে। তাদের নির্মম ও লোমহর্ষক তথ্য বইটিতে তুলে ধরেন তিনি। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর জাতির সামনে তুলে ধরা হয় এই গ্রামসহ দিরাই-শাল্লার ৬টি কথিত চোরেরগাওয়ের মুক্তিযুদ্ধের অপ্রকাশিত ও অশ্রুত ইতিহাস। জাতি জানতে পারে বীরাঙ্গনা জমিলাসহ হাওরের হারিয়ে যাওয়া বীরাঙ্গনা যোদ্ধাদের। শামস শামীমের প্রকাশিত গ্রন্থ ও জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠে তাদের উপর একাধিক প্রতিবেদনের সহায়তা নিয়ে বীরাঙ্গনা জমিলা খাতুনসহ এই গ্রাম ও আশপামের গ্রামের বীরাঙ্গনা স্বীকৃতি পান ৫ বছর আগে। তবে স্বাধীনতার পরপরই তারা প্রভাবশালী রাজাকারদের অত্যাচার ও নীপিড়ন সয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতেন। কয়েক বছর আগে সরকারি ভাতার সঙ্গে একটি সরকারি ঘরও পান তিনি। সেই ঘরেই শেষ নিঃশ^াস ত্যাগ করেন। জীবদ্দশায় দিনমজুরি করে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করতেন। স্বপ্ন দেখতেন একাত্তরের ঘাতক ও নির্যাতকদের বিচার হবে। তবে তার এলাকার ঘাতকদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাজিতক যোদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলার অগ্নিস্বাক্ষী হয়েছিলেন তিনি। মৃত্যুর আগে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তাসহ আদালতে ঘাতকদের নাম বলে গেছেন।
জমিলা বেগমকে আগামীকাল শনিবার গ্রামের গোরস্তানে সরকারিভাবে গার্ড অব অনার দিয়ে শায়িত করা হবে বলে জানান শাল্লা থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান।