হাওর ডেস্ক::
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নদনদীর পানি কমে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র শনিবার সন্ধ্যায় জানিয়েছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীসমূহের পানির সমতল কমছে। এতে আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি অব্যাহত থাকতে পারে।
তবে এসব এলাকায় মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসও রয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম বড়ুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বন্যা পরিস্থিতি বেশ ভালো উন্নতির দিকে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে বিভিন্ন নদীর পানি কমছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে নদনদীর পানি বিপৎসীমার নিচে চলে আসবে।”
টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে গত কয়েকদিন থেকে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণার বিভিন্ন এলাকায় বন্যায় বিপর্যস্ত জনজীবন। তবে বৃষ্টিপাত কমে আসায় সিলেটের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। নগরীর প্লাবিত এলাকার পানিও নেমেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের শনিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টার তথ্যে দেখা গেছে
>> কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি ১২ সেন্টিমিটার কমলেও বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।
>> সিলেটের কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি ৪ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
>> সিলেটের অমলশীদ পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি ৪০ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।
>> শেরপুরে কুশিয়ারা নদীর পানি ৩ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।
>> সুনামগঞ্জের দেরাই পয়েন্টে পুরাতন সুরমা নদীর পানি ৬ ঘণ্টায় বাড়ে-কমেনি; তবে এই পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
>> নেত্রকোণার কলমাকান্দা পয়েন্টে সোমেশ্বরী নদীর পানি ১ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।
>> কুশিয়ারা নদীর পানি মারকুলি পয়েন্টে পানি ৫ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।
অপরদিকে গঙ্গা-পদ্মা নদীগুলোর পানির সমতল বাড়ছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
যমুনা নদীর পানিও বাড়ছে, তবে তা আগামী ২৪ ঘণ্টা স্থিতিশীল থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
এছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকার আভাস রয়েছে।
এদিকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় টাঙ্গাইলে ১০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া নেত্রকোণা, ঢাকা, পিরোজপুর, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় কমবেশি বৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া তথ্যের বরাতে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের উত্তরাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে আগামী ২৪ ঘণ্টায় হালকা থেকে মাঝারি এবং পরবর্তী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।
এর ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চলের দুধকুমার, তিস্তা ও ধরলা নদীসমূহের পানির সমতল কমতে পারে, যা আগামী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টায় সময় বিশেষে বাড়তে পারে।
শনিবার সন্ধ্যার বুলেটিনে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এছাড়া রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু জায়গায় এবং চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
সেইসঙ্গে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও জায়গায় মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে।