হাওর ডেস্ক::
চন্দ্রবোড়া সাপ বা রাসেলস ভাইপার নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে একই দিনে বেশ কয়েকটি জেলা থেকে এল ছোবলে আহত বা নিহত হওয়ার খবর। সাপ পিটিয়ে মারার ঘটনাও ঘটেছে।
একটি জেলায় ছোবলে আহত হওয়ার পর সাপটিকে পিটিয়ে মেরে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
শুক্রবার সাপের ছোবলে মানিকগঞ্জে কৃষকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সাপের কামড়ে যশোরের শার্শায় এক মাদ্রাসা ছাত্র ও ঢাকার ধামরাইয়ে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। এসব এলাকাতেও রাসেলস ভাইপারের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
জেলায় জেলায় এই সাপ দেখা গেছে চরাঞ্চল বা ফসলের মাঠে। তবে ভোলায় এই সাপের প্রকোপ উপদ্রব দেখা দিয়েছে বাসা বাড়িতেও।
মানিকগঞ্জে কৃষকের মৃত্যু
জেলার হরিরামপুরের চরাঞ্চলে ফসলের মাঠে কাজ করার সময় ছোবলে মারা গেছেন ৫০ বছর বয়সী হোসেন ব্যাপারী।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কামড়ে আহত হওয়ার পর শুক্রবার বিকেলে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোয়াজ্জেম হোসেন।
চেয়ারম্যান বলেন, চরাঞ্চলে গরুর জন্য ঘাস কাটার সময় হোসেন বেপারীকে ছোবল দেয় রাসেলস ভাইপার। পরে তাকে দ্রুত ফরিদপুর হাসপাতালে নেওয়া হয়।
শুক্রবার বিকালেও আরেক কৃষককে একই জাতের সাপ ছোবল দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা চরাঞ্চলের লোকজন খুব আতঙ্কে আছি। হরিরামপুরের তিনটি চরে ৫-৬ জন এবং আমাদের পাশের ফরিদপুরের চরাঞ্চলের ইউনিয়নেও ৮-১০ জন এ সাপের কামড়ে মারা গেছেন।”
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো শাহরিয়ার রহমান বলেন, “এর আগে হরিরামপুরের চরাঞ্চলে রাসেলস ভাইপারের কামড়ে কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবারও চরাঞ্চলে একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে শুনেছি।”
ধামরাইয়ে গেল বৃদ্ধার প্রাণ
ঢাকার ধামরাইয়ে সাপের কামড়ে তহিরন নেছা নামে ৬৩ বছর বয়সী এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এতে এলাকায় ‘রাসেলস ভাইপার’ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার ভোরে উপজেলার আমতা ইউনিয়নের আগজেঠাইল কাঁচা রাজাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে ইউপি চেয়ারম্যান আরিফ হোসেন জানান।
তিনি বলেন, “ভোরে তহিরন নেছাকে বাড়ির পাশে সাপে কামড় দেয়। এলাকাবাসী দ্রুত তাকে নিয়ে পাশের সাটুরিয়া সদর হাসপাতালে রওনা দেন। পথেই তার মৃত্যু হয়। তবে কী ধরনের সাপের কামড়ে তার মৃত্যু হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।”
শার্শায় মাদ্রাসা ছাত্রের মৃত্যু
সাপের কামড়ে যশোরের শার্শায় ফোরকানুল ইসলাম নামে ১২ বছর বয়সী এক মাদ্রাসা ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে তাকে সাপে কামড় দিলেও রাত ৮টার দিকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
ফোরকানুল শার্শা উপজেলার ডিহি ইউনিয়নের টেংরালি গ্রামের আলমগীর হোসেনের ছেলে। সে চৌগাছা উপজেলার একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসায় পড়ত।
ফোরকানের চাচাত ভাই সোহাগ হোসেন জানান, শিশুটি বৃহস্পতিবার বিকালে শার্শা উপজেলার কাশিপুর বেলতায় ফুফু বাড়িতে বেড়াতে যায়। সেখানে তাকে সাপে কামড়ায়।
গ্রামের কবিরাজ, বদ্যিসহ নানাজনকে দেখানোর পর অবস্থা গুরুতর হলে রাতে নেওয়া হয় হাসপাতালে।
চিকিৎসক শাকিরুল বলেন, “হাসপাতালে না এনে বাড়িতে রাখায় শরীরে বিষ ছড়িয়ে পড়ায় তার মৃত্যু হয়েছে।”
