বিশেষ প্রতিনিধি::
পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে ঈদের আনন্দ এবার মাটি হয়েছে সুনামগঞ্জের বানভাসীদের। ঈদের দিন থেকেই বাড়তে থাকে পানি। সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার ও ছাতক প্লাবিত হয় ঈদের দিন। ডুবে যায় সড়ক জনপদ। পরদিন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় বন্যা দেখা দেয়। এর পর থেকে ভাটির আরো কয়েকটি উপজেলা বন্যা কবলিত হলেও বন্যায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ সয়েছেন দোয়ারাবাজার, ছাতক ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার শহর ও শহরতলির বাসিন্দারা। চারদিন পর পানি নামতে শুরু করেছে। সপ্তাহখানেক পর ঝলমলে রোদের দেখা পেয়ে স্বস্তিতে ছিলেন বন্যার্ত লোরকজন। অনেকে আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন।
সুনামগঞ্জে বন্যাপরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বাসাবাড়ি সড়ক থেকে নামছে বন্যার পানি। তবে বন্যা পরিস্থিতি আবারও সৃষ্টির আশঙ্কায় আরো আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে শনিবার সকালে সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই সময়ে বৃষ্টিপাত হয়েছে মাত্র ১০ মিলিমিটার। চেরাপুঞ্জিতেও অল্প বৃষ্টিপাত হয়েছে। ছাতকেও সুরমা নদীর পানি অনেকটা কমেছে। এভাবে নদ নদীর পানি কমায় ডুবে যাওয়া সড়ক, জনপদ ভেসে ওঠছে।
সরেজমিন দেখা গেছে সুনামগঞ্জ ও ছাতক পৌর শহরের হাওরঘেঁষা বাসাবাড়িতে এখনো পানি রয়ে গেছে। ডুবে আছে এসব এলাকার রাস্তাঘাট। এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শহরের সাহেববাড়ি, উত্তর আরপিননগর, উত্তর মল্লিকপুর, লঞ্চঘাট, উকিলপাড়া, ষোলঘর, বড়পাড়া, তেঘরিয়া, মধ্যবাজার, নতুনপাড়া, হাজিপাড়া ঘুরে দেখা গেছে এসব পাড়ার রাস্তাঘাট ও বাসাবাড়ি থেকে পানি নেমে গেছে। শুক্রবার দিনভর রৌদ্রজ্জ্বল আবহাওয়া ছিল। এতে বন্যায় ক্ষয়-ক্ষতি হওয়া উপকরণ ও আসবাবপত্র শুকাতে দেখা গেছে ভুক্তভোগীদের। তবে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ৩নং ওয়ার্ডের খেজাউড়া পাড়ায় গিয়ে দেখা যায় পাকা সড়কটিতে হাটুপানি। আশপাশের প্রতিটি বাসায় পানি। বাসা থেকে মূল সড়কে আসতে পানি ভেঙ্গে আসতে হচ্ছে স্থানীয়দের। কালিপুর, পূর্ব নতুনপাড়া, পূর্ব মল্লিকপুর, পূর্ব ওয়েজখালিতে পানি রয়ে গেছে। অপরিকল্পিত ও নিচু বাসাবাড়ি নির্মাণ, নিচু সড়ক নির্মাণ, জলাধার ভরাটসহ নানা কারণে পৌর এলাকার বিভিন্ন পাড়ায় বন্যার পানি বিলম্বে নামছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
হাসননগর কেজাউড়া পাড়ার বাসিন্দা জাহেরা খাতুন স্বামী, সন্তান ও পরিবারের লোকদের নিয়ে ঈদের দিন ওঠেছেন হাসননগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে। তার বাসায় বুকপানি ছিল। এখন আছে হাঁটুপানি। তবে দিনে ২-৩ বার বাসায় এসে আসবাবপত্র ঠিক আছে কি না দেখে যান। এই পাড়ার অন্তত ৪০টি পরিবার ওই আশ্রয় কেন্দ্রে আছেন বলে জানান তিনি। আশ্রয় কেন্দ্রে তারা কোন ত্রাণ না পেলেও কয়েকবার রান্না করা খিচুড়ি পেয়েছেন বলে জানান এই নারী। তবে বন্যায় তার বাসার আসবাবপত্রের অনেক ক্ষতি হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয় ৮৩টি ইউনিয়নের ১ হাজার ৩০২টি গ্রামের প্রায় ৮ লাখ ৫৫ হাজার ৭৮০জন বন্যা কবলিত হয়েছিলেন। আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছিল ৭০৬টি। এর মাঝে এখনো ২২ হাজার ৬৩৭জন বন্যার্ত আশ্রয় কেন্দ্রে রয়ে গেছেন। শুক্রবার পানি কমায় প্রায় দেড় হাজার বন্যার্ত নিজেদের বাসাবাড়িতে ফিরে গেছেন বলে জানায় প্রশাসন।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। মানুষজন আশ্রয় কেন্দ্র থেকে ফিরে যাচ্ছেন। বিভিন্ন স্থানে বন্যার্তদের মধ্যে জিআরের চাল বিতরণ করা হচ্ছে। আশ্রয় কেন্দ্রেও রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। তবে বন্যার সময় যাতে মানুষের ভোগান্তি না বাড়ে সেজন্য সর্বমোট ৭০২ আশ্রয় কেন্দ্র প্রবস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।