হাসপাতালে অ্যান্টিভেনমের (সাপের বিষ প্রতিরোধী ইনজেকশন) পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে জানিয়ে কাউকে সাপে কাটলে ৯০ মিনিটের মধ্যে হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
রাজবাড়ীতে রাসেলস ভাইপার নিয়ে হাসপাতালে কৃষক
রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলায় কামড়ে দেওয়া সাপসহ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এলেন এক কৃষক। সাপটি দেখে রাসেলস ভাইপার বলে নিশ্চিত হন চিকিৎসকরা।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার হাবাসপুর চর আফড়া গ্রামের পদ্মার চরে একটি বাদাম ক্ষেতে ছোবলের শিকার হন কৃষক মধু বিশ্বাস।
প্রত্যক্ষদর্শী মোস্তাফা কামালের জানান, তারা কয়েকজন সকাল থেকে চরে পানির মধ্যে বাদাম তুলছিলেন। হঠাৎ মধু বিশ্বাস বলেন, তাকে সাপে কামড় দিয়েছে।
“এরপর দেখি, সাপটি তার ডান হাতের কব্জির কাছে কামড় দিয়ে ঝুলে আছে। তখন আরেকজন হাতে থাকা কাঁচি দিয়ে সাপটিকে আঘাত করে। পরে সেটিকে প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে মধু বিশ্বাসকে নিয়ে হাসপাতালে চলে আসি।
“এখানে আসার পর ডাক্তার জানায়, মধুকে যে সাপটি কেটেছে সেটির নাম রাসেলস ভাইপার।”
পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শারমিন আহম্মেদ তিথি বলেন, “ওই রোগীকে অ্যান্টিভেনম দেওয়া হয়েছে; তবে তাকে আশঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না। তাকে নিবিড় পরিচর্যায় রাখা হয়েছে। ৭২ ঘণ্টা না গেলে কিছু বলা যাচ্ছে না।”
এবার সাতক্ষীরার কলারোয়ায়
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় রাসেলস ভাইপার দেখতে পেয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে এলাকাবাসী।
উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলদী বাজারের পাশে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে সাপটিকে দেখতে পাওয়া যায়। পরে স্থানীয়রা এসে সেটিকে পেটায়।
ওই গ্রামের মনিরুল ইসলাম জানান, সকাল ১০টার দিকে তিনি মাঠে যান, দেখতে পান ধানক্ষেতের পাশে সাপটি বসেছিল। পরে অন্যদেরকে খবর দেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছিলেন, কিছুদিন আগেও একই এলাকায় এই জাতের এক জোড়া সাপ দেখতে পেয়েছিলেন তারা। সেগুলো পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
সাতক্ষীরায় যে এলাকায় চন্দ্রবোড়াকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তার পার্শ্ববর্তী সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের বড়ালী গ্রামেও কয়েক মাস আগে একটি সাপ দেখতে পেয়ে সেটিকে হত্যা করা হয়।
সেই সাপটিও পাওয়া গিয়েছিল ধান ক্ষেতে।
পরে পাশের এলাকায় আরো দুটি রাসেলস ভাইপার পেয়ে সেগুলোকে মেরে ফেলে স্থানীয়রা।
ফরিদপুরে বাদাম ক্ষেতে ছোবল
ফরিদপুরের দুর্গম চরাঞ্চলের বাদাম ক্ষেতে একটি রাসেলস ভাইপারকে চাষির পিটিয়ে মারার তথ্য মিলেছে।
শুক্রবার দুপুরে সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের ঢোলার চর এলাকায় সাপটিকে পিটিয়ে মারা হয়।
ওই ইউনিয়নের আইজউদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গি গ্রামের বাসিন্দা মুরাদ মোল্যা বলেন, ঢোলার চরে বাদাম ক্ষেত দেখতে গিয়ে ক্ষেতের মধ্যে কিছু বাদাম গাছ নড়াচড়া করছে দেখতে পান। একটু এগিয়ে গিয়ে দেখেন সাপ রয়েছে। তাৎক্ষণিক ক্ষেতে থাকা একটি ডাল দিয়ে পিটিয়ে সাপটিকে মেরে ফেলেন তিনি।
পরে সিএন্ডবি ঘাট এলাকায় সাপটি নিয়ে আসেন এবং ঘাটের পাশেই মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়।
ভোলা শহরেও উৎকণ্ঠা
দ্বীপজেলার স্থান থেকে গত পাঁচ দিনে ১১টি রাসেলস ভাইপার সাপ উদ্ধার হয়েছে। অধিকাংশ সাপ স্থানীয়রা মেরে ফেললেও একটি সাপ বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চল, মানুষের বাসাবাড়ি ও খেলার মাঠের পাশাপাশি ভোলা সদরের বাসা বাড়িতেও বিষাক্ত এই সাপ উদ্ধারে খবরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
শুক্রবার বিকালে চরফ্যাশন পৌর এলাকার কালিবাড়ীর পিছনের রাস্তায় বাচ্চাসহ রাসেলস ভাইপার দেখে স্থানীয়রা বাচ্চাসহ সাপটিকে পিটিয়ে ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মেরে ফেলে।
আগেরদিন সকালে সদর উপজেলার শিবপুরের ‘গরিবের ডুবাই’ নামে খ্যাত চায়না ইপিজেড বালুর মাঠে ছেলেরা খেলতে গিয়ে একটি রাসেলস ভাইপার সাপ দেখতে পায়। তারা সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলে।
তজুমদ্দিন উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের একটি বসত বাড়ির সামনে ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার টবগী ইউনিয়নের জসিম হাওলাদারের বাড়িতে একটি রাসেলস ভাইপার পাওয়া যায়।
বুধবার বিকালে জেলার তজুমদ্দিন উপজেলার চৌমুহনী এলাকায় খেলার মাঠে দেখা মেলে এই সাপের।
মঙ্গলবার সকালে সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশায় ইউনিয়নে পাকার মাথা এলাকায় বসত বাড়ির পাশের জালের সঙ্গে পেঁচানো অবস্থায় একটি রাসেলস ভাইপার পাওয়া যায়।
মঙ্গলবার রাতে দৌলতখান উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের জালু মাঝির বসতঘর থেকেও একটি রাসেলস ভাইপার উদ্ধার করা হয়।
রোববার এ সাপ দেখা যায় লালমোহন উপজেলার লর্ড হার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের সৈয়দাবাদ এলাকায় একটি বাড়ির শৌচাগারে।
দ্বীপ উপজেলা মনপুরা ও সাগর উপকূল উপজেলা চরফ্যাশনের বিভিন্ন ইউনিয়নে আরও পাঁচটি রাসেলস ভাইপার দেখা যায়। স্থানীয়রা সবগুলোকে পিটিয়ে মারে।
তবে তজুমদ্দিন উপজেলায় পাওয়া একটি সাপ এখনো বনবিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
স্থানীয় জেলে হাবিব মাঝি বলেন, “নদীতে মাছ শিকার করে ঘাটের দিকে যাওয়ার সময় বালুর মধ্যে এই সাপটি দেখতে পাই। পরে আরও লোকজন এসে সাপটিকে রাসেলস ভাইপার বলে নাম দেয়।
“এই সাপ এর আগে আর কখনো দেখিনি। এটি দেখতেও অনেক ভয়ানক। অন্য সাপের থেকে দেখতে অনেকটাই আলাদা মনে হল।”
তজুমদ্দিন উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের মেঘনার পাড়ের মোদী ব্যাবসায়ী জয়নাল মিয়া জানান, তার বসতঘরে খাটের নিচে তিনটি বিড়াল মৃত অবস্থায় দেখতে পান। পরে ঘরের লোকজন খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে একটি বিষধর রাসেলস ভাইপারকে ঘর থেকে বের হতে দেখেন।”
সোনাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিশু বলেন, “এর আগে আমার ইউনিয়নে এই বিষধর সাপের দেখা পাইনি। পরপর দুই দিন এই সাপের সন্ধান মেলায় আমার ইউনিয়নবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। আমি ও বনবিভাগের লোকজন আসার আগেই সাপটি স্থানীয়রা মেরে ফেলে।”
ভোলা শহরের মানুষের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বাসা বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি ব্লিচিং পাউডার ছিটাচ্ছেন মালিকরা।
ভোলা পৌর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মুজাহিদুর রহমান বলেন, “বাড়ির নিচ তলায় বসবাস করি। ইদানীং মনের মধ্যে সারাক্ষণ শুধু সাপের আতঙ্ক কাজ করছে। তাই বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রেখে চতুর্দিকে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে রেখেছি।”
ভোলার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, “রাসেলস ভাইপার লোকালয়ে সাধারণত খুব কমই দেখা যায়। বাচ্চা দেওয়ার কারণে হয়ত ওই সাপটি লোকালয়ে চলে এসেছে। তবে সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।”
বরিশালে সাপের বাচ্চা উদ্ধার
বরিশাল নগরীর এক আওয়ামী লীগ নেতার বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একটি সাপের বাচ্চা। বাচ্চাটি রাসেলস ভাইপার প্রজাতির বলে ধারণা করছে উদ্ধার করা শৌখিন সাপুড়ে মজিবুল হক মজনু।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হুমায়ুন হাওলাদারের ঘর থেকে সাপটি উদ্ধার করা হয়।
হুমায়ুন হাওলাদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে সাপটি জানালা দিয়ে রান্না ঘরে প্রবেশ করে। পরে শৌখিন সাপুড়ে মজিবুল হককে খবর দেওয়া হয়। তার সহকারী মো. সোহেল হাওলাদার এসে সাপটি উদ্ধার করেছে।
তিনি বলেন, “সাপটি কি জাতের জানি না। একটি ছোট সাপ, এটা স্থানীয় কোনো জাতের সাপ হবে। ওরা এখন নাম করার জন্য রাসেলস ভাইপার বলছে।”
সোহেল হাওলাদার বলেন, বর্তমানে সাপটি তার ও মজনুর হেফাজতে একটি কাছের বয়ামে (পাত্র) রয়েছে। বন বিভাগের কর্মকর্তারা এলে তাদের দিয়ে দেওয়া হবে।
এটা কোথাও অবমুক্ত করার ঝুঁকি তারা নেবেন না জানিয়ে মজনু বলেন, বন বিভাগের কেউ না এলে সাপটি মেরে ফেলা হবে।
বরিশাল কোস্টাল সার্কেলের বন সংরক্ষক মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ কাজ ওয়াইল্ড ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিট করে।”
তবে ওয়াইল্ড ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিটের প্রধান সানাউল্ল্যাহ পাটোয়ারীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
কীভাবে ছড়াল এত জেলায়
বিলুপ্ত ঘোষণা করা এই সাপের ছোবলে আহত হয়ে ২০১৩ সালে রোগী যায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গত এক বছরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বহু মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছে সাপটি।
বিশেষজ্ঞরা জানান, বর্ষায় উত্তরাঞ্চল থেকে কচুরিপানায় ভেসে সাপগুলো ছড়িয়ে পড়েছে পদ্মা অববাহিকায়। এ কারণে মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, চাঁদপুরে দেখা যাচ্ছে প্রজাতিটির।
দক্ষিণ বঙ্গে বরিশাল, পিরোজপুরসহ ২৬ থেকে ২৭টি জেলায় এর সন্ধান মিলেছে।
বিশেষ করে ধান ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে ছোবলের শিকার হয়েছেন কৃষকরা। বেশ কয়েকজন জেলেও মারা গেছেন এই সাপের কামড়ে।
এই মৃত্যুর একটি কারণ হল জেলা হাসপাতাল বা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়া সাপের বিষের প্রতিষেধক পাওয়া যায় না। অথচ সাপে ছোবল দেওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব প্রতিষেধক না দিলে রোগী বাঁচানো কঠিন।
আবার বাংলাদেশে এই প্রতিষেধক তৈরিও হয় না। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্থানীয় সাপের বিষ থেকে প্রতিষেধক তৈরির পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিশেষজ্ঞরা কৃষকদেরকে গামবুট ও হাতে লম্বা গ্লাভস পরার পরামর্শ দিচ্ছেন। তারা জানান, বিষাক্ত হলেও এই সাপ আক্রমণাত্মক নয়, নিজে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি মনে করলেই কেবল সে ছোবল দেয়। আর তার আগে হিসহিস করে শব্দও করে। ফলে সচেতন থাকলে রক্ষা পাওয়ার সুযোগ আছে।